ফোন করে খবর নিচ্ছেন ঘনঘন, বিয়ের কাজ কত দূর এগোলো। টুকিটাকি নির্দেশ। তারই ফাঁকে ফাঁকে মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা। ফোনে মেয়ের গলা শুনে নিজেও কেঁদে ফেলছেন বারবার। মায়ের মন যে মানছে না! কিন্তু মেয়ের বিয়েতে যাওয়ার কোনও উপায়ও তো নেই! তাই পার্টি অফিসের ঘরটাতে চোয়াল শক্ত করে বসে রয়েছেন তিনি।
|
গীতা মণ্ডল |
পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজনৈতিক হিংসার এ এক টুকরো ছবি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে।
ওই মহিলার নাম গীতা মণ্ডল। বাড়ি বাসন্তীর চরাবিদ্যায়। সেখান থেকেই সিপিএমের প্রার্থী হিসেবে জেলা পরিষদে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন গত ৩ জুন। কিন্তু তার পর থেকেই আর নিজের বাড়িতে থাকার সাহস পাননি গীতাদেবী। রাতের অন্ধকারে ‘শত্রু’র চোখে ধুলো দিয়ে কোনও রকমে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন জেলার এক দলীয় অফিসে। শনিবারই ছিল ছোট মেয়ে সুনীতার বিয়ে। মেয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেও সেই অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পারেননি গীতাদেবী। কিন্তু মায়ের মন কি মানে? তাই দিনভর ফোনের পর ফোন করেছেন মেয়েকে, স্বামীকে, বাড়ির আত্মীয়-স্বজনকে। বললেন, “যত বারই ফোন করেছি, মেয়ে কেঁদেছে। বলেছে, ‘মাগো, ভীষণ মন খারাপ। সবাই আছে, শুধু তুমি-ই নেই।’ এ কথা শুনে আমিও চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি।”
এত কিছুর পরেও অবশ্য জেলা পরিষদ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে রাজি নন গীতাদেবী। বললেন, “আমাদের ওখানে বামফ্রন্টের সব প্রার্থী প্রাণের ভয়ে মনোনয়ন তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন। আমি পালিয়ে বেঁচেছি। আর গ্রামছাড়া হয়েইছি যখন, তখন লড়াই করেই মাঠ ছাড়ব।” তবু মেয়ের বিয়ের সময় হাজির থাকতে না পারার শোক কিছুতেই ভুলতে পারছেন না গীতাদেবী। রাজনীতির কথা বলার ফাঁকে ঘুরেফিরেই এসেছে সেই প্রসঙ্গ, “মেয়েটার বিয়ে। বাড়িভর্তি লোক। অথচ আমি-ই নেই। এই দিনটা কি আর কখনও আসবে?”
তবু এই যন্ত্রণার মধ্যে গীতাদেবীর একটাই সান্ত্বনা, “মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোক বারেবারে ফোন করেছেন আমাকে। বলেছেন, ‘চিন্তা কোরো না। আমরা তো আছি।” সেই ভরসাতেই দলীয় অফিসে শুনে শনিবারের রাত কাটবে চরাবিদ্যার গীতা মণ্ডলের। |