একটা সেঞ্চুরি দুই কিংবদন্তিকে পাঠিয়ে দিল দুই মেরুতে।
এক জন বলছেন, “শিখর ধবনের সেঞ্চুরি দেখে তো আর সহবাগ-গম্ভীরের কথা মনেই পড়ছে না।”
অন্য জনের মত, “যতই শিখর-রোহিতরা দুর্দান্ত ব্যাট করুক, এখনই সহবাগ-গম্ভীরের ওপেনিং জুটিকে ভুলে যাওয়ার সময় আসেনি।”
প্রথম বক্তার নাম কপিল দেব।
দ্বিতীয় জন সুনীল গাওস্কর।
দুই কিংবদন্তির একমত হওয়া বা না হওয়াটা অবশ্য এখানে বড় কথা নয়। এমন হয়েই থাকে। বড় ব্যাপারটা হল, গম্ভীর-সহবাগরা ফের মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে থাকা সত্ত্বেও পরবর্তী প্রজন্মের ওপেনিং জুটির তৈরি হয়ে ওঠা। এই জুটি দাঁড়িয়ে গেলে ধোনির চিন্তা কমবে, সহবাগ-গম্ভীরের চিন্তা বাড়বে। এক দিল্লিওয়ালার জন্য অপর দুই দিল্লিবাসীর কী বিড়ম্বনা। |
দিল্লির পশ্চিম বিহারবাসীর দুর্দান্ত সেঞ্চুরি দেখার পর রাজেন্দ্র নগর বা নজফগড় থেকে অবশ্য কোনও শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছনোর খবর নেই কার্ডিফে। শুক্রবার সকালে শুধু গৌতম গম্ভীরের অ্যাকাউন্টে একটি টুইট জমা হয়েছে, “ওয়েল ডান টিম ইন্ডিয়া। গত রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দারুণ জয়। বন্ধুরা, তোমাদের সবার জন্য গর্ব হচ্ছে।” না, শিখর ধবনের জন্য আলাদা কোনও বার্তা নেই এতে। সহবাগ তো মাসখানেক হল টুইটার ব্যাপারটাই ভুলে বসে রয়েছেন। শুক্রবার ধবনের সেঞ্চুরি নিয়ে কোথাও কিছু বলেছেন বলেও শোনা যায়নি।
ভারতের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক কি সে কারণে বেশি চাঁচাছোলা? “শিখর ধবনই ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। বিদেশের মাঠেও কী দারুণ পরিস্থিতিটা সামলাল! এ বার নতুন ছেলেদের এগিয়ে যাওয়ার পালা,” বলে দিয়েছেন কপিল।
এবং ‘পরিস্থিতি সামলানো’র ব্যাপারে স্বয়ং শিখরের বক্তব্য, “মর্কেল, ম্যাকলারেনরা দুর্দান্ত ফাস্ট বোলার। তাই এটা ভেবেই নেমেছিলাম, ওরা আমাদের শুরু থেকেই আক্রমণ করবে। তাই প্রথম দিকে ধীরে চলো নীতিই অবলম্বন করি। উইকেটটা ব্যাট করার পক্ষে ভাল ছিল ঠিকই, কিন্তু তাড়াহুড়ো করে কোনও লাভ হত না। সে জন্যই শুরুর দিকটা দেখে নিয়ে তার পর মারতে শুরু করলাম।” ফাস্ট বোলারদের স্টেপ আউট করে তুলে মারা প্রসঙ্গে নতুন তারকা ওপেনারের বক্তব্য, “চাপের মুখে খেলা আমার বরাবরই পছন্দের। এটাই আমার স্বাভাবিক খেলা। ব্যাট করতে নামলে সাহসটা এমনিতেই এসে যায়। এটাই আমার অভ্যাস।”
শিখরের প্রতাপে মুগ্ধ কপিল যখন বলছেন, “এটা ভারতীয় ক্রিকেটের সন্ধিক্ষণ। এখন আমাদের নতুন ছেলেদের উপরই নির্ভর করতে হবে,” তখন গাওস্করের কথায় কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন বীরু-গৌতিরা। ওঁদের কথা ভুলে যেতে রাজি নন সানি। শিখরের ইনিংসকে “টেকনিক ও টেম্পারামেন্টের দিক থেকে অসাধারণ” মেনে নিয়েছেন তিনি, তবে এ-ও বলছেন যে, “সহবাগ-গম্ভীরদের মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট বাকি আছে। নতুন ওপেনিং জুটি শুরুটা ভাল করেছে ঠিকই, তবে এক একটা টুর্নামেন্ট বা সিরিজে ওদের পারফরম্যান্স দেখতে হবে।”
টিভি ধারাভাষ্য দিতে আসা কপিল কিন্তু এক ধাপ এগিয়ে বলছেন, “শিখর-রোহিতরা ব্যাট করার সময় তো কমেন্ট্রি বক্সে সচিন, সহবাগ, গম্ভীরদের নিয়ে কোনও আলোচনাই হল না।”
রোহিতের সঙ্গে তাঁর জুটিটা যে জমে যেতে পারে, তেমন ইঙ্গিত শিখরের কথাতেও স্পষ্ট। বলেন, “রোহিত সিঙ্গলসগুলো এত ভাল নেয় যে, কী বলব! পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত মানিয়েও নিতে পারে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটাও আমাদের ভাল। ওর সঙ্গে খেলা ও ওকে খেলতে দেখা, দু’টোই দারুণ অভিজ্ঞতা।”
যা দেখেশুনে বীরু-গোতি দুশ্চিন্তায় পড়তে তো পারেনই!
|
... শিখর ধবনই ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। বিদেশের মাঠেও কী দারুণ পরিস্থিতিটা সামলাল! এ বার নতুন ছেলেদের এগিয়ে যাওয়ার পালা। এটা ভারতীয় ক্রিকেটের সন্ধিক্ষণ।
কপিল দেব |
... সহবাগ-গম্ভীরদের মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট বাকি আছে। নতুন ওপেনিং জুটি শুরুটা ভাল করেছে ঠিকই, তবে এক একটা টুর্নামেন্ট বা সিরিজে ওদের পারফরম্যান্স দেখতে হবে।
সুনীল গাওস্কর |
|