|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া ব্যারাকপুর |
দাদাগিরি |
যেন থ্রু-ট্রেন |
শান্তনু ঘোষ |
‘বালিহল্ট এক জন। বালিহল্ট এক জন।’
‘দাদা, বালিঘাট যাবেন তো?’
‘না।’
‘কেন? বালিহল্ট গেলে তো বালিঘাটের উপর দিয়েই যেতে হবে।’
‘না। বালিঘাটের প্যাসেঞ্জার নেব না।’
কোনও সাজানো সংলাপ নয়। প্রতি দিনই ডানলপ মোড়ে অটোচালক ও যাত্রীদের মধ্যে এমন কথাবার্তা শোনা যায়।
উত্তর শহরতলির ব্যস্ত মোড় ডানলপ। নতুন তৈরি হওয়া উড়ালপুলের নীচে, পিডব্লিউডি রোডের উপরেই রয়েছে অটোস্ট্যান্ড।
|
|
এখান থেকে বালিখাল কিংবা বালিহল্ট পর্যন্ত অটোর পারমিট রয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, চালকেরা অনেক সময় পুরো দূরত্ব যেতে চান না। বহু ক্ষেত্রে মাঝপথের যাত্রী তোলেন না। প্রতিবাদ করলে জোটে দুর্ব্যবহার। অভিযোগ, সারা দিনই এ ধরনের ভোগান্তি চলে। যদিও উত্তর ২৪ পরগনার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক জয়ন্ত দাস বলেন, “এখনও কোনও অভিযোগ পাইনি। পেলে খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।”
বেলা ১২টা। ডানলপ মোড়ের অটোস্ট্যান্ডে প্রায় ২০ জন দাঁড়িয়ে। কিন্তু স্ট্যান্ডে একটিও অটো নেই। মিনিট ১৫ পরে চারটি অটো এল। ১৬ জন যাত্রীর জায়গা হওয়ার কথা। কিন্তু এক জন চালক গাড়ি রেখে বললেন, ‘‘এখন গাড়ি যাবে না।’’ এটি ডানলপ-বালিখাল রুটের অটো। বাকি তিন জন চালক জানালেন, তাঁরা দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত যাবেন। এই তিনটি অটো ডানলপ-বালিহল্ট রুটের। চার জন উঠলেন দক্ষিণেশ্বরের একটি অটোতে। বাকি দু’টি অটো দাঁড়িয়ে রইল উড়ালপুলের নীচে। কিছু যাত্রী অগত্যা ভিড় বাসে উঠলেন। বাকি যাত্রীরা ফের দাঁড়িয়ে রইলেন। |
|
রাত সাড়ে ৯টা। ডানলপ মোড়ের স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছ’টি অটো। প্রায় ৫০ জন যাত্রী অপেক্ষা করছেন। একটি অটো বলছে কোন্নগর যাবে। কোন্নগর গেলেও বালিখাল কিংবা বালিঘাটের কোনও যাত্রী চালক তুলবেন না। যদিও কোন্নগর যেতে গেলে বালিঘাট, বালিহল্ট, বালিখাল হয়েই যেতে হবে। তা হলে যাত্রী তুলবেন না কেন? অটোচালকের জবাব: “ডানলপ থেকে কোন্নগর গেলে ২০ টাকা করে ভাড়া পাব। বালিখাল বা বালিঘাটের যাত্রী নিলে আট টাকা করে ভাড়া।”
দু’টি অটো বলছে বালিহল্ট যাবে। কিন্তু চালকেরা জানালেন, দক্ষিণেশ্বর ও বালিঘাটের যাত্রী তুলবেন না। কেন? ‘‘যাব না, ব্যস! এত উত্তর দিতে পারব না।’’, বললেন এক চালক। বাকি তিনটি অটো কোথাও যাবে না। চালকেরা নিজেদের মধ্যে গল্পগুজবে ব্যস্ত। শুধু
এখানেই শেষ নয়। এই স্ট্যান্ডে নেই কোনও ভাড়ার তালিকা কিংবা অভিযোগ জানানোর ফোন নম্বর।
প্রতি দিন নাগেরবাজার থেকে উত্তরপাড়ায় যান শিবপ্রসাদ সূত্রধর। তিনি লাইনে ছিলেন। বললেন, “অটো করে বালিখাল চলে যাই। সেখান থেকে সাইকেল নিয়ে বাড়ি। ডানলপে অটো দাঁড়িয়ে থাকলেও যেতে চায় না। কেন যাবে না, জানতে চাইলে তেড়ে আসে।” বালির বাসিন্দা পিনাকী দেবের মন্তব্য: “কী বলব? কাকে বলব?”
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের কথায়: “বিষয়টি আমার কানেও এসেছে। অটোর এই দাদাগিরির জন্যই আমি কিছু দিন আগে দক্ষিণেশ্বর থেকে অটোস্ট্যান্ড সরিয়ে দিয়েছি। ডানলপে অটোর দৌরাত্ম্য দেখার জন্য প্রশাসনকে বলা হয়েছে। কোনও ভাবেই অটোচালকদের এই দৌরাত্ম্য বরদাস্ত করা যাবে না।”
তৃণমূল পরিচালিত ডানলপ-বালিহল্ট, বালিখাল অটো সংগঠনের সম্পাদক রাজু জানা বললেন, “সমস্যা আছে। যাত্রী-হয়রানি এড়াতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই স্ট্যান্ডে দু’জনকে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।”
|
ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী |
|
|
|
|
|