|
|
|
|
|
|
|
সাজগোজ... |
|
তাঁতেই সেক্সি |
লাস্য মানে শুধুই বৃষ্টিভেজা শিফন শাড়ি নয়। হাতে বোনা
তাঁতের পোশাকের ফ্যাশনেও কিস্তিমাত। লিখছেন সুচন্দ্রা ঘটক। |
উজ্জ্বল আগুন রঙের হ্যান্ডলুম শাড়ি। বেগুনি হল্টার নেক ব্লাউজ।
আঁচলটা পিন-আপ করা পিঠের নীচের দিকে ব্লাউজের এক ফালি কাপড়টার সঙ্গে। প্লিট না করা আঁচলটা কাঁধের কাছ এসে ঢলে পড়তে চায় হাতের উপরে। বাধ সাধল পিঠের সেই সেফটি পিনটা। গলার কাছে হল্টার নেকের বেগুনি কাপড়ের পাশ দিয়ে উঁকি দিল দুধে-আলতা কাঁধ।
নজর কাড়ল আশপাশের সকলেরই। কাঁধ ছুঁইয়ে রইল শুধু কান থেকে নেমে আসা কাগজের তৈরি লাল-হলুদ দুলটা।
ব্যক্তিত্ব এবং আবেদন, দুইয়ের মিশেলে তন্বীর ফ্যাশন স্টেটমেন্ট তো তৈরি। ‘বম্বে টকিজ’-এ রানি মুখোপাধ্যায়ের শাড়ি-লুকটা মাঝেমাঝেই চোখে ভাসছে নিশ্চয়ই? সেক্স-অ্যাপিল মানেই কি শুধু বৃষ্টি ভেজা শিফন শাড়ি নাকি?
বারো হাত সুতির কাপড়। সেটিই জড়িয়ে-জাপটে ধরেছে তরুণীকে। কোমর থেকে পাড়, আঁচল দিয়ে ঠিকরে বেরোচ্ছে যথেচ্ছ রং। সে সব রং যত উজ্জ্বল, লুক তত আধুনিক। এ সাজেই এখন কাঁপছে গো টা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। গরমটাকে এমনই নানা-রঙে উদ্যাপন করছেন শহুরে সুন্দরীরা। বিদ্যা বালন, রানি মুখোপাধ্যায় থেকে টলিউডের নায়িকারা বাদ যাচ্ছেন না কেউই। কর্পোরেট ডিনার থেকে পুলসাইড ব্রেকফাস্ট এ সাজ চলতে পারে সর্বত্র। ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক দত্তের মতে, হ্যান্ডলুমের সাজে খেয়াল রাখা যায় গ্ল্যামার এবং আরাম, দু’দিকেই। আধুনিক ধরনের হ্যান্ডলুমের কাপড় বদলে দিয়েছে গ্ল্যামার এবং আবেদনের সংজ্ঞাটাই। আর সঙ্গী যদি হয় এক খানা ব্যাকলেস ব্লাউজ, তবে তো কথাই নেই। বললেন অভিষেক।
শাড়ির সাজ
শহরের বিভিন্ন বুটিকে হ্যান্ডলুম শাড়ির অর্ডার বেড়েই চলেছে ‘বম্বে টকিজ’-এর পর থেকে। বাংলার নানা অঞ্চলের তাঁতের শাড়ি এখনও ফ্যাশন সার্কিটে রীতিমতো হিট।
জামদানি নিয়ে কত যে এক্সপেরিমেন্ট চলছে। যেমন ট্র্যাডিশনাল ডিজাইনের পাশাপাশি পাড় ছাড়া জামদানি শাড়িও এখন বেশ জনপ্রিয় তরুণীদের মধ্যে। উজ্জ্বল রঙের লিনেনের উপরেও রয়েছে জরি দিয়ে জামদানির কাজ। ফুলিয়া, ধনেখালির তাঁতেও সাজছেন আধুনিকারা। পিছিয়ে নেই সেকালের সাদা খোলের শান্তিপুরী শাড়িও। মোটা কাপড়ের উপরে নানা রঙের চেক কাটা বাংলাদেশি ‘গামছা’ শাড়িও সুপারহিট সামার ফ্যাশনে।
