কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় টাকা না পাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা যাবে না জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রো প্রকল্পের কাজ। শনিবার কলকাতায় এ কথা জানিয়েছেন রেল বোর্ডের (ইঞ্জিনিয়ারিং) সদস্য সুবোধ জৈন। তিনি বলেন, “কলকাতায় মেট্রো প্রকল্পের জন্য যে টাকা প্রয়োজন, তা জোগান দেওয়ার ক্ষমতা রেলের নেই। জোকা-বি বা দী বাগ প্রকল্পে যত টাকা দরকার, ততটাও আমাদের হাতে নেই। তাই এই প্রকল্পগুলি কবে শেষ হবে, তা বলতে পারছি না।” এ দিন সুবোধবাবুর সঙ্গে ছিলেন ‘রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড’ (আরভিএনএল)-এর চেয়ারম্যান ও এম ডি সতীশ অগ্নিহোত্রীও।
রেল সূত্রের খবর, কলকাতায় মেট্রো রেলের সাতটি প্রকল্প চলছে। সব ক’টি প্রকল্প মিলিয়ে মোট খরচ প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু মাঝপথে বরাদ্দের ঘাটতিতে রীতিমতো চিন্তিত প্রকল্পগুলির দায়িত্বে থাকা রভিএনএল-এর কর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, টাকা না থাকায় কোনও রকম দরপত্র ডাকা হচ্ছে না। আর তার জেরে প্রকল্পগুলি প্রায় দু’বছর পিছিয়ে যাবে বলে মনে করছেন রেলের কর্তারাই। |
তৃষ্ণার শান্তি। কাজ দেখতে গিয়ে গলা ভেজাচ্ছেন রেল বোর্ড সদস্য-সহ অন্যেরা। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ। |
রেলকর্তারা জানিয়েছেন, কলকাতায় প্রায় ৮৫ কিলোমিটার মেট্রো রেলপথ তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু ২০১৩-’১৪ সালের জন্য বাজেট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪৭৫ কোটি টাকা। ২০১১-’১২ সালে বাজেট বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ছ’হাজার কোটি টাকা এবং ২০১২-’১৩ সালে বাজেট বরাদ্দ ছিল চার হাজার কোটি টাকা। স্বাভাবিক ভাবেই প্রয়োজনীয় টাকা না থাকায় রীতিমতো আটকে গিয়েছে মেট্রো প্রকল্পের কাজ।
শুধু বরাদ্দের অভাবই নয়, কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এবং কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট প্রয়োজনীয় জমি না দেওয়ায় জোকা-বি বা দী বাগ প্রকল্পের কাজ কিছুটা আটকে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন সুবোধবাবু। তিনি বলেন, “আমরা দু’টি মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে এখনও জমি নিয়ে কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি।” রেলকর্তাদের সুবোধবাবু জানিয়েছেন, যতটা কম সম্ভব জমি ব্যবহার করে ফের প্রকল্পের রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া, প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের টাঁকশালের সামনে থাকা তারাতলা উড়ালপুলটি ভেঙে নতুন করে মেট্রো ও রাস্তা করা যায় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ, ইতিমধ্যেই জোকা থেকে বেহালার অজন্তা মোড় পর্যন্ত সাত কিলোমিটারের কাজ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে ময়দান পর্যন্ত মাটির নীচ দিয়ে তিন কিলোমিটার রাস্তার কাজের ছাড়পত্র সংক্রান্ত সমস্যাও রয়েছে। সুবোধ জৈনের বক্তব্য, “কেস ধরে ধরে সমস্যা মেটানোর জন্য আমাদের আধিকারিকেরা কাজ করে চলেছেন।”
শুধু জোকা-বি বা দী বাগ প্রকল্পই নয়, প্রায় ৩২ কিলোমিটার নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্পের কাজ নিয়েও চিন্তিত রেল বোর্ড। সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে যুক্ত ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে আরভিএনএল কর্তৃপক্ষের নিত্যদিন সমস্যা চলছে। কখনও ঠিকাদার সংস্থা কাজ করতে চাইছে না, আবার কখনও রেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের সরিয়ে দিতে চাইছেন। এ ছাড়াও ‘এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’ ৭০০ মিটার এলাকায় মাটির নীচে কাজ করতে দেওয়া নিয়ে প্রথমে আপত্তি তুলেছিল। পরে মৌখিক ভাবে ছাড়পত্র দিলেও লিখিত কোনও চিঠি এখনও রেল বোর্ডের কাছে পৌঁছয়নি।
রেলের ঘোষিত প্রকল্পগুলিই নয়, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের ১৫ কিলোমিটারে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ নিয়েও সমস্যা রয়েছে। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক এবং রেল মন্ত্রক যৌথ ভাবে এই প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছে। জমি-জটের জেরে এই প্রকল্পে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুক থেকে মধ্য কলকাতার ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্রে পৌঁছে যাওয়া এই প্রকল্পের প্রায় দু’কিলোমিটার রাস্তা নিয়েও সমস্যা আছে। রাজ্য সরকারের জমি-নীতি সেই সমস্যা আরও বাড়িয়েছে। এই প্রকল্পের প্রধান ঋণদানকারী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি ইতিমধ্যেই তা নিয়ে আপত্তি করেছেন। সুবোধ জৈন বলেন, “আমরা সব রকম পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছি। কোনও নির্দিষ্ট রুটেই আমাদের করতে হবে, এমন নয়। তবে নতুন কোনও ভাবনা এলে তার আর্থিক ও টেকনিক্যাল দিকগুলিও খতিয়ে দেখতে হবে। এ ছাড়া ঋণদানকারী সংস্থার শর্তগুলিও মানতে হবে।” |