ভোটের আগে গাড়ি হুকুমদখলের রেওয়াজ বহু দিনের। এ বার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলও ভাড়ায় নিতে চেয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরের অনুমতি চাইল রাজ্য পুলিশ।
কিন্তু পুলিশের ওই আর্জি কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে সংশয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারাই। তাঁদের বক্তব্য, সরকারি কাজে ভাড়া খাটছে, এমন গাড়ি নিতে আইনি বাধা নেই। কিন্তু ভোটের আগে পুলিশ যে রাস্তা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি তুলে নেয়, তা বিধিসম্মত নয়।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “এ নিয়ে বছর দুয়েক আগে হাইকোর্টে একটি মামলা হয়েছিল। গাড়ির মালিক আদালতে নালিশ জানিয়ে বলেছিলেন, তাঁর স্ত্রী অসুস্থ। চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রায় রোজই গাড়ি লাগে। কিন্তু পুলিশ তাঁকে কিছু না জানিয়ে চালকের হাতে হুকুমদখলের কাগজ গুঁজে দিয়েছে। সেই মামলায় পুলিশকে ভর্ৎসনা করে গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।” তা মাথায় রেখেই পুলিশের আর্জিতে আপত্তি স্বরাষ্ট্র দফতরের।
কিন্তু পুলিশ মোটরবাইক চাইছে কেন? রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে প্রার্থী বা ভোটাররা যাতে কোনও হুমকির মুখে না পড়েন, তা নিশ্চিত করতে বলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তাই প্রথম দফায় যে ন’টি জেলায় ভোট হবে, সেখানে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অনেক আগে থেকেই টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তার জন্য যত গাড়ির প্রয়োজন, ভাঁড়ারে তা নেই। তার উপরে মেরামতের অভাবে বহু গাড়ি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ থাকলেও টহলদারিতে ফাঁক থেকে যাচ্ছে। হাতে যা বাইক রয়েছে, তা নিতান্তই অপ্রতুল। |
পুলিশের দু’চাকা বাহন |
• হাওড়া
• হুগলি
• বর্ধমান
• বাঁকুড়া
• পুরুলিয়া
• পূর্ব মেদিনীপুর
• পশ্চিম মেদিনীপুর
• উত্তর ২৪ পরগনা
• দক্ষিণ ২৪ পরগনা |
১৫৭
১১৫
৬৫
১৫১
১৬৭
৮২
২৬৬
১০৮
১৪৪ |
|
|
পুলিশের আরও যুক্তি, সাধারণ ভাবে বিধানসভা বা লোকসভা ভোটের আগে বড় বড় মাঠে সভা করে রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারসভা হয় গ্রামে-গঞ্জে, ছোট পরিসরে। বহু এলাকায় রাস্তা এত সরু যে বড় গাড়ি ঢোকে না। তার উপরে এ বার পঞ্চায়েত ভোট যে সময়ে হওয়ার কথা, তখন ভরা বর্ষা। ফলে তখন বহু গ্রামের কাঁচা রাস্তায় বড় গাড়ি ঢুকবে না। ফলে মোটরসাইকেলই ভরসা। তাই ছোট ও মাঝারি গাড়ির পাশাপাশি মোটরসাইকেলও ভাড়া নেওয়ার আর্জি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরে ‘নোট’ পাঠানো হয়েছে বলেও জানান এক পুলিশকর্তা।
পুলিশের হিসেব বলছে, যে ন’টি জেলায় প্রথম দফার পঞ্চায়েত ভোট হবে, তার মধ্যে কলকাতা-লাগোয়া উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রশাসনের হেফাজতে গড়ে ৩৫০ গাড়ি থাকলেও বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, এমনকী বর্ধমানের অবস্থা খুবই করুণ। যেমন বাঁকুড়ায় আছে ২৪৫টি গাড়ি, পুরুলিয়ায় ২৮৯টি এবং বর্ধমানে ১৭১টি। এর বাইরেও অবশ্য গড়ে ১৫০টি করে মোটরসাইকেল রয়েছে প্রতিটি জেলা পুলিশের হাতে। কিন্তু তা-ও যে প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়, তা মেনে নিয়েছে একাধিক পুলিশকর্তা। তাই ভোটের মুখে এলাকায় টহলদারি বাড়াতে প্রাথমিক ভাবে ৯৫৭টি দু’চাকার যান ভাড়া করার আর্জি জানিয়েছে রাজ্য পুলিশ।
কী ভাবে তা সম্ভব? স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “ভোটের আগে পুলিশ চালক-সহ গাড়ি আটক করে। কিন্তু মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে সেই ‘নিয়ম’ খাটে না।” পুলিশ বলেছে, দিনপিছু ১১০ টাকা করে তারা মোটরসাইকেলের মালিককে দেবে। কিন্তু সেটা যথেষ্ট কি না, প্রশ্ন স্বরাষ্ট্র দফতরের। পুলিশ কর্তাদের একাংশ অবশ্য পাল্টা যুক্তি দেখিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, গত বিধানসভা ভোটেই জঙ্গলমহলের মানুষ টহলদারির জন্য মোটরসাইকেল ভাড়া দিয়েছিলেন। তখন কোনও আপত্তি ওঠেনি।
তা হলে পঞ্চায়েত ভোটের সময় কেন তা করা যাবে না? প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, সেই সময় বহু সন্দেহভাজন ব্যক্তির লাইসেন্সহীন মোটরসাইকেল বাজেয়াপ্ত করেছিল জঙ্গলমহলের পুলিশ। থানার সামনে সেগুলো ডাঁই করে রাখা থাকত। টহলদারির কাজে পুলিশ সেগুলিই ব্যবহার করেছিল। তখন নিজেদের নিরাপত্তার তাগিদেই জঙ্গলমহলের অনেক মানুষ পুলিশকে মোটরসাইকেল দিয়েছিলেন। মালিকের হাতে কাগজ গুঁজে তা হুকুমদখল করা হয়নি। |