উত্তর কলকাতা
নরেন দেব পার্ক
গাছ রেখে নির্মাণ
তিন বছর আগেই কলকাতা পুরসভা শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনের পিছনে নরেন দেব পার্কে (নরেন্দ্রনাথ দেব পার্ক) কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল। অন্যান্য সমস্যার সমাধান হলেও গাছ থাকার ফলে এই প্রকল্প প্রাথমিক ভাবে থমকে যায়। কিন্তু এখন গাছ রেখেই ওই সেন্টার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিল পুরসভা।
পুরসভার বস্তি দফতরের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার বলেন, “পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেই পুর-পরিষেবা কী করে দেওয়া যায় সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এই প্রকল্প নির্মাণে কোনও ভাবেই গাছ কেটে সবুজ ধ্বংস করা যাবে না। গাছ রেখে কী করে এই প্রকল্প হবে তার নকশাও হয়। এর পরেই সমস্যার সমাধান হয়।”
নরেন দেব পার্কের একাংশে বহু দিন ধরেই পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটি অফিস ছিল। এ ছাড়াও, পুরসভার কয়েক জন কর্মচারীর ঘর এবং একটি সুলভ শৌচালয়ও এখানে নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রথমে পুনর্বাসন সমস্যা মিটলেও সুলভ শৌচালয় স্থানান্তর করা নিয়ে মূল সমস্যা তৈরি হয়। এলাকার অনেকেই এই শৌচালয় ব্যবহার করতেন।
পরে পুরসভা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এখানে নির্মাণের সময় শৌচালয় ভেঙে ফেলতে হবে। সেই মতো শৌচালয় ভেঙে ফেলে নরেন দেব পার্কের মধ্যে কমিউনিটি সেন্টারের কাজ শুরু হয়। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বছরের শেষের দিকে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের কাজ শেষ হবে। পুরসভার বস্তি দফতর এবং এক নম্বর বরো ছাড়া সাংসদ তহবিল থেকেও এই প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মোট খরচ প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা।
এই প্রকল্প নিয়ে প্রথমেই এলাকায় সবুজ ধ্বংসের অভিযোগ ওঠে। পুরসভা কী করে পার্কের মধ্যে কমিউনিটি হল নির্মাণের অনুমতি দিল? এ ছাড়াও, যে জায়গা এই প্রকল্প নির্মাণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে সেখানে বহু দিন যাবৎ একটি নিম গাছ রয়েছে। প্রকল্প নির্মাণের সময় এই গাছ কাটা যেতে পারে, এই আশঙ্কায় স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এর প্রতিবাদও করেন।
পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, “এই পার্কের মধ্যে কোনও নির্মাণকাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। পার্কের ধারের যে অংশে নির্মাণ ছিল সেখানেই ল্যান্ড ইউজ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কন্ট্রোল প্ল্যান অনুযায়ী নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে, এই নির্মাণকাজ করার সময়ে কোনও ভাবে নিমগাছ কাটতে দেওয়া হবে না। গাছ রেখেই এই প্রকল্প নির্মাণ করতে হবে। সেই কারণে, গাছ রেখে প্রকল্পটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনে নকশা পরিবর্তন করতেও বলি। গাছ রেখেই এই প্রকল্পের নির্মাণ করা হচ্ছে।”
পুর আইন অনুযায়ী, ১৫০০ বর্গমিটার জায়গার ক্ষেত্রে সমগ্র এলাকার ১০ শতাংশ জায়গায় এই নির্মাণ কাজ করা যাতে পারে। মাঝারি মাঠ বা পার্কের ক্ষেত্রে (আয়তন ১৫০০ থেকে ৭০০০ বর্গমিটার) পাঁচ শতাংশ এবং বড় পার্ক বা জায়গার (৭০০০ বর্গমিটারের বেশি) ক্ষেত্রে কেবলমাত্র মোট জমির তিন শতাংশ জায়গা ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়াও পার্কে কোনও নির্মাণের উচ্চতা ৪ মিটারের বেশি হবে না বলেও এই আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থানীয় কাউন্সিলর মিতালি সাহা বলেন, “এখানে কমিউনিটি হলের খুবই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এই জায়গায় কমিউনিটি হল নির্মাণ করার ব্যপারে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হয়। সেই সমস্যার সমাধান করে এই প্রকল্পের নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এখানে একটি বহু পুরনো নিমগাছ আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই গাছের পুজোও করেন। ফলে, সবুজ রক্ষা করা ছাড়াও এলাকার বাসিন্দাদের স্বার্থেই কোনও ভাবে এই গাছ কাটা হবে না। এই গাছ রেখেই এখানে নির্মাণকার্যের পরিকল্পনা হয়েছে। কাজ চলছে।”

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.