কলকাতা বাসস্ট্যান্ড
ছাউনি বেহাত
বাস ছাউনি। লম্বায় প্রায় ৩০ ফুট।
চওড়ায় ১০ ফুট। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে টাঙানো দড়িতে ঝুলছে ভেজা জামাকাপড়। তলায় চলেছে রান্নার প্রস্তুতি। কয়েক জন শুয়েও রয়েছেন। এ ছবি হাওড়া স্টেশনের বাইরে কলকাতা বাসস্ট্যান্ডের ১২ নম্বর চ্যানেলের।
শুধু ১২ নম্বরই নয়, কলকাতা বাসস্ট্যান্ডের একাধিক চ্যানেলের এই অবস্থা। যাত্রীদের দাঁড়ানোর উপায় নেই। অধিকাংশই ভবঘুরের দখলে চলে গিয়েছে। ফলে রোদ-বৃষ্টিতে অনেকেই খোলা আকাশের নীচে বাসের জন্য অপেক্ষা করেন। চারপাশ জল-কাদায় ভরা।
হাওড়া স্টেশনের সাবওয়ের ৬ নম্বর গেট পেরিয়ে বাঁ দিকে ১২ নম্বর চ্যানেল। এখান থেকে ১২সি/২, ১২সি/১, এস ১২-সহ একাধিক বাস ছাড়ে। এর পাশে ১১, ১০ ও ৯ নম্বর চ্যানেল। এই তিনটি চ্যানেল দিয়ে দমদম, ব্যারাকপুর ও গড়িয়াগামী বাস ছাড়ে। প্রতি দিন কয়েক হাজার মানুষ এই বাসস্ট্যান্ড ব্যবহার করেন। এই তিনটি বাসস্ট্যান্ডের অবস্থাও ১২ নম্বর চ্যানেলের মতো। অধিকাংশ চ্যানেলের টিনের ছাউনি ভেঙে পড়েছে। বাসস্ট্যান্ডের বাসিন্দারা নতুন করে টিন লাগিয়েছেন। সেখানে রয়েছে তাঁদের ঘর-গেরস্থালির সরঞ্জাম। বৃষ্টি এলে ঘিরে ফেলার ব্যবস্থাও রয়েছে। আর যাত্রীরা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছেন খোলা আকাশের নীচে। ভিতরে বসতে গেলে অর্থও চাওয়া হয় বলে অভিযোগ। চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হন সাধারণ যাত্রীরা। বাস চ্যানেলে এলেই দৌড়তে শুরু করেন যাত্রীরা। তখন ভোগান্তি চরমে ওঠে।
নিত্যযাত্রী বাবাই ভদ্র বলেন, “দাঁড়ানোর জায়গা নেই। বৃষ্টি হলে জলও জমে। ভীষণই খারাপ অবস্থা। দীর্ঘ দিন এ ভাবেই চলে আসছে। কোনও পরিবর্তন নেই।” ১২ নম্বর চ্যানেলের এমন অবস্থা হয় যে অনেক সময়ে এখানে বাস দাঁড়ায় না। হাওড়া সেতুর দিকে একটু এগিয়ে দাঁড়ায়। ফলে যানজটও হয়।


হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “কলকাতা বাসস্ট্যান্ড কেএমডিএ-র। ফলে আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।” যদিও কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানান, কলকাতা বাসস্ট্যান্ড এলাকার খোলা প্রস্রাবাগার-সহ নোংরা আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর জন্য ১৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বাসছাউনি নিতে আপাতত কোনও পরিকল্পনা নেই।
কিন্তু বাসছাউনি দখলদার মুক্ত করা হচ্ছে না কেন?
হাওড়া সিটি পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। আমরা পরিবহণ দফতরের কাছে কলকাতা বাসস্ট্যান্ডটিকে টিকিয়াপাড়ায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছি।” পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “বাসস্ট্যান্ডের দখলদারদের অন্যত্র সরানোর চেষ্টা করছি। হোমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাওড়া সিটি পুলিশের আবেদন পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা একমত। কলকাতা স্ট্যান্ডটি দ্রুত টিকিয়াপাড়ায় সরিয়ে নেওয়া হবে।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.