মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও আতঙ্ক কাটেনি ওঁদের। সারা গায়ে অসহ্য যন্ত্রণা। কখনও কখনও কাতরে উঠছেন। ঘুমের ওষুধ দেওয়া হলেও দু’চোখের পাতা এক করতে পারছেন না মণিরামপুরে দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত দুই সাংবাদিক আস্তিক চট্টোপাধ্যায় ও বরুণ সেনগুপ্ত। রাজ্যের বিরোধী নেতারা তাঁদের হাসপাতালে দেখে এলেও শাসক দলের কোনও শীর্ষ নেতার দেখা মেলেনি।
বাইপাস লাগোয়া বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, দুই তরুণের শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। দু’জনেরই আঘাত প্রধানত শরীরের বাইরের অংশে। দুষ্কৃতীদের মারে আস্তিকের হাত, পা, কোমর, পিঠের বিভিন্ন অংশের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁর মাথায় ফের স্ক্যান করা হবে। আর বরুণের কাঁধ, কোমর, দু’হাত ও পায়ে গভীর ক্ষত রয়েছে। তাঁকেই জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। চিকিৎসক অমিতাভ সাহা জানান, ধাক্কা সামলাতে বরুণ-আস্তিক দু’জনেরই বেশ কিছুটা সময় লাগবে।
দুই সাংবাদিককে এ দিন হাসপাতালে দেখতে যান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রমুখ। |
বিমানবাবু বলেন, “ঘৃণ্য ঘটনা। দুই সাংবাদিককে খুন করাই লক্ষ্য ছিল।” গত দু’দিনে রাজ্যে ১১ জন সাংবাদিক নিগৃহীত হয়েছেন বলে জানিয়ে বিমানবাবু বলেন, “এ সব বন্ধ না-হলে রাজ্যের গণতান্ত্রিক অবস্থা বলে আর কিছু থাকবে না।” প্রদীপবাবু বলেন, “ভেবেছিলাম মুখ্যমন্ত্রী কিংবা শাসক দলের কেউ আহতদের দেখতে আসবেন। এলেন না। মুখ্যমন্ত্রী বা তৃণমূল নেতাদের এই ব্যবহারে হামলাকারীরাই উৎসাহ পাবে।”
তৃণমূলের কোনও শীর্ষ নেতা দুই সাংবাদিককে দেখতে গেলেন না কেন? শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এক কথায় এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “কে বলেছে দেখতে যায়নি? দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতিনিধি হিসেবে এ দিনই দীনেশ ত্রিবেদী হাসপাতালে আহত সাংবাদিকদের দেখতে যান। তা ছাড়া, যুব তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি ও ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত শুক্রবার মহকুমা হাসপাতালে ওঁদের দেখতে গিয়েছিলেন।” কিন্তু ব্যারাকপুরের এই দুই জনপ্রতিনিধির বাইরে তৃণমুলের কোনও শীর্ষ নেতাকে কেন দেখা গেল না, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ, মায়া ঘোষ, প্রাক্তন নকশাল নেতা আজিজুল হক দুই আহত সাংবাদিককে দেখতে যান। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুলেছেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। ঘটনার নিন্দা করে সংস্কৃতি সমন্বয় মঞ্চের তরফে চন্দন সেন, অশোক মুখোপাধ্যায়রা বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এমন হামলা আরও বাড়তে পারে। এ সব বন্ধ হওয়া দরকার।” |