কাঁঠালের গন্ধে পাগল এক দাঁতালের তাণ্ডবে রীতিমত আতঙ্কিত বন কর্মীরা। পটকা ফাটিয়ে,ক্যানেস্তারা বাজিয়ে বা সার্চ লাইট দেখালেও সে কিছুতেই ভয় পাচ্ছে না। এমনকী, বন্দুক নিয়ে সামনে দাঁড়ালেও হাত থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে দিচ্ছে। ওই দাঁতালকে কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে তা নিয়ে চিন্তায় বনকর্তারা।
হাতিটি নিয়ে নিজেও খোঁজ নিতে শুরু করেছেন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। হিতেনবাবুর কথায়, “হাতিটির কাণ্ড-কারখানা নিয়ে দফতরের আধিকারিকদের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি।” উত্তরবঙ্গের বনপাল বিপিন সুদ বলেন, “দাঁতালটির ভাবগতিক ভাল ঠেকছে না। যে ভাবে লোকজনকে আক্রমণ করছে আর বনকর্মীদের পিছু ধাওয়া করছে তাতে হাতিটি আদৌ সুস্থ না অসুস্থ তা বিশেষ ভাবে লক্ষ রাখার জন্য অফিসারদের নজর রাখতে বলেছি। অসুস্থতার লক্ষণ মিললে হয় চিকিৎসা করার চেষ্টা হবে খুব প্রয়োজনে মেরে ফেলা হতে পারে।”
প্রাক বর্ষায় জলদাপাড়া লাগোয়া মাদারিহাট ব্লকের প্রতিটি গ্রামের বাড়ি গুলিতে কাঁঠাল পাকতে শুরু করেছে। বনের ভেতর আজকাল তেমন ভাবে কাঁঠাল গাছ মেলে না। তাদের কাছে অত্যন্ত লোভনীয় ফলটির সন্ধান মেলে জঙ্গল ছেড়ে দু হাত পা বাড়ালে। গ্রামে আর সমস্ত হাতিরা দল বেঁধে গ্রামে ঢুকে ভুট্টার পাশাপাশি স্বাদ বদলাতে কাঁঠাল চেকে দেখলেও ওই দাঁতালের পছন্দ কাঁঠাল। দল থেকে বিচ্ছিন্ন বছর চোদ্দোর ওই দাঁতাল কাঁঠাল না পেলে যা খুশী তা করতে পারে বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে গ্রামবাসী ও বন কর্মীদের।
সোমবার দাঁতালটি জলদাপাড়া থেকে বেরিয়ে ঢুকে পড়ে মাদারিহাটের মেঘনাদ সাহা নগরে। গ্রামে ঢুকে গাছ থেকে কাঁঠাল পেরে খাবার সময় শব্দ পেয়ে লোক-জন মশাল, পটকা মায় ক্যানেস্তারা বাজিয়ে দলছুটিকে বনে ফেরানোর চেষ্টা চালান। তবে বনে ফেরা তো দূরে থাক উল্টে পাগলের মত লোকজনের পিছু এমন ধাওয়া করেযে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বাঁচেন।
সকলে খবর পেয়ে গ্রামে পৌঁছে জলদাপাড়া এলিফেন্ট স্কোয়াড কর্মীরা এর পর হাতি খেদাতে নামেন। তবে বন কর্মীদের সার্চ লাইট চোখে পড়তে কর্মীদের দিকে হাতিটি ছুটে আসে। সে সময় কয়েক জন বন কর্মী বন্দুক থেকে ৬ রাউন্ড শূন্যে গুলি ছোড়েন। গুলির শব্দে হাতিরা ভয়ে কুঁকড়ে গেলেও এ দাঁতাল ভয় পাবার পাত্র নয় তা বুঝতে পারেন বন কর্মীরা। এলাকার বাসিন্দা জলদাপাড়ার বিট অফিসার হরিপ্রসাদ যাদব বলেন, “গ্রামে প্রচুর কাঁঠালের গাছ পাকা কাঁঠাল খেতে সে ঢুকেছিল। এত দিন ধরে বন দফতরে কাজ করছি। তবে এ ধরনের ভয়ডরহীন হাতি আগে দেখিনি।” পাম্প স্টেশন জুড়ে .নানান ধরনের ফল গাছে ভরা এলাকার ভেতর প্রায় পঞ্চাশটি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। পাকা কাঁঠালের গন্ধে যেন মম করে গোটা চত্বর। সে গন্ধে ঝড়ে ভেঙে যাওয়া প্রাচীর টপকে ওই দাঁতালটি হাজির হয়। সেখানে দেওয়াল পার হয়ে বিশাল আকৃতির একটি দাঁতাল হাতিকে এলাকায় ঢুকে পড়া দেখে তিন জন নিরাপত্তারক্ষী বাধা দেন।
সে সময় দাঁতালটি রবিউল আলম নামে ওই নিরাপত্তা রক্ষীকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে আছাড় দেয়। তার পাশে পড়ে থাকা বন্ধুকটিকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছড়ে ভেঙে ফেলে। অপর এক নিরাপত্তা রক্ষী জগদীশ রায়ের কথায়, “শূন্যে ৪ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ার পর হাতি এলাকা ছাড়ে।” হস্তিবিশেষঞ্জ ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরীর কথায়, বন কর্তাদের কাছে লাগলেও হাতিটির আচরণ অস্বাভাবিক ঠেকছে না। এর কারণ পাকা কাঁঠালের প্রতি হাতিদের প্রচণ্ড লোভ।” |