মাঠটাই ধোনির স্বস্তির জায়গা বলে
এত কাণ্ডের পরেও সফল হচ্ছে
ংল্যান্ডে এমএসডি-কে দেখে আমার কেন জানি না বছর দশেক আগের একটা টেস্ট ম্যাচের কথা মনে পড়ে গেল।
সালটা ২০০২। কোটলায় টেস্ট। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে। আমি টিমে আছি। ক্যাপ্টেন, মানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ম্যাচের আগের দিন আমাকে ওর ঘরে ডাকল। আড্ডা দিতে আমি দাদির ঘরে মাঝেমধ্যেই যেতাম। সে দিন আমাকে দেখে বলল, বুঝলি যা খারাপ ফর্ম চলছে, আমি এ বারও যদি না পারি বাদ পড়ে যাব! শুনে তো আমি স্তম্ভিত। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কিনা এই কথা বলছে! যে দাদিকে আমি এত দিন দেখে এসেছি, তার সঙ্গে কিছুতেই সেই রাতের দাদিকে মেলাতে পারছিলাম না। আর পরের দিন কী ঘটল জানেন?
দাদি সেঞ্চুরি করল!
আজ ধোনিকে দেখতে দেখতে, রোজ অসহ্য চাপ নিয়ে ওকে মাঠে নামতে দেখে কোথাও যেন দাদির সঙ্গে ওর একটা মিল খুঁজে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে দাদি, এমএসডি এরা সবাই একই ইস্পাত দিয়ে তৈরি। দেখুন, ভারত অধিনায়কের উপর কতটা চাপ থাকে, সেটা আমি-আপনি বাড়ির ড্রইংরুমে বসে আন্দাজও পাব না। রোজ কাগজে হেডলাইন হবে। একটা সামান্য ভুলচুকেই আপনাকে ছিঁড়ে ফেলা হবে। আর ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান পরিস্থিতি তো অভাবনীয়। আমার মনে হয় না, আজ পর্যন্ত কোনও ভারতীয় টিমকে এত চাপ নিয়ে কোনও বিদেশ সফরে যেতে হয়েছে। ধোনিদের যা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে হচ্ছে। আর এমএসের মতো কোনও ক্যাপ্টেনকে আজ পর্যন্ত এমন অসহনীয় চাপ নিতে হয়েছে বলেও মনে হয় না।
পরিস্থিতিটা একবার ভাবুন তো? ক্রিকেটের উপর থেকে দেশের মানুষের বিশ্বাস উঠে গিয়েছে। রোজ কেউ না কেউ ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে। বাকি টিম ছেড়ে দিন, শুধু ক্যাপ্টেনের উপরেই মিডিয়ার কয়েক দফা অভিযোগ। তুমি সিএসকে ক্যাপ্টেন আবার ইন্ডিয়া সিমেন্টসের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তুমি ভারত অধিনায়ক আবার কোনও এক স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট সংস্থার মালিক। মানে, পরিষ্কার ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট।’ তোমার আইপিএল টিম প্রিন্সিপ্যাল বেটিংয়ে জড়িয়েছে, তবু তুমি টুঁ শব্দটা করছ না কেন? কত দিন চুপ থাকবে? কয়েক কোটি প্রশ্ন একসঙ্গে ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে।
এমএসডি উত্তর দেয়নি, সবাই আমরা জানি। প্রেস কনফারেন্সে কী-ই বা বলত? বরং বদলে দু’টো জিনিস করে দেখাল।
এক) অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্র্যাকটিস ম্যাচে ৫০-৫ হয়ে যাওয়ার পর নেমে ৯১। মনে রাখবেন, ওই সময়ই ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের’ প্রসঙ্গ নিয়ে ওকে তাড়া করছিল মিডিয়া।
