প্রতিবাদ এসেছিল গতকালই। আজ সরাসরি আসরে নামলেন ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকেরবার্গ ও গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ। তাঁদের দাবি, ফেসবুক, গুগলের সার্ভারে যেমন ইচ্ছে তথ্য সংগ্রহের অধিকার কাউকেই দেওয়া হয়নি।
আমেরিকা ও ব্রিটেনের দু’টি সংবাদপত্রের দাবি, ‘প্রিজম’ নামে একটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ইন্টারনেট সংস্থার সার্ভার থেকে যেমন ইচ্ছে তথ্য সংগ্রহ করত মার্কিন ন্যাশনাল সিকিওরিটি এজেন্সি (এনএসএ)। তাতে সাহায্য করত ইন্টারনেট সংস্থাগুলি। এই প্রোগ্রামের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। গতকালই এই সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছিল ইন্টারনেট সংস্থাগুলি।
ল্যারি পেজ জানিয়েছেন, গুগলের সার্ভার থেকে সব তথ্য জানার অধিকার মার্কিন বা অন্য কোনও দেশের সরকারের নেই। যদি সরকার কোনও তথ্য জানতে চায় তবে সেই অনুরোধ আইনসম্মত কি না তা খতিয়ে দেখেন গুগলের আইনজীবীরা। তার পরে সেই অনুরোধ মানা হবে কি না তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রায় একই সুরে জুকেরবার্গের বক্তব্য, “সার্ভার থেকে সরাসরি তথ্য জানতে চেয়ে কোনও অনুরোধ বা আদালতের নির্দেশ আমাদের কাছে আসেনি। তেমন কোনও নির্দেশ পেলে আমরা তার বিরুদ্ধে লড়াই করতাম।” ল্যারি ও জুকেরবার্গের দাবি, সংবাদপত্রে পড়ার আগে ‘প্রিজম’ নামে কোনও প্রোগ্রামের কথা জানতেনই না তাঁরা। প্রায় একই বক্তব্য আর এক সংস্থা ইয়াহু-র। |
উল্টে আজ মার্কিন সরকারকে পাল্টা চাপ দিতে চেয়েছেন ল্যারি ও জুকেরবার্গ। তাঁদের মতে, সরকারি নজরদারি নিয়ে বেশি গোপনীয়তায় ব্যক্তি স্বাধীনতা বিপন্ন হচ্ছে। সরকারের উচিত এই ধরনের বিষয় নিয়ে আরও স্বচ্ছতা আনা। তবে সংস্থাগুলি এত বেশি ‘নিরপরাধ’ বলে মানতে রাজি নন অনেকেই। তাঁদের মতে, এই হারে তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে সংস্থাগুলির শীর্ষ কর্তারা কিছু জানতেন না, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আর যদি তা সত্যি হয়, তা হলে সংস্থাগুলির কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।
আজ বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় আমেরিকার সীমান্ত ছাড়িয়ে ব্রিটেনেও ছড়িয়ে পড়েছে। ব্রিটিশ সংবাদপত্রটির দাবি, এই প্রোগ্রামের কথা জানত ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা জিসিএইচকিউ-ও। এই নিয়ে প্রবীণ এমপি-দের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা। মার্কিন সরকারের দাবি, এই প্রোগ্রামে কেবল বিদেশ থেকেই তথ্য সংগ্রহ করা হত। ব্রিটিশ এমপি-দের প্রশ্ন, ব্রিটিশ নাগরিকদের গোপন তথ্য মার্কিন গোয়েন্দারা জানছেন, এটা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা জানতেন কি না। জানলে তাঁরা মার্কিন গোয়েন্দাদের তথ্য জানায় সম্মতি দিয়েছিলেন কি না।
তবে এত সমালোচনার মধ্যে বিষয়টিতে লেগেছে কৌতুকের রংও। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে ভরে উঠছে টুইটার, ফেসবুকের ঝুলি। এক মহিলা লিখেছেন, তাঁর কিছু মন্তব্য যে ঠিক মহিলাসুলভ নয় তা তাঁকে ফোন করে জানিয়েছে এনএসএ। আর এক জনের হুঁশিয়ারি, এর পরে রাজনীতিকরা যখন বলবেন আমরা আপনাদের কথা শুনছি, বুঝতে হবে তাঁরা সত্যিই আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন। তবে সব চেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে টুইটারে জর্জ ডব্লিউ বুশের উপরে ওবামার ‘সুপারইম্পোজ’ করা ছবি। তার উপরে লেখা জর্জ ডব্লু ওবামা। পরিবর্তনের স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ওবামা। ফের কি বুশের জমানাতেই ফিরছে আমেরিকা?
প্রশ্নটা সারা বিশ্বের। |