মেয়ে আব্দার করেছিল ল্যাপটপের। মা বলেছিলেন, “পরীক্ষায় ভাল ফল করে দিদির (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) হাত থেকে ল্যাপটপ নেওয়ার চেষ্টা কর।” সোমবার বিকেলে মোবাইলে ভেসে এল খোদ মুখ্যমন্ত্রীর গলা। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথম কুড়িতে থাকা ছাত্রছাত্রীদের হাতে ল্যাপটপ তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে।
হুগলির ধনেখালির দশঘড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অনন্যা মালখণ্ডি ৪৬৪ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে সম্ভাব্য দশম স্থান অধিকার করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ফোন পেয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এ বার বোধ হয় মায়ের কথা পূরণ করতে পারলাম।” অনন্যা চিকিৎসক হতে চায়। জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষাও দিয়েছে। বাবা গোরাচাঁদবাবু এলআইসি-র এজেন্ট। নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েটির কথায়, “ডাক্তারি পেশাটাই আমার খুব ভাল লাগে। গ্রামে চিকিৎসকের অভাব। পাশ করে গ্রামে ফিরে চিকিৎসা করতে চাই।” এ দিন মেয়ের ফলাফল জেনে খুশির জোয়ার বয়ে যায় বাড়িতে। অনন্যা বলে, “টিভিতে আমার রেজাল্ট শুনেই মা-ঠাম্মা দু’জনেই আনন্দে কেঁদে ফেলেন।” |
এ দিন সকালে সাংবাদিক সম্মেলনে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির মুখে রিষড়ার আদিত্য বিড়লা বাণী ভারতী স্কুলের ছাত্র উপমন্যুর নবম হওয়ার খবর শোনার মুহূর্ত থেকেই শ্রীরামপুর লাইব্রেরি লেনের গোস্বামী বাড়িতেও খুশির জোয়ার। মেধা অনুযায়ী মাধ্যমিকে উপমন্যুর নম্বরে যেটুকু আক্ষেপ ছিল, তা যেন সুদে-আসলে পুষিয়ে দিয়ে গেল উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল। বাবা অভিমন্যুবাবু কলকাতা পুরসভার কর্মী। মা শ্রীরামপুর ভারতী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। দু’জনেই বলেন, “গত এক বছর আমাদের বাড়িতে পড়াশোনা ছাড়া কার্যত অন্য কোনও আলোচনা হয়নি।”
উপমন্যুর ফলাফলে গর্বিত স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। উপমন্যু চিকিৎসক হতে চায়। জয়েন্ট দিয়েছে। অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল পরীক্ষাও দিয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি মোবাইলে গেম খেলা এবং কম্পিউটার নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করতে ভালবাসে উপমন্যু। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলে ক্যারম প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সে। উপমন্যুর কথায়, “ডাক্তারির বিষয়গুলি পড়তে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি একটু কম হয়েছিল।”
মাহেশ শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছ’জন পড়ুয়া প্রথম কুড়িতে জায়গা করে নিয়েছে। ওই স্কুলের মৈনাক মণ্ডলের প্রাপ্ত নম্বর ৪৬১। দীপ ঘোষ তার থেকে ১ নম্বর কম পেয়েছে। মৈনাক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চায়। দীপের স্বপ্ন ভৌতবিজ্ঞানে গবেষণা করা এবং শিক্ষক হওয়ার। প্রধান শিক্ষক শশাঙ্কশেখর মণ্ডল বললেন, “ছেলেরা যেমন পরিশ্রম করেছে তেমন ফল পেয়েছে। আমি অত্যন্ত খুশি।”
শ্রীরামপুর ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনের শুভজিৎ সাহা ৪৬২ নম্বর পেয়েছে। তার সতীর্থ স্পন্দন মণ্ডল পেয়েছে ৪৬০। শুভজিৎ জয়েন্ট দিয়েছে। সে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চায়। স্পন্দনের স্বপ্ন বিজ্ঞানী হওয়ার। সে বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’-এ পড়বে। মগরা উত্তমচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের সায়ন্তন দাস বণিক ৪৬২ পেয়েছে। তার ফলাফলে খুশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। |