|
|
|
|
শত্রু
বেড়ে গিয়েছে |
কেন? সহকর্মীদের নিয়ে পার্টিতে মজা করা? নাকি শহর জুড়ে তাঁর দু’টো ছবির পোস্টারই
এর কারণ?
খোলামেলা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। সাক্ষাৎকার নিলেন ইন্দ্রনীল রায় |
গত বছর ‘বব বিশ্বাস’, এ বছর ঋত্বিক ঘটক। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় তো টি২০-র পাওয়ার প্লে-র মতো ব্যাটিং করছে?
সত্যি, অভিনেতা হিসেবে আমার সঙ্গে যা হচ্ছে তাকেই বোধহয় বলে ‘হ্যাভিং আ ড্রিম রান’। ভয়ও করছে এটা ভেবে যে, এই সময়টা ধরে রাখতে পারব তো? এত বছর ইন্ডাস্ট্রিটাকে খুব কাছ থেকে দেখে বুঝতে পেরেছি, সাফল্যটা ধরে না রাখতে পারলে সব বৃথা।
কখনও ভেবেছেন বব বিশ্বাসের সঙ্গে ঋত্বিক ঘটকের দেখা হলে কী হত?
(হেসে) ওরে বাপরে! ঋত্বিক ঘটক তো দেখলেই গালাগালি দিয়ে দিত বব বিশ্বাসকে। আর বব হয়তো বলত, “নমস্কার ঋত্বিকবাবু, এক মিনিট।” তার পরেই গুলি।
এই জুন মাসটাও তো আপনার জন্য স্পেশাল। ১৪ তারিখে ‘মেঘে ঢাকা তারা’ রিলিজ করছে, ২৮ তারিখে ‘C/O স্যার’। দু’টো ছবিতেই মুখ্য ভূমিকায় আপনি, শহর জুড়ে পোস্টার...
বাপরে, কী অদ্ভুত লাগছে পুরো শহরে আমার দু’টো ছবির পোস্টার দেখে। এ রকম জুন মাস তো এত বছরে আসেনি আমার জীবনে।
আচ্ছা, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় যে দিন প্রথম বলেন আপনাকে ঋত্বিক ঘটকের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে, ফার্স্ট রিঅ্যাকশন কী রকম ছিল আপনার?
বুঝতে পারিনি কী বলব। ভয় হচ্ছিল এটা ভেবে যে, এমন একটা মানুষের চরিত্র আমায় অফার করা হয়েছে, যার ব্যাপারে সেই রকম কোনও রেকর্ড নেই। আমার একমাত্র ভরসা ছিল ‘যুক্তি, তক্কো আর গপ্পো’। আর এ সবের বাইরে এই মানুষটা ছিল কন্ট্রোভার্সিয়াল, তাকে নিয়ে আজও রয়েছে নানা মিথ। সব মিলিয়ে ঘোরের মধ্যে ছিলাম।
|
|
‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবিতে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় |
ঘোর কাটল কী ভাবে?
কাটল যে দিন ডা. কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় আমাকে স্ক্রিপ্টটা শোনালেন। স্ক্রিপ্টটা শুনে প্রথম মনে হল, না, হোমওয়ার্কটা একেবারে ঠিক আছে। তখন একটু নিশ্চিন্ত হলাম।
আপনার বাবা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের কাছে কখনও ঋত্বিক ঘটকের কোনও গল্প শোনেননি?
না, বাবার কাছ থেকে তো শুনিনি। অকাদেমিতে যখন নাটক করতাম তখন কিছু গল্প শুনেছিলাম। বাবার কাছে সত্যজিৎ রায়ের অনেক গল্প শুনেছি, ঋত্বিকের নয়। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে আমার নিজেরই দু’বার দেখা হয়েছিল। এটা অনেকেই জানে না ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’য়ের ছোট ছেলের রোলটার জন্য উনি আমাকে চুজ করেছিলেন।
তার পর কী হল?
