‘তুমি আমার নও আড়ালের তুমি আমার চিরকালের’ এ কথার আগে রবীন্দ্রনাথ আরও একটি শব্দ বসিয়েছেন ‘ওগো’ যা রবীন্দ্রনাথ অসংখ্য কবিতা ও গানে বারেবারেই ব্যবহার করেছেন। বিশ্বকবি স্বয়ং ‘পূজা’ পর্যায়ের গানগুলিকে নানা বিষয় বিন্যাসে ভাগ করেছেন। তেমনি এ কালের কবি জয় গোস্বামী প্রস্তাবনায় বলেছেন শব্দটি যেন অহরহ কবিতা ও গানের মধ্যে সংলাপ বিনিময় করে চলেছে। আর কেবল মাত্র এই একটা শব্দ ‘ওগো’কে নিয়েই কবিতা ও গানের যুগলবন্দি হল কবিপক্ষের প্রাক্কালে রবীন্দ্রসদনে যার শিল্পী ছিলেন রাহুল মিত্র ও জয় গোস্বামী। নিবেদনে উত্সাহ উদ্ভাস। রবীন্দ্রনাথের গানের ভিতরের বিভিন্ন সংযোগগুলি খুঁজে নিয়ে কখনও সুরের, কখনও রাগের বা কখনও একটি প্রসঙ্গে গেঁথে ফেললে অতি চেনা গানগুলোও আমাদের কাছে অনেক সময়ই নতুন ভাবে ধরা দেয়। রাহুলের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই থাকে সেই গান নিয়েই এক নিরন্তর সন্ধান। বর্তমানে রবীন্দ্রনাথের গানকে যে দৃষ্টিতে ব্যবহার করা হচ্ছে সে কাজে তিনি বিরত আছেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
আঠাশটি গান ও আঠারোটি কবিতার সংকলনে অনুষ্ঠানটি ছিল অতি দীর্ঘ। শিল্পী যুগলকে মনে রাখতে হবে যে কোনও ভালো বা অনুভবের স্পর্শে ভরা অনুষ্ঠানই একটি নির্দিষ্ট সীমার বাইরে চলে গেলে সঠিক অনুধাবনে বাধা সৃষ্টি করে। ‘ওগো’র পরিকল্পনা, সংকলন ও বিন্যাস সব কিছুই রাহুলের। এই শব্দ দিয়েই রাহুল এক পৃথিবী খুঁজতে চেয়েছেন যেখানে আছে বেঁচে থাকার কথা, সুন্দর জীবনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা, যেখানে এসেছেন অন্ধকারের প্রভু, প্রাণের কর্মধার, খেয়াতরীর মাঝি। রবীন্দ্রনাথের গান থেকে এরই একটা রেখাচিত্র নিয়ে এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা। পরিবেশন রীতিতে সব গানই যে সামগ্রিক ভাবে চেতনায় নাড়া দিয়েছে বলা যাবে না বা সেটা সম্ভবও নয়। তবে প্রতিটি গানের বিন্যাসের প্রতি তিনি সন্নিষ্ঠ ছিলেন। জয় গোস্বামীর পাঠও ছিল আন্তরিকতায় ভরা। বিশেষ করে ‘ওগো কাঙালে’র আরও কি তোমার চাই পাঠ চেতনায় নাড়া দেয়। |