পাশ করার পরে কলেজে পড়ার টাকা কী ভাবে জোগাড় হবে ভেবে বেজায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ টোটো সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের অনেকে। কারণ সকলেই প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা। কলেজে পড়তে গেলে হস্টেলে থাকা ছাড়া উপায় নেই। থাকা-খাওয়া, বই, টিউশনের খরচ কী ভাবে সামলাবেন ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ তিলে, বুনতে, আশ্রম আর রিমা টোটো এখন সরকারি সাহায্যের আশায় বসে রয়েছেন।
এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা নয় জন টোটো পড়ুয়ার মধ্যে দু’জন বাদে বাকিদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। কারও বাবা সামান্য জমিতে চাষাবাদ করেন। কেউ আবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পরে সংসারে কিছুটা সাহায্য করার জন্য ভুটানে দিনমজুরির কাজ করছেন। তবে সকলে কলেজে পড়ে স্নাতক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। টোটো পড়ুয়াদের সমস্যার খবর পেয়ে মঙ্গলবার মহাকরণ থেকে নিজের দফতরের আধিকারিকদের কাছে খোঁজ খবর করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন অনগ্রসর কল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। যাতে সকলে কলেজে ভর্তি হন। সে জন্য টোটোপাড়ায় কাজ করা তাঁর দফতর কর্মী ধনীরাম টোটোকে তা দেখার নির্দেশ দেন। |
উচ্চ মাধ্যমিকে সফল হওয়া টোটো ছাত্রছাত্রীরা। রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি। |
টোটো ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশেষ ভাবে সাহায্য করার দাবি উঠেছে। উপেনবাবু বলেন, “যাতে সকলে কলেজে ভর্তি হতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে।” টোটোপাড়ার বাসিন্দা অশোক টোটো জানান, বহু টোটো ছাত্রছাত্রীর পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। শুধু পড়াশোনা বা থাকা-খাওয়া বা বই বাবদ কিছু টাকা দিলে তাতে হবে না। সব রকম সহায়তা জরুরি বলে তিনি মনে করেন। সানি টোটোর ছেলে টিকে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছেন। তবে পরীক্ষার পর তিনি ভুটানে চলে যান। সেখানে তিনি দিনমজুরি করছেন। টিকের সঙ্গে ভুটানে কাজ করছে অপর এক উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র সুশীল। সানি টোটোর কথায়, “ছেলে কলেজে পড়তে চায়। পরিবারের অবস্থা ভাল নয়। খরচ সরকার বহন করলে ভাল হয়।” মাদারিহাট হাই স্কুল থেকে এবার কলা বিভাগে রিমা টোটো এবার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ২৮০। পড়াশোনার খরচ তুলতে তিনি গ্রামের কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে পড়ান। রিমার কথায়, “হস্টেলে থেকে আমি কলেজে পড়ব না। সংসার ও নিজের পড়াশোনার খরচ তুলতে আমি কচিকাঁচাদের পড়াব। সে জন্য সপ্তাহের এক আধ দিন কলেজে যাব। সরকার তো আর বাড়তি খরচ দেবে না।” |