তার পর কী হবে? মা যেই জানতে পারল ছেলেকে সিনেমার অফার দেওয়া হয়েছে, মায়ের প্রথম চিন্তা ছিল স্কুল কামাই হবে। সেই বিকেলবেলায় আমার চুল কেটে দেওয়া হল। শ্যুটিং করা আর হল না আমার।
আচ্ছা, ‘মেঘে ঢাকা তারা’তে ঋত্বিক ঘটককে ফুটিয়ে তুলতে আপনি নাকি বিশেষ কিছু ম্যানারিজম ইনকর্পোরেট করেছেন?
হ্যা। আমি যেহেতু ওঁকে দেখিনি, তাই তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া পারিপার্শ্বিক জিনিস নিজের মতো ইন্টারপ্রেট
করে অভিনয় করেছি। যেমন, যাঁরা অত্যধিক মদ্যপান করেন, তাঁদের গ্যাস্ট্রিক পেন ও লিভারে ব্যথা হয়। আমার হাঁটাচলার, ওঠাবসার মধ্যে সেগুলো রেখেছি। খুব সাটল ভাবে করা হয়েছে। শকথেরাপির পর শুনেছি মানুষের পেটে একটা খিঁচ ধরে। সেটাও
একটা সিনে করেছি। অত বড় একজন মানুষ, অত বড় একজন পরিচালককে আমার বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য বলতে পারেন এই মুহূর্তগুলো।
শুনেছি আপনি নাকি ছবিটা করতে না চাইলে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় নিজেই রোলটা করতেন?
হ্যাঁ, হ্যা। কমলদা একশো পার্সেন্ট কোয়ালিফায়েড ছিল রোলটা অভিনয় করার পক্ষে। তবে দুর্দান্ত কিছু অভিনেতা পেয়েছি এই ছবিতে। অনন্যা, আবির, শুভাশিসদা, শান্তিদা। সব সময় বিশ্বাস করি সিনেমা একটা কালেকটিভ আর্ট। একজন কোনও মুহূর্তে খারাপ করলে সামগ্রিক ছবিতে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। এই ছবিতে আবিরও ব্রিলিয়ান্ট। আমার রোলটা খুব শক্ত ছিল, কিন্তু আমার তো অনেক কিছু করারও ছিল। আবিরের চরিত্রটার সেই রকম কিছু করার ছিল না। কিছু না-করার অভিনয় করাটা কিন্তু ভীষণ ডিফিকাল্ট। আবির সেটা ব্রিলিয়ান্টলি করেছে।
এত খাটলেন তা-ও তো জাতীয় পুরস্কার পেলেন না?
কার কাছে হারলাম, সেটা দেখুন। যখন শুনলাম ‘পান সিংহ তোমর’য়ের জন্য ইরফান খান পেয়েছেন, মনে মনে ভাবলাম যোগ্য লোকের কাছে হারলাম। (হেসে) পান সিংহ যে ভাবে ছুটে জাতীয় পুরস্কার নিয়ে গেল তার সামনে খুঁড়িয়ে চলা নীলকান্তের জেতার কোনও সুযোগই ছিল না। |
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
আচ্ছা, প্রসেনজিৎ, জিৎ, দেব-এর পাশাপাশি এই যে আপনি নায়ক আজকে, বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এই বিবর্তনটা কী ভাবে দেখেন আপনি?
ভাল তো। খুব ভাল। আজকাল তো খবরের কাগজে প্রায় রোজ টলিউডের খবর থাকে।
সেটাই কি কম চেঞ্জ, বলুন? টলিউড ইজ গোয়িং থ্রু ওয়ান অব ইটস বেস্ট ফেজ। আজকে যখন আপনি নায়ক, তখন আপনার কম্পিটিটর কে? দেব, না পরম?