বাংলার শিল্পীদের হাতে বোনা কাপড় নিয়ে বহু দিন ধরে কাজ করছেন ফ্যাশন ডিজাইনার সৌমিত্র মণ্ডল। বলেন, “ভারতীয়দের চেহারা, গায়ের রঙের সঙ্গে হ্যান্ডলুম খুব মানানসই।” আর এ ধরনের সাজে একটা নিজস্ব স্টেটমেন্ট তৈরি হয়। অনেক বেশি এক্সপেরিমেন্টও করা যায় সাজ নিয়ে। দেশ-বিদেশের নামী ফ্যাশন শো-তেও তাই সৌমিত্র ব্যবহার করছেন হ্যান্ডলুম কাপড়ই।
|
স্টাইলটা কেমন
সুতির এক রঙা শাড়িতে চওড়া জরি পাড়। খোলটা হতে পারে সাদাও। সঙ্গে একটা চোখ ধাঁধানো চোলি অথবা মাল্টি-কালার্ড ডিজাইনার ব্লাউজ। শাড়িতে আধুনিকারা রীতিমতো সেক্সি।
“হ্যান্ডলুমের শাড়িতে বেশ মিক্স-এন ম্যাচ করা যায়। দু’একটা ডিজাইনার ব্লাউজ কিনে নিলেই বিয়েবাড়ি থেকে পুজোবাড়ি লুক হয়ে যায় জমজমাট,” বলল ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ছাত্রী রুমি। এ বার দুই প্রদেশের হাতের কাজকে মিলিয়েই গ্রীষ্মের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাজ প্ল্যান করেছে সে। চওড়া সোনালি জরি পাড় দক্ষিণী মঙ্গলগিরি শাড়ি। খোলটা কমলার উপরে কমলা ডুরে। সঙ্গে ব্লাউজ হবে কলমকারী বা বাটিক প্রিন্টের। পিছনে লটকনটা অবশ্য হবে শাড়ির পাড়ের রঙে।
চলতে পারে কলমকারী ব্লক প্রিন্টের ব্যাকলেস ব্লাউজ। গ্রীষ্মের ফ্যাশনে এর চেয়ে সেক্সি আর কী বা হতে পারে? বলছেন সাজ বিশেষজ্ঞেরা। আরও এক্সপেরিমেন্ট করতে নীলাম্বরী বা মঙ্গলগিরি শাড়ির সঙ্গে পরে ফেলা যায় জার্সি কাপড়ের একটা নুডল স্ট্র্যাপও।
লুকটা সম্পূর্ণ করতে অবশ্য চাই নজরকাড়া কিছু অ্যাক্সেসরিজও। মনে করালেন মেক-আপ বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধ চাকলাদার। তাঁর কথায়, “সুতির শাড়ির সঙ্গে গ্ল্যাম কোশেন্টটা যোগ করতে খুব আধুনিক গয়নাগাঁটি প্রয়োজন। ভুলভাল গয়না পরলে একেবারে মাঠে মারা যেতে পারে সাজটা।” হ্যান্ডলুমের পোশাকের সঙ্গে মডেলদের ডোকরা, রুপো বা জরোয়ার হার-দুল-চুড়িতে সাজান পারমিতা। সৌমিত্রের মডেল-কন্যাদের দেখা গিয়েছে ফুলের গয়নাতেও। বঙ্গ-ললনারা এক্সপেরিমেন্ট করবেন মাটি, কাঠ, জুট আর বিডস্ দিয়ে। উত্সবের সাজ হিসেবে গাঢ় রঙের সুতির শাড়ির সঙ্গে ভারী সোনার গয়নাও বেশ মানানসই। তবে মুখে অতিরিক্ত রং দেওয়া চলবে না। এই ধরনের সাজের কায়দাই হল কম মেক-আপ। শুধু চোখের নীচের কাজলের টানটা হোক যথেচ্ছ গাঢ়। এথ্নিক লুকটা নাকি জোরালো হবে তাতেই। মত অনিরুদ্ধের।
