উত্তাল তুরস্কের মুখ লাল জামার তরুণী
ওম্যান ইন রেড ফিল্ম নয়, ছবি।
হাজারো মানুষের ভিড়ে ইস্তানবুল শহরের গেজি পার্কে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন এক মহিলা। তবে তাঁর উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধতার লেশমাত্র নেই। গায়ে একটা সাধারণ লাল রঙের জামা। কাঁধে ঝুলছে সাদা ঝোলা। নেহাতই পিকনিকে যাওয়ার সাজপোশাক। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মহিলাকে ঘিরে ধরল মুখোশধারী পুলিশের দল। হাতের পাইপটা নিয়ে সোজা মুখের দিকে তাক। বেরিয়ে এল ঝাঁঝালো মরিচের গুড়ো। এক ঝটকায় মুখ সরিয়ে নিলেন তিনি। কিন্তু নিরস্ত করতে পারলেন না পুলিশটিকে। নাগাড়ে স্প্রে করতে শুরু করল সে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না সেইডা সাঙ্গার। গলা জ্বালা ও শ্বাসকষ্টে ছটফট করতে করতে পার্কের বেঞ্চে শুয়ে পড়লেন তিনি।
এ হল ২৮ মে-র ঘটনা। সেই মঙ্গলবার গেজি পার্কে হাজির ছিলেন এক আলোকচিত্রী। পুরো ঘটনাটাই ফ্রেমবন্দি করেন তিনি। আর তাঁর সৌজন্যেই তুরস্কের গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বে বিক্ষোভের মুখ হয়ে উঠেছেন ‘উওম্যান ইন রেড’। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ঝড় তুলেছেন তুরস্কের তরুণী।
সেইডার অফিস থেকে গেজি পার্ক দু’মিনিটের দূরত্ব। শহরের মাঝখানে এক টুকরো সবুজ। সেটাও নষ্ট করে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে সরকার। তুরস্কে এ ভাবেই একের পর এক পার্ক ভেঙে তৈরি হচ্ছে মাল্টিপ্লেক্স। প্রথমে পার্ক বাঁচাতে প্রতিবাদ জানান পরিবেশবিদরা। কিন্তু পরে সেটা হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের লড়াই। সেইডার মতোই পরে বিক্ষোভে যোগ দেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ইস্তানবুলের এই সেই ছবি যা সোশ্যাল নেটওর্য়াকিং ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: রয়টার্স।
পরিবেশ বাঁচানোর দাবি চেহারা বদলে হয়ে ওঠে অধিকারের লড়াই। সমাজের সব ধর্ম নির্বিশেষে, উঁচু-নিচু সব স্তরের মানুষ জড়ো হতে থাকেন। তাঁরা কাঠগড়ায় তোলেন প্রধানমন্ত্রী তাইপ এর্দোগানের নব্য-ইসলামি চিন্তাধারা এবং কট্টর শাসন ব্যবস্থাকে। শান্তিপূর্ণ ভাবেই নিজেদের মতো করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন সেইডারা। কিন্তু সে দিন নির্মম ভাবে বিদ্রোহ দমন করে এর্দোগানের পুলিশ।
তুরস্কে যে এ সব ঘটছে, তা এক রকম ধামাচাপা পড়েই ছিল। সরকারি কড়াকড়িতে পৌঁছতে পারেনি সংবাদমাধ্যমও। জানাজানি হয়ে গেল ওই একটি ছবির সৌজন্যেই। এর পরের দশ দিনে জল গড়িয়ে গিয়েছে বহু দূর। ঘটনার নিন্দায় করেছে গোটা দুনিয়া। চাপের মুখে পড়ে ক্ষমা চেয়েছে পুলিশ। কিন্তু তাতেও রাশ পড়েনি প্রতিবাদে। সাধারণ মানুষের দাবি, চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের।
রাতারাতি প্রচারের আলোয় চলে এসেছেন সেইডা সাঙ্গার। পেশায় ইস্তানবুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তিনি। তবে নিজেকে বিক্ষোভের মুখ হিসেবে দেখতে রাজি নন সেইডা। তাঁর হঠাৎ করে বিখ্যাত হয়ে যাওয়া কিংবা সে দিনের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতেও রাজি নন তিনি। শুধু বললেন, “আমার মতো আরও অনেকে মিলে পার্কটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। অধিকারের জন্য লড়ছে, গণতন্ত্রের জন্য লড়ছে।” থামলেন না, জানালেন লড়াইটা তাঁরা জিতেও গিয়েছেন।
তবে সেইডার সহকর্মীরা উচ্ছ্বসিত ভাবে জানালেন সে দিনের গল্প। গবেষক এরেন বললেন, তাঁরাও সে দিন গেজি পার্কে গিয়েছিলেন। তবে একটু পরে। গিয়ে দেখেন বেঞ্চে শুয়ে ছটফট করছেন সেইডা। চোখ থেকে লেন্সটা খোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অন্য এক অধ্যাপক জানালেন, “অনুভূতিটা ভয়াবহ। দু’চোখ জ্বলে যাচ্ছে। কিন্তু কাঁদতে পারছি না, বুকে লাগছে।”
তবে সে দিন পুলিশের আচরণ অনুঘটকের মতোই কাজ করেছিল। নিমেষেই তার আঁচ ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। আজ বিদেশ সফর সেরে তাই চুপিসাড়েই দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী এর্দোগান। সমর্থক, মন্ত্রীসান্ত্রীদের বিমানবন্দরে এসে স্বাগত জানাতে বারণ করেছিলেন। কারণ একটাই ভয়। গণক্ষোভের আগুনে যদি ঘি পড়ে!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.