রাতের মহানগরে কিয়স্ক বা পুলিশি সহায়তা কেন্দ্রে আর গ্রিন-পুলিশ নয়। মহিলাদের নিরাপত্তা বাড়াতে এখন থেকে থাকবেন শুধু উর্দিধারী কনস্টেবল বা সাদা পোশাকের পুলিশ।
এক মহিলাকে কটূক্তি ও তাঁর সঙ্গীকে মারধর করে নামিয়ে তাঁদের বিলাসবহুল এসইউভি নিয়ে পালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। মধ্যরাতের এ জে সি বসু রোডে ঘটনাস্থলের উল্টো দিকের কিয়স্কের পুলিশ মিনিট সাতেকেও বুঝতে পারেনি, কী ঘটছে। বিভাগীয় তদন্তে বেরোয়, সেই সময়ে ওই কিয়স্কে কর্তব্যরত ছিলেন এক গ্রিন পুলিশকর্মী, যাঁর চাকরির বয়স মাত্র মাসখানেক। এপ্রিল মাসের ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদের এই সিদ্ধান্ত।
এর পাশাপাশি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিত্ করপুরকায়স্থ সম্প্রতি প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন, কোনও মহিলা নিজের নাম গোপন করে কিংবা বেনামে অভিযোগ করলেও তা পত্রপাঠ নথিভুক্ত করতে হবে এবং অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া, অভিযোগ জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে কোনও ভাবেই মহিলাদের সমস্যা না-হয়, সে জন্য শহরের বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের জন্য অভিযোগ জমা দেওয়ার বাক্স বসাতে চলেছে কলকাতা পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, শহরের কয়েকটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে ওই সমস্ত বাক্স বসানো হবে। |
বুধবার নয়াদিল্লিতে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর মতে, ওই ধরনের ব্যবস্থার মধ্যে পুলিশকর্মীদের এ ব্যাপারে সচেতন ও সংবেদনশীল করে তোলাটা জরুরি, বিশেষত যাঁদের কাছে অভিযোগ নিয়ে মহিলারা যাচ্ছেন। তাঁর বার্তা প্রতিটি মহানগরের পুলিশকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
পার্ক স্ট্রিটে চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ, অতি সম্প্রতি এক আইরিশ তরুণীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ যে শহরে, সেখানে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশকর্মীদের সচেতন ও সংবেদনশীল করার প্রয়োজনীয়তা লালবাজারের কর্তারা শেষমেশ উপলব্ধি করেছেন। পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড তো বটেই, অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে, মহিলারা নিজেদের সম্মানহানি সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে পুলিশের হাতেই হেনস্থা হন। বারংবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েও এক শ্রেণির পুলিশকর্মীর মানসিকতা কিছুতেই বদলানো যাচ্ছে না। অথচ সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ২০১২ সালে কলকাতায় ৪৫ জন মহিলার উপরে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে।
এই অবস্থায় অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করতে চাইছে লালবাজার। রদবদল করা হচ্ছে পুলিশ মোতায়েনের ক্ষেত্রেও। কিয়স্কে বদল তারই অঙ্গ।
কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “আমরা দেখেছি গ্রিন পুলিশকর্মীরা কিয়স্কে থেকে পরিস্থিতি, বিশেষত মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ঠিক মতো সামলাতে পারছেন না। অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ না-থাকার ফলেই এমন হচ্ছে। কিন্তু রাতের কলকাতা এখন অনেকটা সময় ধরে জেগে থাকে। তাই মহিলাদের সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য রাতের শহরে বিশেষত সন্ধে থেকে মাঝরাত পর্যন্ত কিয়স্কে সাধারণ পুলিশ অফিসার বা কর্মীরা ডিউটি করবেন।” কলকাতায় পুলিশ-কিয়স্কের সংখ্যা এখন ১৩৯।
তা ছাড়া, মূলত মহিলাদের সুরক্ষায় মহানগরের যে অঞ্চল জুড়ে রেস্তোরাঁ, পানশালা, নাইটক্লাব ও ডিস্কোর ছড়াছড়ি, সেই জায়গাগুলিতে (অর্থাত্ নিউ মার্কেট, ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট ও পার্ক স্ট্রিটের মোড়, এ জে সি বসু রোড ও ক্যামাক স্ট্রিটের মোড়ে) রাত আটটা থেকে ভোর চারটে পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকছে মোট ১০০ জন পুলিশকর্মীর দল। সম্প্রতি এই ব্যবস্থা চালু করেছে কলকাতা পুলিশ। মহিলাদের যৌন নিগ্রহ সংক্রান্ত আইনের ধারার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক হওয়া রদবদলগুলি নিয়ে প্রতিটি থানাকে নিয়মিত পাঠ দেওয়ারও ব্যবস্থা হচ্ছে। |