ভোট বড় বালাই। জনগনের মন জয় করতে নেতাদের পাশাপাশি কালঘাম ছুটছে আমলাদেরও। এমনিতেই সরকারি অফিসগুলিতে আঠারো মাসে বছর। চরকি কেটেও মেলে না ন্যায্য পরিষেবা। অনেকে ওবিসি সংশাপত্র চেয়ে বছরভর হত্যে তা পাননি। গদি আঁটা চেয়ারে গা এলিয়ে আধিকারিকরা কেবল দিনের পর দিন ঘুরিয়েছেন লোকজনকে। এখন পঞ্চায়েত ভোটে ওবিসি সংরক্ষিত কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে সংশাপত্র চাইছেন অনেকে। রাজনৈতিক দলগুলির চাপে দিন রাত এক করে আধিকারিকরা ব্যস্ত সংশাপত্র তৈরিতে।
দীর্ঘশ্বাস সহ এক আমলার মন্তব্য: “কী আর করব বলুন? ঘর-সংসার ফেলে এখন শংসাপত্র বিতরণ করছি!” আর দীর্ঘদিন ধরে ঘুরে ঘুরেও সার্টিফিকেট না পাওয়া জনতার বক্তব্য, “দ্যাখ কেমন লাগে! এত দিন চেয়ারে হেলান দিয়ে পা দুলিয়েছ। এখন আমাদের কথা না শুনলে নেতারাই ‘টাইট’ দিয়ে দেবে!”
কেবল কথার কথা নয়, সরকারি হিসেবেও বলছে ভোটের মরসুমে ওবিসি সার্টিফিকেট দেওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত এক ডোমকল ৮,৩১২ জনকে শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল। আর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই সংখ্যাটা হাজার ছাড়িয়েছে। এই অতি তৎপরতা যে নেহাতই ভোটের ঠেলায় তা কবুল করেছেন খোদ ডোমকলের মহকুমা শাসক প্রশান্ত অধিকারী। তাঁর কথায়, “সরকারি নির্দেশ ছিল, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ওবিসি শংসাপত্রের জন্য আবেদন করলে, তড়িঘড়ি তা দিতে হবে। আর তা করতে রাতের ঘুম ছুটেছে।”
ডোমকলের কুপিলার বাসিন্দা আবু হায়াত বিশ্বাস সার্টিফিকেট চেয়ে বছর দেড়েক আগে আবেদন করেছিলেন। তাঁর কথায়, “উচ্চশিক্ষার জন্য শংসাপত্র খুব জরুরি ছিল। বিডিও অফিসে প্রায়ই ধরনা দিতাম। মাসের পর মাস বিভিন্ন দফতর ঘুরে শেষ অবধি এসডিও অফিসে যেতে বলা হয়। পরে জানতে পারি, সেখানে আমার ফাইলই পৌঁছয়নি। আবার বিডিও অফিসে হাঁটা দেওয়া শুরু করলাম। অবশেষে প্রায় মাস পাঁচেক পরে শংসাপত্র পেয়েছি।”
আবু হায়াতই নন, এক সময়ে শংসাপত্রের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছে অনেককেই। ডোমকলেরই এক মহিলার কথায়, “প্রায় চার মাস অফিসারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে দেখলাম, এ ভাবে আর হবে না। তখন বাধ্য হয়েই এক ছোট রাজনৈতিক দলকে বললাম, ‘আমি ভোটে লড়তে চাই’। ব্যস, কেল্লাফতে! কয়েক দিনের মধ্যেই পেলাম সার্টিফিকেট।” এখন দেখার, এই কর্মসংস্কৃতি কত দিন স্থায়ী হয়। ভোট ফুরোলে আবার চেনা চিত্র দেখা যাবে না তো? |