হাতে ধরা থাকুক সুতোর কাজ করা ক্লাচ বা বটুয়া। টিপস্ অভিষেকের।
শাড়ি না পরলে
জামদানি, চিকনের কাজে ছোট্ট সান্ধ্য পার্টি-পোশাকও পছন্দ করছেন বাঙালি মহিলারা। স্লিভলেস গাউন বা তার মতো আরও পশ্চিমী কাটের জামায় থাকছে এথ্নিক কাজের ছোঁয়া। কর্পোরেট পার্টি থেকে কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে পাব, কফিশপ সব মেজাজেই মানানসই এই হ্যান্ডলুম সাজ। হাতে বোনা সুতির বা লিনেনের স্কার্ট, সালোয়ার, কুর্তিও জাঁকিয়ে বসছে ফ্যাশন উত্সাহীদের মনে। জানালেন ডিজাইনার পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফ্যাশনে ইন খাদির কাপড়ে নানা ধরনের নকশা করা স্টোল, স্কার্ফও। সুতির স্কার্ট বা প্যান্টসের সাজের সঙ্গে নানা রঙের চেকস দেওয়া সেই স্কার্ফ জড়িয়ে নিলে লুক হবে এক্কেবারে এথ্নো-কন্টেম্পোরারি!
রঙের জোয়ারে...
ডিজাইনারদের উত্সাহে খাদি, তসর এখন রীতিমতো বর্ণিল। অকারণ গাম্ভীর্যের তকমা কাটিয়ে জায়গা করে নিয়েছে জেন এক্সের ফ্যাশনে।
দক্ষিণ কলকাতার হ্যান্ডলুম পোশাকের এক বিপণিতে প্রমাণ মিলল তার। শহুরে ক্রেতাদের পছন্দ ও চাহিদা বুঝে বাংলার তাঁতিদের দিয়ে নানা রঙের ছটায় সুতির শাড়ি, স্টোল, শার্ট বানিয়ে আনছেন সেখানকার ডিজাইনারেরা। “হ্যান্ডলুম সুতির কাপড়ে যে কোনও রং খুব ভাল খোলে। তাই ভাইব্র্যান্ট রং পরাও ফ্যাশনে এসেছে এখন,” বললেন ডিজাইনার পারমিতা। কোরাল পিঙ্ক, বার্নিং অরেঞ্জ, লাল, গাঢ় সবুজ, ইন্ডিগো ব্লু-এর মতো রং এখন এই ধরনের শাড়ি থেকে স্কার্ট, সবেতেই হিট। বাহারি প্রিন্ট, বুটিতে রকমারি সিল্ক ও সুতির শাড়ি মন কাড়ছে তরুণী থেকে মধ্যবয়স্কাদের। সাদার উপরে সাদার কাজের জামদানি বা চিকন আবার বেশ হিট তরুণীদের মধ্যেও।
বয়ফ্রেন্ডকে এথ্নিক সাজাতে হলে...
প্যাস্টেল শেডের হ্যান্ডলুমের শার্ট, কলমকারী পাঞ্জাবি সবই ফ্যাশনে ইন। মটকা-তসরের বন্ধগলা বা জুট সিল্কের কুর্তাও চলছে বেশ। লাল, সবুজ বা ম্যাজেন্টা জামা পছন্দ হলেও নিশ্চিন্তে কেনা যায়। ডিজাইনারেরা বলছেন, রং হবে যত উজ্জ্বল, বয়ফ্রেন্ডকে দেখাবে ততই ট্রেন্ডি। সাজটা নিখুঁত করতে সঙ্গে কিনে ফেলা যায় একটা হাল্কা রঙের ধোতি প্যান্ট।
পাশে হাঁটার সময়ে উজ্জ্বল হলুদ ভাগলপুরী-মটকা-তসর শাড়িটা তাতে খুলবে আরও! |
|
|
|
|
|