দুই) দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে রোহিত শর্মাকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে দিল। এখানেও মাথায় রাখতে হবে যে, রোহিত দু’টো প্র্যাক্টিস ম্যাচে জঘন্য খেলেছিল। প্রাক্তনরা কেউ ওকে টিমে চাইছিল না। তবু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চরম সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলতে কিন্তু ধোনির অসুবিধে হল না। বিজয় বাদ। রোহিত ঢুকল এবং হাফসেঞ্চুরি করে দুর্দান্ত একটা ওপেনিং পার্টনারশিপ টিমকে দিয়ে গেল।
দাদির প্রসঙ্গটা কেন এনেছিলাম, নিশ্চয়ই এ বার বুঝতে পারছেন।
আসলে দাদি বলুন, ধোনি বলুন, সবাই মনে হয় একটা জিনিস করে থাকে। ওরা নিজেদের একটা আলাদা ‘কমফোর্ট জোন’ তৈরি করে নেয়, যার নাম মাঠ। মনে মনে ঠিক করে নেয়, গোটা বিশ্ব আমাকে নিয়ে যা খুশি বলুক, মাঠের ওই ছ’-সাত ঘণ্টায় আমাকে কেউ মারতে পারবে না। মানে বলতে চাইছি, চাপ থেকে নিষ্কৃতি পেতে ক্রিকেট মাঠকেই এরা বেছে নিয়েছে, ধোনি এখনও নিচ্ছে। ধোনি জানে যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা পাকিস্তান ম্যাচে যদি এক শতাংশও কোথাও ওলটপালট হয়, আবার ওকে তুলোধোনা করা চালু হয়ে যাবে। কিন্তু তবু ও পরিস্থিতিকে ভয় পায় না। বরং চাপের মধ্যেও খুব পরিষ্কার ভাবনাচিন্তা করতে পারে। ভেবে দেখুন না, ও তো চাইলেই দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে ‘সেফ’ খেলতে পারত। নির্বাচকরা দু’টো ওপেনার দিয়ে পাঠিয়েছে। তাদের নামিয়ে দিলে ঝামেলা মিটে যেত। কেউ ব্যর্থ হলে দায় অন্তত ওর একার হত না। কিন্তু ও সেটা করেনি। চ্যালেঞ্জটা নিয়ে চরম সাহসী একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক’জন পারে এ রকম?
তাই ওকে দেখে ভাল লাগে, দেখে শ্রদ্ধা হয়। এমএসের মতো ঠান্ডা মাথার ছেলে আগে দেখিনি। দেখিনি, চাপের মধ্যেও এত পরিষ্কার ভাবনাচিন্তা করতে, সাহসী সব সিদ্ধান্ত নিতে। যেখানে মিডিয়া ওঁত পেতে আছে ওর একটা ভুলের জন্য। যেখানে দেশবাসীর ‘ট্রাস্ট ডেফিশিট’ মিটবে একমাত্র ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিটা জিতলে। বোর্ড কী করল, কতটা কড়া পদক্ষেপ নিল, তাতে কিছুই হবে না।
বারবার তাই ধোনিকে যখন তপ্ত কড়াইয়ে ফেলে ভাজা হয়, খারাপ লাগে। কথা বলুক না বলুক, ছেলেটা তো আন্তরিক একটা চেষ্টা করছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এমন একটা গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালের ওঠার মরিয়া চেষ্টা করছে, যা কিনা ‘গ্রুপ অব ডেথ’। কিন্তু কিছু করার নেই। ক্যাপ্টেন যখন, কাঁটার মুকুটটা সব সময় থাকবে ধোনির সঙ্গে। ওকে, ওর অবস্থাকে বোঝার দায় আর কার?
একমাত্র দাদিই বোধহয় বুঝতে পারবে!

সমস্যার পাঁচকাহন
• চেন্নাই সুপার কিংসের টিম প্রিন্সিপ্যাল গুরুনাথ মায়াপ্পন বেটিংয়ের অভিযোগে গ্রেফতার।
• সিএসকে-র মালিক ইন্ডিয়া সিমেন্টসের কর্ণধার এন শ্রীনিবাসন আইপিএল কেলেঙ্কারির জেরে বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
• বেটিংয়ে অভিযুক্ত বিন্দু দারা সিংহের সঙ্গে সাক্ষী ধোনির পাশাপাশি বসে ম্যাচ দেখার ছবি প্রকাশ্য হওয়া।
• স্পট-ফিক্সিং নিয়ে সম্পূর্ণ নীরবতার জন্য ক্রিকেটমহলে তুমুল সমালোচনা।
• রিতি স্পোর্টসের মালিকানা নিয়ে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বিতর্ক।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.