বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ১ নম্বর ব্লক পার্টি অফিসে ঢুকলেন। ঘিরে ধরলেন দলের কয়েকশো সমর্থক। কারও মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীকে বাতিলের দাবি, কারও নতুন প্রার্থীর নাম ঘোষণার দাবি। প্রায় দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রবীন্দ্রনাথবাবুকে ঘিরে বিক্ষোভ চলল। ১৬ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের কোন কোন প্রার্থীকে নিয়ে ক্ষোভ তা শেষ পর্যন্ত শুনলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। ফের আলোচনার আশ্বাস দিলেন। এর পরে একই দৃশ্য দেখা গেল দিনহাটায়।
বস্তুত, কোচবিহার জেলার পাঁচ মহকুমার ১২টি ব্লকেই প্রার্থী তালিকা নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত স্তরে অন্তত ১০০টি আসনে তৃণমূলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দিয়েছেন। জেলা পরিষদে তৃণমূল এখনও কোনও প্রার্থী দেয়নি।
রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “দল ভাল কাজ করছে বলেই মানুষ আগ্রহী। অনেক আসনেই একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হতে চাইছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়, এটা ভাল লক্ষণ বলেই মনে করি। দলের মধ্যে আলোচনায় মানুষ সব থেকে বেশি পছন্দ করবে তাঁকেই প্রার্থী করা হচ্ছে। তার পরেও যদি মনোনয়ন পত্র দেন, তিনি দলের নির্দেশে তা তুলে নেবেন বলেই আশা করছি।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, কোচবিহার জেলায় পঞ্চায়েতে ১৬৬৮টি, পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩৬৬টি এবং জেলা পরিষদের ৩৩টি আসনে নির্বাচন হবে। গত ৫ জুন থেকে মনোনয়ন পত্র জমার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ১২ জুন পর্যন্ত এই কাজ চলবে। তৃণমূল সূত্রের খবর, অনেক আসনেই সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে আসা নেতা ও বিদায়ী গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের টিকিট দিয়েছে তৃণমূল। অনেক আসনে ‘পুরনো’ তৃণমূলীদের টিকিট দেওয়া হয়েছে।
এই টিকিট দেওয়াকে ঘিরেই বুথে বুথে গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। পানিশালা, ঘুঘুমারি, পাটছড়া, কাওয়াগুড়ি, ভেটাগুড়ি, পুটিমারি, বুড়িরহাট, সিতাই- সর্বত্র একই চিত্র। বুড়ির হাটে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া দিনহাটা-১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি খগেশ্বর বর্মনকে টিকিট দিয়েছে তৃণমূল। দলীয় সূত্রের খবর, দিনহাটাতে বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ঘোষণা করা প্রার্থীদের বাইরেও প্রাক্তন বিধায়ক অশোক মন্ডলের গোষ্ঠীরাও প্রার্থী দিয়েছেল। সিতাইয়ে জগদীশ বাসুনিয়া এবং বিবেক ভদ্রের গোষ্ঠীর মধ্যে জোর লড়াই শুরু হয়েছে বলে তৃণমূলের অন্দরের খবর। মেখলিগঞ্জে সুনীল রায় লক্ষীকান্ত সরকারের গোষ্ঠীর মধ্যেও বিরোধ রয়েছে। মাথাভাঙার একটি অংশে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূল এখনও মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারেনি।
অশোকবাবু বলেন, “রাজ্য নেতৃত্ব প্রার্থী ঠিক করবেন। সমস্যা মিটে যাবে বলে আশা করছি।” রবীন্দ্রনাথবাবু গোষ্ঠী কোন্দল মেটাতে ইতিমধ্যে তিনি মেখলিগঞ্জে দুটি গোষ্ঠীর সঙ্গে কয়েক দফায় বসে আলোচনা করেছেন। |