গাফিলতি ছিল পুলিশের, মানতে রাজি নন ব্যারাকপুরের কমিশনার
শনি-সঙ্কেত মিলছিল ক’দিন ধরেই। শাসক দলের গোষ্ঠী-কোন্দলের জেরে গোলমাল, বোমাবাজি লেগেই ছিল। তবু সতর্ক হয়নি পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় যুবক জিতু তাঁতি খুন হওয়ার পরে হাতে গোনা জনাকয়েক পুলিশের সামনেই একপ্রস্ত গোলমাল হয়েছিল। তবু আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন পর্যন্ত করা হয়নি। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে অবাধ তাণ্ডব চলেছে ব্যারাকপুরের মণিরামপুরে। সাংবাদিক-নিগ্রহ ও গোলমালের এক দিন পর নজরদারির এই গাফিলতির দিকটা ঠারেঠোরে মেনে নিচ্ছেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশদেরই একাংশ।
পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ অবশ্য এখনও তাঁদের সতর্কতায় কোনও খামতি দেখছেন না। শনিবার তিনি বলেন, “পুলিশ তৎপর ছিল বলেই ওই দিন গোলমাল আরও বাড়েনি। পুলিশ কিছু না-করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত।” কিন্তু বাস্তব হল, ওই সকালে মণিরামপুর এলাকা কার্যত দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে ওঠার পরেও রাস্তায় পুলিশের একটি জিপ ও ভ্যানের বেশি কিছু দেখা যায়নি।
তাণ্ডবের নেপথ্যে সবার আগে যাঁর নাম উঠে এসেছে, সেই শিবু যাদবকে শুক্রবারই অবিলম্বে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ এ দিন সকাল থেকেই শিবু বেপাত্তা। ঘটনায় কে জড়িত, তা নিয়ে পুলিশ কমিশনারও কারও নাম করতে চাইছেন না। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ নিয়ে কিছু বলব না। তদন্ত চলছে।”
সুনসান ব্যারাকপুরের রাস্তাঘাট। বন্ধ রয়েছে দোকানপাটও। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
যদিও যাদের ধরা হয়েছে, তাদের প্রতেকের সঙ্গেই শিবু বা শিবু-ঘনিষ্ঠদের যোগ স্পষ্ট। এ দিনই শিবুর দাদা দিলীপ যাদব এবং তাদের প্রতিবেশী শম্ভু যাদব, বিষ্ণু সাউ, দীপক ঠাকুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া, জগদ্দলের কাঁকিনাড়ার বাসিন্দা আরও সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংহের এলাকার বাসিন্দা। এর আগে ব্যারাকপুরের মুরগিমহলে জিতু তাঁতি খুনের ঘটনায় তিন জন ও সাংবাদিক-নিগ্রহের ঘটনায় আরও তিন জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছিল পুলিশ। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ধৃতের সংখ্যা ১৭।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মণিরামপুরে গোলমালের সময়ে অর্জুন ও শিবুর ঘনিষ্ঠ এক দল হিন্দিভাষী যুবকই পুরোভাগে ছিল। শিবুর এই যুববাহিনীর বেপরোয়া হয়ে ওঠার ইঙ্গিত মিলছিল ক’দিন ধরেই। জিতু খুনের পিছনেও গত ক’দিনের ঘটনার যোগ রয়েছে বলে জানান এক পুলিশকর্তা। পুলিশ সূত্রের খবর, নতুনবাজারের একটি চপের দোকানের কাউন্টারে বোমা পড়েছিল জিতু খুন হওয়ার দু’দিন আগে। ওই দোকানের কাছেই শিবুর প্রতিপক্ষ তৃণমূলের আইনজীবী-নেতা রবীন ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ লাল্টু ঘোষ আড্ডা মারেন। লাল্টুই ছিলেন সে-দিন শিবু-গোষ্ঠীর নিশানা। পুলিশের সন্দেহ, এই হামলার শোধ নিতেই বৃহস্পতিবার রাতে শিবু-ঘনিষ্ঠ জিতুকে খুন করা হয়। যার পরবর্তী অধ্যায় মণিরামপুরে তাণ্ডব।
তৃণমূল নেতা রবীনবাবু এ দিন দিনভর দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে সোদপুরে ছিলেন। তবে তাঁর দাবি, “গোলমাল বা তার আগের ঘটনায় আমার বা লাল্টুর কোনও দায় নেই।” লাল্টু অবশ্য এখন পাড়াছাড়া। রবীনবাবু বলেন, “শিবুর দলবল এখনও আমার চালককে খুনের হুমকি দিচ্ছে।” মণিরামপুরে আবাসন-প্রকল্পে ইমারতি পণ্য সরবরাহ, সরকারি সংস্থায় ঠিকাদারির বরাত ও গঙ্গার বালি তোলা নিয়ে শিবু ও রবীন-গোষ্ঠীর চাপান-উতোর ইদানীং বাড়ছিল বলে পুলিশের একাংশ দাবি করেছে।
কমিশনারেটের এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “শাসক দলের এই নেতাদের দলবলকে হাল্কা ভাবে নেওয়াটাই ভুল হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম, জিতু খুনের পরে রাতেই যা গোলমাল হওয়ার হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, কাকভোরেই নতুন করে গোলমাল শুরু হওয়ায় শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তুত হওয়ারও সময় মেলেনি।” এ দিন যে ১১ জনকে ধরা হয়, তাদের কাউকেই কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে চায়নি পুলিশ। সকলকেই পাঠানো হয়েছে জেল হেফাজতে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.