|
|
|
|
টিম মালিকদের বেটিং বিতর্ক |
নিজের সিনেমার টিকিট নিজেই ব্ল্যাক
করার মতো ন্যক্কারজনক, বললেন শাহরুখ
নিজস্ব প্রতিবেদন |
আইপিএলে একের পর এক টিম মালিক যখন বেটিং-কাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন, গুরুনাথ মইয়াপ্পানের পর রাজস্থান রয়্যালস মালিক রাজ কুন্দ্রাকে নিয়ে যখন সারা দেশ উত্তাল, কেউ তাঁকে দেখেনি মুখ খুলতে। আইপিএলে তাঁরও টিম আছে। আইপিএল ফাইভে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে তাঁর টিম। এবং শেষ পর্যন্ত কলকাতা নাইট রাইডার্স মালিক শাহরুখ খান জানিয়ে দিলেন, টিম মালিকের উচিত নয় কোনও নিয়ম ভাঙা। তাতে নিজের সম্মানটাই নষ্ট হয়।
শনিবার একটি সংবাদপত্রের সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেছেন, “টিম মালিক হলে এই সব ব্যাপারে জড়িয়ে পড়াটা মোটেও ঠিক নয়। সে আপনি বেটিং ভালবাসুন বা না-ই বাসুন। আপনি টিম মালিক হলে সব নিয়মকানুুন আপনার জানা উচিত। ফাঁকফোকর কোথায় সেটাও জানতে হবে। কিন্তু সেটাকে অন্যায় ভাবে ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে নিজের সম্মানটাই নষ্ট হয়।” এবং তার পর নিজস্ব মেজাজে বলিউড বাদশার সংযোজন, “নিজের সিনেমার টিকিট কেউ নিজে ব্ল্যাক করে নাকি? আমি তো বেচব না। অন্য কেউ যদি করতে চায় তো করুক!”
গুরুনাথের পর রাজ কুন্দ্রা। ভারতীয় ক্রিকেটের বিতর্কের মানচিত্রে এ বার নতুন করে ঢুকে পড়েছে রাজস্থান মালিকের নাম। শাহরুখ মনে করেন, যা ঘটল, তাতে রাজ কুন্দ্রার এ সবের কোনও দরকারই নেই। বলছেন, “ও শিল্পা শেট্টির স্বামী। শিল্পা আবার আমার প্রথম দিকের নায়িকাও ছিল। ওরা আমার খুবই কাছের। রাজ আমার বন্ধু। ওর এ সবের দরকারই নেই। তবে আমার মনে হয়, ও এটা নিয়ে আইনি যুদ্ধে নামবে। কিছু না কিছু তো জানা যাবেই। তবে বুকিদের দাবিগুলোও ঠিকমতো বিচার করে দেখা উচিত। কারও একটা নাম নিলেই বুকিদের বিশ্বাস করাটা উচিত নয়।”
শিল্পা শেট্টির আবার শনিবারই জন্মদিন ছিল। যা প্রবল বিতর্কিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কাটাতে হল বলিউড অভিনেত্রীকে। রাজ কুন্দ্রাকে গ্রেফতার করার মতো তথ্যপ্রমাণ যে হাতে নেই, সেটা দিল্লি পুলিশ জানিয়ে দিলেও বিতর্ক এতটুকু থামেনি। সোমবার আবার বোর্ডের জরুরি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক আছে দিল্লিতে। কুন্দ্রাকে ঘিরে আইপিএলের নতুন কেলেঙ্কারি নিয়ে। বোর্ড কর্তাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যেই কুন্দ্রার টিমের বহিষ্কারের দাবি তুলে দিয়েছেন। আর বিতর্কের আবহে তাঁর স্ত্রী-কে জন্মদিন কাটাতে হচ্ছে, এতে অনুতপ্ত কুন্দ্রা। এ দিন টুইটার মারফত শিল্পার কাছে বারবার ক্ষমা চেয়েছেন। লিখেছেন, “আমার সুন্দরী স্ত্রী-র জন্য জন্মদিনের প্রচুর শুভেচ্ছা রইল। তোমাকে এ সব জঘন্য ঘটনা সামলাতে হচ্ছে বলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। সত্যিটা খুব তাড়াতাড়িই বেরিয়ে আসবে।” পরে এক বিবৃতির মাধ্যমে কুন্দ্রা বলে দিয়েছেন যে, যা করেছেন তাতে তিনি অন্যায় কিছু দেখছেন না। বরং তিনি নির্দোষ। ‘‘আমি যে অন্যায় করিনি, সে ব্যাপারে আমার কোনও সন্দেহ নেই। তাই এটা নিয়ে অনুতপ্তও নই। আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার জবাবে একটাই কথা বলব, আমি নির্দোষ। যদি আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তা হলে রাজস্থান রয়্যালস থেকে নিজের মালিকানা সরিয়ে নিতে দু’বার ভাবব না’’, শনিবার এক বিবৃতি মারফত বলে দিয়েছেন কুন্দ্রা।
বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ার থেকে সাময়িক অপসারণের পর মুখ খুলেছেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনও। তিনি মনে করেন না যে, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। একটি টিভি চ্যানেলকে শ্রীনিবাসন বলে দিয়েছেন, “আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে বলব না। কিন্তু আমাকে খোলাখুলি আক্রমণ করা হয়েছে। এটা বোঝাই যাচ্ছে যে বোর্ডের একটি গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসতে চাইছে। তাই এমন আক্রমণ।” অপসারিত বোর্ড প্রেসিডেন্ট মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ ওঠেনি। সঙ্গে শ্রীনির বক্তব্য, তাঁর জামাই গুরুনাথ মইয়াপ্পান যে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে যাবেন, সে ব্যাপারে তাঁর কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু গত বারো দিন ধরে তাঁকে যে হেনস্থা হতে হল, তার দায় তখন কে নেবে?
অপসারিত বোর্ড প্রেসিডেন্ট শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যাবেন, কুন্দ্রা কতটা রেহাই পাবেন, সে সব পরের ব্যাপার। শাহরুখ থেকে হরভজন সিংহ সবাই দাবি তুলে দিয়েছেন যে, এখুনি গড়াপেটা নামক ‘ক্যানসারের’ ওষুধ খুঁজতে নেমে পড়ুক বোর্ড। পঞ্জাবে হরভজন যেমন বলেছেন, “আমি অতি সামান্য একজন মানুষ। অনেক বড় বড় লোকই পুরো ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছেন। দেখছেন। আমি শুধু একটা জিনিসই চাই। আইপিএলকে ঘিরে যা চলছে, তার স্বার্থে ক্রিকেটকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিষ্কার করা হোক।” একই দাবি তুলে দিয়েছেন কেকেআর মালিকও। বলেছেন, “ইসলামের কয়েকটা ব্যাপার আমি খুব নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলি। আমি কোনও অসৎ উপায়ে টাকা উপার্জন করি না।” আর বেটিং নিয়ে শাহরুখের দর্শনটা কী?
খুব সহজ। ঘৃণা করেন। দেওয়ালির মতো কোনও উৎসবের আবহে যদি একশো টাকার বাজিও ধরে বসেন, শেষ পর্যন্ত সে টাকা তিনি নেন না। কোনও বুকিও আজ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার সাহস দেখাতে পারেনি। কারণ শাহরুখ খান মনে করেন, দেশের অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে বেটিংকেও একই তালিকায় ফেলা উচিত। |
|
|
|
|
|