|
|
|
|
খুব রাগ হলে মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে নিই |
|
লাইমলাইট একটা অদ্ভুত জায়গা। অনেক চাহিদা। অনেক পাওনা। কিছু একটা পাওয়া, আর সেটা না-পাওয়ার মধ্যে যে একটা বিস্তর ফারাক। আর কিছুই করতে না পারার হতাশা মনোবলকেই দুমড়ে মুচড়ে দেয়। সেই থেকে মন খারাপ। তা থেকে আসে অবসাদ। অস্বাভাবিক মৃত্যুও হতে পারে একাকীত্বের অভিশাপ। এমন উদাহরণ ইদানীং তো ভূরি ভূরি। অনেক সেলেবই তো এমন পরিস্থিতির শিকার। জিয়া খানের ঘটনাটা আমাকে খুব আঘাত করেছে। মাত্র পঁচিশ বছর বয়স। এ বয়সে কেউ হাল ছেড়ে দেয়?
আবার অনেকেই আছেন, যাঁরা স্ট্রেসের সঙ্গে দিব্যি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। কয়েক বছর আগে শুনেছিলাম, কোনও মানসিক চাপের পরিস্থিতি তৈরি হলেই ম্যাডোনা মন খুলে চিৎকার করেন। ‘টাইটানিক’ আর ‘দ্য রিডার’য়ের সাফল্যের পরও কেট উইন্সলেটের জীবন থেকে স্ট্রেস পিছু ছাড়েনি। একটা সাক্ষাৎকারে কেট বলেছিলেন তিনি সব কিছু আগেভাগে প্ল্যান করে রাখার চেষ্টা করেন। কে বাচ্চাদের স্কুলে ছাড়তে যাবে, কে তাদের স্কুল থেকে নিয়ে আসবে, সব কিছু। সেই লিস্ট আবার সাঁটানো থাকে ফ্রিজের ওপর। সারা বাড়িতে চার্ট আর ম্যাপ। এত অতি মাত্রায় সতর্কতার জন্য কেটের মাঝে মাঝে মনে হয় তিনি ‘সিআইএ’-র সঙ্গে কাজ করেন। |
|
|
|
কেট উইন্সলেট |
যুবরাজ সিংহ |
ম্যাডোনা |
|
আমার মতে, সব থেকে ভাল চাপ মুক্তির উপায় হল একটা ভাল সাপোর্ট সিস্টেম। একাকীত্ব অনেক সময় ভুল লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করায়। খারাপ অভ্যাসের দিকে ঠেলে দেয়। এটা এক ধরনের দুষ্টচক্র। ভাল বন্ধু আর পরিবারের সমর্থন এ ক্ষেত্রে সেই ভাল দিক। এরাই উদ্ধার করবে অবসাদের চোরাবালি থেকে।
হতাশাকে উড়িয়ে দেওয়ার কয়েকটা টিপস দিলাম:
১) আদর্শ কোনও পরিস্থিতির কথা ভাববেন না। বরং ভাবুন জীবনে কোন পরিস্থিতির সামনাসামনি আপনি হতে চান না। পিছনে ফিরে দেখুন। জীবনের আদর্শ ব্যক্তিটি হবে ‘সুপুরুষ, সেন্স অব হিউমর থাকবে তার, আর
সে দয়ালু হবে’ এ ভাবে না ভেবে বরং ভাবুন সেই স্বপ্নের ব্যক্তির মধ্যে
কী কী চান না। ধরুন, ভাবলেন আমার স্বপ্নের ব্যক্তিটি কখনওই আমাকে হতাশ করবে না। শুনে বেশ ভারিক্কি লাগলেও বিশ্বাস করুন, এটা কাজে দেবে।
২) কখনওই নিজেকে বেশি সিরিয়াসলি নেবেন না। অন্যেরা নেয় না, তো নিজে নেবেন কেন? একটাই তো জীবন। পুরোটা উপভোগ করুন।
৩) সব সময় মনে রাখবেন, পড়ে যাওয়ার ভাল দিক হল, উত্তরণের একটা সম্ভবনা থাকে। জীবনে কোনও কিছুই নির্ভুল নয়। উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন না, “ইফ ইউ আর গোয়িং থ্রু হেল, কিপ গোয়িং।” কিন্তু সুড়ঙ্গের শেষে সব সময়ই আলো থাকে।
৪) কখনওই নিজেকে নিয়ে হা-হুতাশ করবেন না। অনেক কিছু পাওয়ার ছিল, কিছুই পাননি। এই ভাবনাটা খুব খারাপ। অনেকেই নিজেকে নিয়ে দুঃখ করে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। এটাই আমার একদম অপছন্দ।
৫) আপনি যদি আপসেট হন, তবে কারও সঙ্গে কথা বলুন। কখনওই রাগ-ক্ষোভকে চেপে রাখবেন না। আমি তো রেগে গেলেই মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করি। কথা চেপে রাখার থেকে ঝগড়াটা অনেক ভাল।
অবশ্যই কাজগুলো করে দেখানো, বলার থেকে অনেক শক্ত। কিন্তু জীবনে Big 3Cs আছে চয়েস, চান্স আর চেঞ্জ। যদি কোনও কিছু আমাকে পাল্টাতে পারে, উজ্জ্বলতায় ছাপিয়ে যেতে পারে, তবে আমিও সেটাকে পিছনে ফেলে যেতে পারি।
যখন জিয়ার কথা প্রথম শুনলাম, আমি সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, আমি তো গায়ে আঁচড় কাটতেও হাজার বার চিন্তা করি, এমন একটা কাজ করার আগে ওর ওপর দিয়ে কী ঝড়টাই না গিয়েছে! কী করে জীবনটাকে এ ভাবে শেষ করে
দিল ও?
আমায় সব সময় ইন্সপায়ার্ড করে আমার বন্ধু যুবি। যুবরাজ সিংহ। আমি যুবিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ও কী করে হতাশা কাটিয়ে ওঠে? ও বলে, “আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা জোগায় ক্রিকেট মাঠে ফেরার চিন্তা। সেটাই অনুপ্রাণিত করে বেঁচে থাকতে! পরিবারের জন্য বাঁচতে। যাঁরা আমাকে বিশ্বাস করেন, তাঁদের জন্য বাঁচতে। আমার সব সময়ের অনুপ্রেরণা মা আর বন্ধুরা। অনুপ্রাণিত হই গোটা দেশ যে ভাবে আমার আরোগ্য কামনা করে প্রার্থনা করে, তা দেখে। এগুলোই আমাকে ছুঁয়ে যায়। আমাকে অনুপ্রাণিত করে। ফেরত আসার একটা সদথর্ক অনুভুতি মনে সঞ্চার করে!”
যাঁরা নিজেদের অন্তরের দানবটার সঙ্গে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা যুবির কথাগুলো থেকেই অনুপ্রেরণা নিন। |
|
|
|
|
|