লিলুয়া ও শিবপুরের ঘটনার পরেও শিক্ষা নেয়নি রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। লেকটাউনের দক্ষিণদাঁড়িতে পাতকুয়োয় পড়ে এ বার মৃত্যু হল এক তরুণের। অভিযোগ, দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ঘণ্টা তিনেকের চেষ্টাতেও পাতকুয়ো থেকে ওই যুবককে উদ্ধার করতে পারেনি। শেষে পাড়ারই দুই যুবক এবং এক পাতকুয়ো মিস্ত্রির সাহায্যে ওই যুবককে তুলে আনা হয়। ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
বারংবার এমন ঘটলেও কোনও ঘটনা থেকেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী শিক্ষা নিচ্ছে না কেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “সর্বভারতীয় স্তরে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেখানেও পাতকুয়ো থেকে উদ্ধারের প্রশিক্ষণ থাকে না। তবে বারংবার এমন ঘটায় নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ওই প্রশিক্ষণ দেব।” |
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে লেকটাউন থানার দক্ষিণদাঁড়ির অরবিন্দ কলোনির বাসিন্দা অসীম দাস (৩২) আচমকা পাতকুয়ায় পড়ে যান। অসীমবাবু শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাঁর ডান হাত কনুই থেকে কাটা। তিনি মামার বাড়িতে থাকেতন। ওষুধ ফেরির কাজ করতেন। অসীমের মামা নিত্য সরকার বলেন, “তখন রাত সাড়ে ১২টা হবে। আমাদের খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। অসীম বলল পরে খাবে। আমি ও আমার ছেলে শুয়ে পড়েছি। হঠাত্ বাথরুমের দিক থেকে জলে ভারী কিছু পড়ার শব্দ হল। গিয়ে দেখি, অসীম পাতকুয়োয় পড়ে গিয়েছে।” নিত্যবাবু চিত্কার করে লোকজন ডাকেন।
পাড়ার লোক নিত্যবাবুর বাড়িতে জড়ো হলেও অসীমকে উদ্ধার করা যায়নি। খবর যায় দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীতে। কিন্তু অভিযোগ, বহু চেষ্টার পরেও দমকল বা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কেউ কুয়োয় নামতে পারেননি। ঘটনাস্থলে চলে আসেন এলাকার বিধায়ক সুজিত বসু এবং স্থানীয় কাউন্সিলর।
নিত্যবাবুদের টালির চালের বাড়ির ভিতরেই রয়েছে চল্লিশ ফুটের বেশি গভীর ওই পাতকুয়ো। চওড়ায় দেড়-দুই ফুট। কারও নামার জন্য জায়গাটি বেশ কম। সুজিতবাবু বলেন, “বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী নীচে নামতে না পাড়ায় শম্ভু আর মনোজ নামে দুই স্থানীয় যুবক চেষ্টা করেন নীচে নামতে। পাতকুয়োর কাজ জানা সন্তোষকে খবর দিই। তিনি বাড়ি ছিলেন না।”
সন্তোষ আসেন ভোরবেলা। কোমরে দড়ি বেঁধে পাতকুয়োয় নেমে অসীমের দেহ তুলে আনেন তিনি। আর জি করে অসীমকে মৃত ঘাষণা করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা রাজা মল্লিকের অভিযোগ, “নানা সরঞ্জাম নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এলেও তারা কাজের কাজ করতে পারেনি।”
লিলুয়া ও শিবপুরের ঘটনার পরেও পাতকুয়ো থেকে উদ্ধারের প্রশিক্ষণ দ্রুত শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন দমকলমন্ত্রী। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ বার কি সত্যি প্রশিক্ষণ শুরু হবে? মন্ত্রীর ফের আশ্বাস, “শীঘ্রই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।” সুজিতবাবু জানান, শম্ভু, মনোজ ও সন্তোষকে সাহসিকতার জন্য পুরষ্কৃত করা হবে। |