ছবি দু’টোর ভাষা কী মনে হচ্ছে? মহাফাইনালের আগেও দুই সুপারস্টার প্রতিদ্বন্দ্বী হালকা মেজাজে?
মাশা প্যারিসের নিরিবিলি বাগানে বসে ফরাসি ফ্যাশন ম্যাগাজিনে চোখ বোলান যদি, তো সেরেনা হোটেলের ঘরে নরম বিছানার আশ্রয়ে নিশ্চিন্ত বিশ্রামে!
কিন্তু এমনও হতে পারে, প্রাক-ফাইনাল প্রবল চাপের থেকে সামান্য রেহাই পেতেই যুযুধান রুশ-মার্কিন শুক্রবার এই ভঙ্গিতে। ট্রেনিং, জিম, সাঁতার, হিটিং পার্টনারের সঙ্গে অফুরান শট প্র্যাক্টিস শনিবাসরীয় ফরাসি ওপেনের দুই ফাইনালিস্টের চব্বিশ ঘণ্টা আগে স্বাভাবিক রুটিন অনুসরণ তো ছিলই। তবে তার চেয়েও বেশি তাৎপর্যের বোধহয় মারিয়া শারাপোভা আর সেরেনা উইলিয়ামসের শরীরী ভাষা, অবস্থান, মন্তব্য, প্রতিদ্বন্দ্বীকে মূল্যায়ন।
সেরেনার বিরুদ্ধে শারাপোভার শেষ জয়ের সময় টেনিসের গ্ল্যামার কন্যা প্রাপ্তবয়স্কাও ছিলেন না। এত বেশি পুরনো দিনের কথা! আবার সেরেনার শেষ (একমাত্রও) ফরাসি ওপেন খেতাব পাওয়ার অবস্থাও অনেকটা সে রকমই। “দু’হাজার দু’য়ে দিদিকে (ভেনাস উইলিয়ামস) রোলাঁ গারোয় ফাইনালে হারিয়ে খেতাব পাওয়ার কথা আমার প্রায় কিছুই মনে নেই,” বলছেন সেরেনা। যিনি শনিবার দীর্ঘ এগারো বছর পর ফরাসি ওপেন ফাইনাল খেলতে নামছেন! |
সে জন্যই হয়তো ১৫টা গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালকিন হওয়া সত্ত্বেও ফরাসি দর্শক সেরেনা সম্পর্কে ততটা মোহিত নয়, যতটা তারা অতীতের জাস্টিন এনা-র প্রতিভা বা কিম ক্লিস্টার্সের লাবণ্যময় টেনিসের ভক্ত। তবে এ বার যেন সেরেনা রোলাঁ গারোকে সব ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়েছেন!
প্রতিটি রাউন্ড জেতার পর কোর্টেই দাঁড়িয়ে ফরাসি ভাষায় সাক্ষাৎকার দিয়ে গ্যালারির তুমুল হাততালি তো কুড়োচ্ছেনই। গত বারের প্রথম রাউন্ডে বিদায় নেওয়া (তাঁর গ্র্যান্ড স্ল্যাম কেরিয়ারের নিকৃষ্টতম পারফরম্যান্স) ৩১ বছরের মার্কিন এ বার ফাইনালে উঠেছেন মাত্র একটি সেট খুইয়ে। তিন বার লাভ-এ সেট জিতে। সেমিফাইনালে পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী, বিশ্বের পাঁচ নম্বর তারকাকে মাত্র ৪৬ মিনিটে হারিয়ে ছুটেছেন খুব কাছের পার্ক দ্য প্রিন্সেস-এ, প্যারিস সাঁ জাঁ-র ফুটবল ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ দেখতে। “নিজেই যখন ফুটবল ম্যাচের একটা অর্ধের মতো সময়ে জিতে গেলাম, তখন ভাবলাম, যাই, পাশের পার্কে সত্যিকারের ফুটবল ম্যাচের একটা অর্ধ দেখে আসি,” রসিকতা করেছেন সেরেনা। |
পরক্ষণেই যেন সিরিয়াস এই মুহূর্তে সার্কিটে টানা ৩০ ম্যাচ জেতা বিশ্বের পয়লা নম্বর মেয়ে। যে সংখ্যাটা ২০০০ সাল থেকে মেয়েদের টেনিসে টানা ম্যাচ জয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ। “মারিয়াকে গত বারোটা সাক্ষাতে আমি হারালেও রোলাঁ গারোয় কিন্তু এর আগে খেলিনি। ক্লে কোর্ট গ্র্যান্ড স্ল্যামে ও কী রকম তার বিন্দুবিসর্গ কিন্তু আমি জানি না।” গত আঠারো বছরের মধ্যে এই প্রথম (১৯৯৫-এ আরান্থা সাঞ্চেজ -স্টেফি গ্রাফের পর) ফরাসি ওপেনে মেয়েদের ফাইনাল হচ্ছে প্রথম দুই বাছাইয়ের মধ্যে। তা হলেও দ্বিতীয় বাছাই শারাপোভা শীর্ষ বাছাই সেরেনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নতুন টোটকার খোঁজে মরিয়া। “ওর কাছে শেষ এক ডজন ম্যাচে হারাটা আমাকে খোঁচায় না বলতে পারলে বোধহয় খুশিই হতাম। কিন্তু সেটা একটা বিরাট মিথ্যে মন্তব্য হবে। তবে এ বার ছবিটা পাল্টানোর জন্য আমার দিক থেকে যা-যা করা দরকার, সব করব। আগের বারো বার সেরেনাকে হারাতে যে স্টাইলে খেলেছি স্বাভাবিক ভাবেই সেগুলো কাজে লাগেনি। সুতরাং এ বার স্বাভাবিক ভাবেই নতুন কিছু চেষ্টা করে দেখব,” বলেছেন শারাপোভা।
তাতেও অবশ্য শারাপোভার কতটা লাভ হবে তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে। বিশেষ করে সেরেনার একটা মন্তব্য শুনলে “নিজেকে শুধু বলে যাচ্ছি, সেরেনা ফাইনালের জন্য পুরো ফোকাসড্ থেকো!”
|
চূড়ান্ত প্রস্তুতির ফাঁকে ছুটি। নিজেদের ফেসবুকে ‘রিল্যাক্সড’ সেরেনা আর শারাপোভা। |