চর্তুদশ শতকে মরোক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা ভারত উপ মহাদেশের সুস্বাদু আমের বর্ণনা রচনায় উল্লেখ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ প্রিয় সন্দেশের থেকেও শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা দিয়েছিলেন ওই আমকে। ওই ফলের মধ্যে তিনি ‘প্রাণের লাবণ্যের’ সন্ধান পেয়েছিলেন। তা ছাড়া বরাবরই বাঙালির রসনার তালিকায় আম শীর্ষের দিকেই থেকে এসেছে। তাই জামাই ষষ্ঠীর মাসে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে আম উৎসবের প্রথম দিনেই উপচে পড়েছে ভিড়।
আম থেকে আমসত্ব, বা কাসুন্দি, তেল, আচার, চাটনি, সবই আমের। আমের রস, মোরব্বা কিছুই বাদ নেই। শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া মাটিগাড়ায়, বহুজাতিক সংস্থার হোর্ডিঙে ছয়লাপ অতিকায় শপিং মলের সামনের চত্বর আপাতত আমের দখলে। লক্ষণভোগ, অমৃতভোগ, আমিরপসন্দ বা রানীপসন্দ অথবা বাংলার চিরপরিচিত হিমসাগর, ল্যাংড়া। অন্তত ৫০ রকমের আম নিয়ে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে উৎসব। শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে শুরু হয়েছে আম উৎসব। |
শুধু দেখা নয়, হাতে তুলে পছন্দ করলে, চেখে দেখার সুযোগও মিলবে উৎসবে। শুক্রবার উৎসবের উদ্বোধন করেছেন, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং। উৎসবে ঘুরে গিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। উৎসব চত্বর ঘুরে, হরেক রকম আম দেখে উচ্ছসিত সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী। পবন চামলিঙের কথায়, “ভারতীয় উপমহাদেশেই আম চাষের প্রচলন। শুধু স্বাদের জন্য নয় আমকে হাতিয়ার করে পর্যটন প্রসারের উদ্যোগী হওয়া যেতে পারে।” আমের সঙ্গে রাজ্যের সংস্কৃতির প্রশংসাও করেছেন তিনি।
মালদহ তো বটেই, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, মুশির্দাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনা, কোচবিহার এবং উত্তর ২৪ পরগনা থেকে নানান জাতের আম এসেছে শিলিগুড়িতে। অমৃতভোগ, গোবিন্দভোগ, গোলাপখাসের মতো প্রজাতির আম যেগুলি স্থানীয় বাজারে খুব একটা মেলে না, সেগুলিও আম উৎসবে দেদার সংখ্যায় এসেছে বলে উদ্যোক্তাদের দাবি। আম উৎসবের আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে রাজ বসু বলেন, “আমের কদর বিশ্বজুড়েই। শুধু স্বাদের কারণে নয়, আম বিনিময় সৌজন্যেরও প্রতীক বটে। সাধারণত একসঙ্গে সব ধরনের আম বাজারে পাওয়া যায় না। সে কথা ভেবে এবং আমকে আরও বেশি করে সাধারণের কাছে পৌঁছে দিতেই এই উৎসবের আয়োজন।” আগামী রবিবার পর্যন্ত উৎসব চলবে বলে উদ্যোক্তারা জানান। উৎসবে বাছাই ২৯৫টি আমের একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা হয়েছে। ১১৭ রকমের আমজাত দ্রব্যও উৎসবে রয়েছে। |