তারাতলায় টাঁকশালের জমি ব্যবহার করার জন্য আবেদন করেছিলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। তা ফের খারিজ হয়ে যাওয়ায় চরম অনিশ্চয়তায় এ বার জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রো প্রকল্পের ভবিষ্যৎ।
টাঁকশালের জমি না পেলে আগামী দিনে ওই প্রকল্পের কাজ আর এগোনোই যাবে না বলে মনে করছেন রেলকর্তারা। মেট্রোর আশা, আলোচনার মাধ্যমে ওই সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের বক্তব্য, টাঁকশালের ওই জমি না পেলে বাতিল করে দিতে হতে পারে গোটা প্রকল্পটাই। কারণ, ওই জমি হাতে পাওয়া না গেলে কাজ করা একেবারেই অসম্ভব। ফলে কলকাতার অন্য মেট্রো প্রকল্পগুলির মতোই জমি-জটে আটকে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে রয়েছে জোকা-বি বা দী বাগের প্রকল্পও। |
তারাতলায় টাঁকশাল। —ফাইল চিত্র। |
জোকা থেকে বি বা দী বাগ প্রায় ১৭ কিলোমিটার ওই প্রকল্পকে দু’ভাগে ভাগ করেছে মেট্রো রেল। প্রথম ভাগ জোকা থেকে মাঝেরহাট পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে মাঝেরহাট থেকে বি বা দী বাগ। ইতিমধ্যেই তারাতলা পর্যন্ত স্তম্ভ বসানোর কাজ শেষ করে ফেলেছে রেল। মন্ত্রক জানিয়েছে, তারাতলা থেকে মাঝেরহাট স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোর লাইন বসানোর জন্য টাঁকশালের জমিটি তাদের প্রয়োজন। ওই জমি না পেলে সে দিকের স্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে না বলেই জানিয়েছে রেল। তাই ২০০৯-’১০ সাল নাগাদ কাজ শুরুর সময়েই ওই জমির জন্য আবেদন জানায় রেল। কিন্তু তা খারিজ করে দেয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক।
সম্প্রতি রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী ফের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কাছে ওই জমি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু চিঠির জবাবে অর্থমন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টাঁকশালের চৌহদ্দি সংবেদনশীল এলাকার অন্তর্ভুক্ত। তাই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে অনুরোধ করা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই জমিতে কাজ হলে টাঁকশালের সুরক্ষা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই রেলমন্ত্রককে জমিটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জানান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। উল্টে বিকল্প রাস্তা দিয়ে বা মাটির তলা দিয়ে ওই লাইন পাতার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক। সেই পরামর্শ মানা কার্যত অসম্ভব বলে মনে করছে রেল মন্ত্রক। কারণ, এখন যে প্রান্তে কাজ এসে থমকে গিয়েছে, তার সামনে ও পিছনে দু’প্রান্তেই উড়ালপুল রয়েছে। ফলে না এগোনোর রাস্তা রয়েছে, না পিছনোর। এই পরিস্থিতিতে তারাতলা থেকে মাঝেরহাট স্টেশনে যাওয়ার জন্য যে ১৫-২০ ফুট রাস্তা রয়েছে, তার উপর দিয়েই একমাত্র নির্মাণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার রাধে শ্যাম। তাঁর বক্তব্য, “স্তম্ভ বসানোর জন্য ওই স্বল্প পরিমাণ জায়গা যথেষ্ট নয়। নির্মাণের জন্য টাঁকশালের চৌহদ্দির মধ্যে থেকে ৫-৬ মিটার জায়গা প্রয়োজন হবে।” তা না পেলে কাজ শুরু করাই কার্যত অসম্ভব বলে মনে করছে রেল। যদিও চিদম্বরমদের পরামর্শ, এই পরিস্থিতিতে সুড়ঙ্গ করে লাইন পাতুক মেট্রো। কিন্তু রাধে শ্যাম বলেন, “যে উচ্চতায় ইতিমধ্যেই স্তম্ভ নির্মাণ হয়ে গিয়েছে, সেখান থেকে এখন আর ঢাল বানিয়ে মাটির নীচে মেট্রো লাইন নির্মাণ করা সম্ভব নয়।”
এ দিকে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক যে সুরক্ষাজনিত কারণে আপত্তি জানিয়েছে, তার বাস্তব ভিত্তি নেই বলেই মত মেট্রো কর্তৃপক্ষের। তাঁদের মতে, টাঁকশালের মূল ভবন মূল সড়ক থেকে অনেকটা দূরে। মেট্রোর নির্মাণের সঙ্গে মূল ভবনের কোনও সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া, আদি নকশায় দু’টি লাইনের পাশে আর একটি লাইন নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু টাঁকশাল কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে সেই লাইনটি ইতিমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে। ফলে প্রাথমিক ভাবে যে জমির চাহিদা ছিল, তা-ও কমে গিয়েছে। মেট্রোর বক্তব্য, নির্মাণের কাজে শুধু সড়ক সংলগ্ন কয়েক মিটার রাস্তা প্রয়োজন। যার জন্য কেবল টাঁকশালের মূল ফটক, নিকাশি নালাটি স্থানান্তরিত করতে হবে। তাতেই কাজ শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছে মেট্রো। কিন্তু গোটা বিষয়টি নিয়ে যে ভাবে অর্থমন্ত্রক অনড় মনোভাব দেখাচ্ছে, তাতে প্রকল্প আদৌও রূপায়িত হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সমস্যার সমাধান খুঁজতে গিয়ে মেট্রোর প্রস্তাব, নির্মাণকাজের সময়ে টাঁকশালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেওয়া হবে আচ্ছাদন। পাশাপাশি, ট্রেন চলাচল শুরুর আগেই টাঁকশালের সামনের অংশের লাইনটি প্রয়োজনে ‘ফাইবার ডোম’ দিয়ে মুড়ে দেওয়া হবে। যাতে ট্রেন পরিষেবা চালু হলে কোনও ধরনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার প্রশ্ন না ওঠে। খুব দ্রুত ফের অর্থমন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা নিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সেখানেই ওই বিকল্প প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে মেট্রো। বিষয়টি নিয়ে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “বৃহস্পতিবার মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। কেন্দ্রের কাছে কোন বিষয়গুলিতে তদ্বির করা প্রয়োজন, তার একটি তালিকা মেট্রো রেলকে দিতে বলা হয়েছে। ওই তালিকা পেলেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা।” |