বিনোদন কর আদায় নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিজেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছ থেকে বিনোদন কর আদায় করতে কলকাতা পুরসভা কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, কমিশন তা জানতে চেয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় পুর কর্তৃপক্ষকে শুক্রবার এই নির্দেশ দেন।
রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাছে সম্প্রতি এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছিল বিজেপি। তাদের বক্তব্য, বিনোদন কর বাবদ কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে কলকাতা পুরসভার পাওনা হয়েছে ৭৯ লক্ষ টাকা। পুরসভাকে মেটানো হয়েছে মাত্র ২০ লক্ষ টাকা। বাকি টাকা আদায় করতে পুর কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছেন। তারই সূত্রে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন ওই নির্দেশ জারি করেছে। নাইট রাইডার্সের তরফে অবশ্য এ দিন দাবি করা হয়েছে, কোনও কর বকেয়া থাকার কথা তাদের জানা নেই।
বিজেপি না নাইট রাইডার্স কাদের তথ্য ঠিক, সেটা তদন্তসাপেক্ষ হতে পারে, কিন্তু আইনজীবীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, পুর কর মেটানো হয়েছে কি হয়নি, তা বিচারের এক্তিয়ার কি মানবিধাকার কমিশনের রয়েছে? আইনজীবী তমাল মুখোপাধ্যায় কমিশনের এই নির্দেশের বিষয়ে অবহিত নন। তবে বিষয়টি শুনে তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রে ঠিক কী ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তা পরিষ্কার নয়। এই ধরনের বিষয় মানবাধিকার কমিশনের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।”
মানবাধিকার কমিশনের রেজিস্ট্রার রবীন্দ্রনাথ সামন্ত এ দিন বলেন, “বিজেপি-র অভিযোগ চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় গ্রহণ করেছেন এবং বিনোদন করের পুরো টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে তাঁরা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন তা পুর কমিশনারকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন।” রেজিস্ট্রার জানান, এ দিনই নির্দেশের কপি পুর কমিশনারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মানবাধিকার কমিশনের কোনও নির্দেশ তাঁদের হাতে পৌঁছয়নি। নির্দেশ হাতে পেলে তাঁরা কমিশনকে যা জানানোর জানিয়ে দেবেন।
কিন্তু এক্তিয়ার নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে যে প্রশ্ন উঠছে, সে ব্যাপারে কমিশনের বক্তব্য কী?
কমিশনের এক অফিসার জানান, বিজেপি-র অভিযোগ, সাধারণ মানুষ পুর কর দেবেন, আর কলকাতা নাইট রাইর্ডাসের কাছ থেকে কর আদায়ে গড়িমসি হবে, এটা বৈষম্যের প্রশ্ন। সংবিধানে সাম্যের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সেই জন্যই কমিশন এই অভিযোগের বিচার করছে। বিজেপি-র এ-ও অভিযোগ, গত বছর আইপিএল খেলাতেও নাইট রাইডার্স পুরসভাকে বিনোদন করের পুরো টাকা মেটায়নি। এই অভিযোগ পেয়ে শুক্রবার কমিশনের চেয়ারম্যান পুরসভার কমিশনারের কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছেন, কর আদায়ের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তা তিন সপ্তাহের মধ্যে জানাতে।
বিজেপি-র মানবাধিকার সেলের পক্ষে ভাস্কর ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “মানবাধিকার কমিশনের কাছে আমরা অভিযোগ জানিয়ে বলেছি, কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক কোটি কোটি টাকার মালিক। তাঁর কাছ থেকে বিনোদন করের টাকা আদায় করতে পুর কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছেন। কোনও কর আদায়ের ক্ষেত্রে শহরের নাগরিক বা ব্যবসায়ীদের রেয়াত করেন না পুর কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের সাম্যের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।” ভাস্করবাবু আরও জানান, মানবাধিকার কমিশনকে বলা হয়েছে, কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর। সেই কারণেই তাঁর কাছ থেকে বিনোদন কর আদায়ের ক্ষেত্রে গড়িমসি করা হচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখুক মানবাধিকার কমিশন।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার ভেঙ্কি মাইসোরের সঙ্গে এ দিন সন্ধেয় যোগাযোগ করা হয়েছিল। মুম্বই থেকে তিনি টেলিফোনে দাবি করেন, “প্রতি বছরই কর মেটাানো হয়ে থাকে। এই বছরও কর ঠিকমতো মেটানো হয়েছে। কোনও কর বকেয়া রয়েছে বলে আমার জানা নেই।” |