ভোটের ময়দানে বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই তো পরে। নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়া নিয়ে এখন লড়াই চলছে তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে।
এ বার নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ১৪০টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য ৪৩০ জন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবেই ২২৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। একই ভাবে নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য তৃণমূলের ৫২ জন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। জেলা পরিষদের ৩টি আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তৃণমূলের ৮ জন। অন্য দিকে নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের ৯১টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য তৃণমূলের তরফে ১৩৩টা মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির ২০টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তৃণমূলের ২২ জন, জেলা পরিষদের ২টি আসনে ৫ জন।
বৃহস্পতিবারই জেলা পরিষদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল তৃণমূল। শুক্রবার সকালে নন্দীগ্রামে পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েত স্তরের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলে ব্লক স্তরের কোর কমিটি। সেই তালিকা অনুমোদন করতে সন্ধ্যায় নন্দীগ্রামে আসেন খোদ তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রাম কলেজে আয়োজিত বৈঠকে প্রার্থী নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছনো গিয়েছে বলেই দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। বৈঠক শেষে উপস্থিত দলীয় কর্মী ও প্রার্থীদের মতবিরোধ ভুলে পঞ্চায়েত ভোটের লড়াই করার ডাক দেন শুভেন্দু।
এ দিকে, উল্টো ছবি বিরোধী বামফ্রন্ট শিবিরে। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের অধিকাংশ আসনে প্রার্থীই দিতে পারেনি সিপিএম। নন্দীগ্রাম -১ ব্লকের ১৪০টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে মাত্র ১৪টি আসনে প্রার্থী পদে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছে বামফ্রন্ট। এর মধ্যে সিপিএম ৭টি ও সিপিআই ৭টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি আসনের মধ্যে সিপিএম ২টি ও সিপিআই মাত্র একটি আসনে মনোনয়নপত্র দিতে পেরেছে। তুলনায় বামেদের কিছুটা ভাল অবস্থা নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে। এখানে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯১টি আসনের মধ্যে ৩৭টিতে সিপিএম, ১০টিতে আরএসপি ও ৫টিতে সিপিআই-এর মনোনয়ন জমা পড়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির ২০টি আসনের মধ্যে সিপিএম ৮টিতে ও সিপিআই, আরএসপি একটি করে আসনে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক গুড়িয়া বলেন, “ভয়-ভীতির পরিবেশ আছে। তাই আমাদের দলের প্রার্থী থাকলেও তাঁরা প্রকাশ্যে ভোটের ময়দানে নামতে সাহস পাচ্ছেন না। ওদের লোকেরা হুমকি দিচ্ছে, মারধর করছে। পুলিশও তো কোনও নিরাপত্তা দিচ্ছে না।”
বিরোধী শিবিরে থাকা কংগ্রেসের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার হার অনেকটা বেশি নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের মনোনয়ন জমা পড়েছে ৯৩টি। পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি আসনের মধ্যে ১৬টিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে তারা। অবশ্য নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে ৯১টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে মাত্র ৯টিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে কংগ্রেস। পঞ্চায়েত সমিতির ২০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে ৪টি আসনে। স্বভাবতই নন্দীগ্রাম ১ ব্লকে কংগ্রেসের এই বিপুল সংখ্যক মনোনয়নপত্র জমা পড়ায় বিস্মিত রাজনৈতিক মহল। তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “কংগ্রেস এতগুলো আসনে প্রার্থী দিতে পারবে আমরা ভাবিনি। এর মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কত জন কংগ্রেসের তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহও আছে। আমাদের মনে হয় তলে তলে সিপিএমের সঙ্গে যোগসাজশ করেই ওই আসনগুলিতে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।”
এই দুই ব্লকেই বেশ কিছু আসনে নির্দল প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। যার পিছনেও সিপিএমেরই ছায়া দেখছে তৃণমূল। নন্দীগ্রাম ১ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে ৬৮ জন নির্দল প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নন্দীগ্রাম ২ ব্লকে পঞ্চায়েত আসনে ৩৩টি নির্দল প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র জমা পড়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, নন্দীগ্রামের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বিরোধী বামেরা প্রার্থী দিতে না পারলেও বেশ কিছু এলাকায় নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ের কৌশল নিয়েছে তারা।
|