আমি যে রকম ছবি করি তাতে অবশ্যই পরম। আমার আর পরমের ডাবল ফ্যান ফলোয়িং দেবের। কিন্তু কে কার কম্পিটিটর, সেটা বড় কথা নয়, আসল কথা হল দেবের ফ্যান, আমার ফ্যান, পরমের ফ্যান সবাই আসলে বাংলা ছবির ফ্যান। সেটাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিকে।
আচ্ছা, ‘কহানি’তে অত ছোট রোল করেও দর্শক আপনাকে বেশি মনে রাখল পরমের ইন্সপেক্টর রানার থেকে। সেটা নিশ্চয়ই ভাল লাগছে?
ডেফিনিটলি ভাল লাগছে। কিন্তু তার একটা কারণ আছে। ইন্সপেক্টর রানার মতো চরিত্র আমরা আগে দেখেছি। কিন্তু এমন একটা লোক যে খুন করে পাড়ার চায়ের দোকানে ভাঁড়ের চা খেতে পারে, সেই চরিত্রটা আমরা আগে দেখিনি। সেই জন্যই ববকে বেশি মনে রেখেছে মানুষ।
মাঝখানে একদিন বলছিলেন পরিচালনায় আসবেন।
ইচ্ছে তো আছেই। সেই রকম একটা সাবজেক্ট যা আমাকে এক্সাইট করছে এ বার সেটা বার করতে হবে। তবে আই ওয়ান্ট টু বি আ ডিরেক্টর।
আচ্ছা, একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। আপনাকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির কিছু অভিযোগ আছে।
কী রকম বলুন?
অনেকে বলছে পার্টিতে মদ খেয়ে নাকি আপনি মজা করে কিছু অভিনেতাকে গালাগালি করেন।
আমি জানি কোন পার্টির কথা আপনি বলছেন। আমি কোনও দিন জিজ্ঞেসও করতে যাইনি কে বলেছে, কারণ এইটুকু ইন্ডাস্ট্রি, যারা আমার নামে বলেছে কালকে সকালে হয়তো আমি তাদের সঙ্গে শ্যুটিং করব। এর থেকে আমি নিজেকেই সরিয়ে নেওয়া ঠিক মনে করেছি।
তার পর থেকেই কি আপনি পার্টিতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন?
হ্যাঁ, দিয়েছি। খুব চেনাশোনা মানুষের পার্টি না হলে আমি যাই-ই না। এর থেকে নিজের বাড়িতে আমার পছন্দের মানুষদের সঙ্গে পার্টি করা অনেক বেটার।
কিন্তু পার্টিতে আপনার কথাবার্তা নিয়ে ব্যাপারটা আরও কন্ট্রোভার্সিয়াল হয়ে যায় তার কারণ আপনি নাকি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের নকল করেছিলেন?
বুম্বাদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কী রকম তা বুম্বাদা জানেন, আমি জানি। যারা এই প্রশ্নটা তুলছেন তাদের আমি প্রশ্ন করছি, মানুষ নকল কাকে করে? কাকে করে নকল? এর বাইরে আমার কিছু বলার নেই।
শত্রু বেড়ে গিয়েছে বলুন আপনার?
তাই তো মনে হচ্ছে।
আচ্ছা, এমনিতে আপনার ফিমেল ফ্যান ফলোয়িং বিরাট। সেই লিস্টে লেটেস্ট নাম নাকি রাইমা সেন?
হ্যাঁ, আমি শুনেছি রাইমা আমার ফ্যান। সেটা অবশ্য রাইমা আমাকে বলেনি। আমাকে মুনমুনদি বলেছে। তবে ‘C/O স্যার’য়ে ওর সঙ্গে কাজ করে বুঝেছি, ছবিটা মুক্তির পর আরও চ্যালেঞ্জিং কিছু রোল অফার করা হবে রাইমাকে।
তা হলে ব্যাপারটা শেষ অবধি কী দাঁড়াচ্ছে, বাকি অনেক নায়ক রাইমার ফ্যান, কিন্তু রাইমা নিজে আপনার ফ্যান।
(হেসে) ইন্টারভিউটা এ বার কী রকম অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে না? |
|
|
|
|
|