যাদবপুরের রিজেন্ট কলোনির বাসিন্দা, শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী (২৯) খুনের কিনারা হয়েছে বলে দাবি করল কলকাতা পুলিশ। ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ তাঁর পরিচিত চার যুবককে শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ শ্যামনগর থেকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দাবি, ইন্দ্রজিৎকে তাঁর বন্ধুরা পরিকল্পনা করেই খুন করেছে।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম পাভেল সাহা (২২), সুবীর দাস (২১), সুদীপ্ত বিশ্বাস (২৪) ও অভিজিৎ হালদার(২৩)। উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের তেরঙ্গি মোড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের বাড়ি নিমতা, শ্যামনগর ও জগদ্দল এলাকায়। এই ঘটনায় আরও কয়েক জন যুবক জড়িত।
গত ৩ জুন রাতে রিজেন্ট কলোনিতে ওই শিক্ষকের ফ্ল্যাট থেকেই তাঁর হাত-পা বাঁধা মৃতদেহ মেলে। মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগানো ছিল। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়ার পরে পুলিশ জানায়, ইন্দ্রজিৎকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। ফ্ল্যাট থেকে তাঁর ল্যাপটপ, মোবাইল, হিরের আংটি, সোনার হার, কানের দুল-সহ বেশ কিছু জিনিস উধাও দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়েছিল, ওই সব জিনিস হাতানোর পরে দুষ্কৃতীরাই তাঁকে খুন করে পালিয়ে যায়। পুলিশ এ দিন জানিয়েছে, ইন্দ্রজিতের মুখে যে লিউকোপ্লাস্ট লাগানো হয়, তার বাকি অংশ এবং চুরি যাওয়া ল্যাপটপ সুদীপ্তের বাড়ি থেকে থেকে মিলেছে।
পুলিশের দাবি, ধৃত পাভেলই খুনের মূল পাণ্ডা। ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, ইন্দ্রজিতের বাড়িতে পাভেলের যাতায়াত ছিল। সে ৩ জুন সন্ধ্যায় ইন্দ্রজিতের ফ্ল্যাটে যায়। বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখে ছয় বন্ধুকে। ইন্দ্রজিতের অন্য কয়েক জন বন্ধুও সেই সময়ে ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। পাভেলকে ঢুকতে দেখে ইন্দ্রজিৎ তাঁর বন্ধুদের অন্য ঘরে গিয়ে গল্পগুজব করতে বলেন। তাঁরা পাশের ঘরে ঢোকার পরে পাভেল ইন্দ্রজিতের অজান্তে সেই ঘর বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। তার পরে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা তিন বন্ধুকে ফ্ল্যাটে ডেকে এনে পরিকল্পনা মতো ইন্দ্রজিৎকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। পুলিশ জানতে পেরেছে, ইন্দ্রজিৎকে খুন করার সময়ে ফ্ল্যাটে পাভেল, সুবীর, সুদীপ্ত এবং অভিজিৎ উপস্থিত ছিল। এ ছাড়া, ধৃতেরা জানিয়েছে, ঘটনার সময়ে ফ্ল্যাটের বাইরে আরও তিন জন ছিল। তাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
কলকাতা পুলিশের এক গোয়েন্দা-কর্তা এ দিন জানান, ধৃতদের অপরাধের অতীত ইতিহাস রয়েছে। তাদের জেরা করলে বেশ কয়েকটি অপরাধের কিনারা হবে বলে ওই পুলিশকর্তার দাবি।
রায়চকের গোবিন্দপুর কালীচরণ হাইস্কুলের প্রাণিবিদ্যার (জুলজি) শিক্ষক ইন্দ্রজিতের বাড়ি সোনারপুরের বারেন্দ্রপাড়ায়। তাঁর বাবা-মা ও বোন ওই বাড়িতে থাকেন। অবিবাহিত ইন্দ্রজিৎ তিন বছর আগে রিজেন্ট কলোনির ওই বহুতলের একতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ফ্ল্যাটে ইন্দ্রজিতের অনেক বন্ধুবান্ধবের যাতায়াত ছিল। অনেক রাত পর্যন্ত হইহুল্লোড় চলত বলেও তাঁরা পুলিশকে জানান।
পুলিশ সূত্রের খবর, দীপালির মাঠ এলাকার বাসিন্দারা শুক্রবার রাতে জগদ্দল থানায় জানান, কয়েক জন যুবক নেশা করে মহিলাদের উত্ত্যক্ত করছেন। জগদ্দল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চার যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। যাদবপুর থানার পুলিশও গোপন সূত্রে খবর পায় যে, ইন্দ্রজিৎ খুনে যারা জড়িত, তারা শ্যামনগর এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। সেই খবর তারা জগদ্দল থানায় জানিয়েছিল। জগদ্দল থানার পুলিশ আটক যুবকদের চেহারার বর্ণনা যাদবপুর থানাকে জানায়। এ দিন সকালে কলকাতা পুলিশের দু’টি জগদ্দল থানায় রওনা হয়। জেরার মুখে পাভেল নিজের অপরাধ স্বীকার করে বলে পুলিশের দাবি। |