উচ্চ মাধ্যমিকে ৮০-৮৫%
দুঃখের জোরেই দুঃখ জয়ের পরীক্ষা পাশ
জীবন ওঁদের জেদকে কুর্নিশ করেছে। বিরূপ প্রকৃতির কাছ থেকেও স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে ওঁদের মনের জোর। নিত্যসঙ্গী দারিদ্র ওঁদের এগিয়ে চলার পথ আগলে দাঁড়াতে পারেনি। প্রতিকূলতা জয় করে এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকে ওঁরা পেয়েছেন ৮০-৮৫ শতাংশের বেশি নম্বর। ওঁরা মানে সাগরদ্বীপের কালীপদ জানা, দুবরাজপুরের চিত্তরঞ্জন দাস, নামখানার প্রদীপ নস্কর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজপুরের প্রণব দত্ত।
উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা-তালিকায় পঞ্চম স্থানে থাকা শুভজিৎ ধাড়া এবং ষষ্ঠ স্থানে থাকা ইন্দ্রজিৎ সাউয়ের জীবনের প্রতি পদে বাধা। সেই বাধা ঠেলেই এগিয়ে চলেছেন ওঁরা। পিছিয়ে নেই কালীপদ, চিত্তরঞ্জন, প্রদীপ, প্রণবেরাও। বছর তিনেক আগে গলায় ক্যানসার হয়ে মারা গিয়েছেন সাগরের রুদ্রনগর গ্রামের বাসিন্দা কালীপদর বাবা। মা বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে যে-টাকা পান, তা-ই দিয়ে কোনও মতে সংসার চলে।

চিত্তরঞ্জন দাস

কালীপদ জানা

প্রণব দত্ত
চার বছর আগে আয়লায় ঘর নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কোনও রকমে এক চিলতে একটা ঘর হয়েছে। এখনও বৃষ্টি হলে বই-খাতা ঢেকে রাখতে হয় প্লাস্টিকে। কুপি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করেছেন কালীপদ। এ-সব তুচ্ছ করে ৪৪৩ পেয়ে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন বিজ্ঞানের এই পড়ুয়া। খুশিতে জল আসে মায়ের চোখে। বলেন, “ছেলের পড়াশোনায় সাহায্য করেছেন স্কুলের শিক্ষকেরাই।” পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষক হতে চান কালীপদ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনারই নামখানার দেবনগর মোক্ষদা দিন্দা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র প্রদীপ নস্কর উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছেন ৪২৩। বাবা রঞ্জিত মাটি কাটার কাজ করেন, মা বৃহস্পতি পরিচারিকা। দু’জনেই নিরক্ষর। মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে ফল বেরোনো পর্যন্ত অবসর সময়ে বাবার সঙ্গে মাটি কাটার কাজ করেছেন প্রদীপও। মজুরি বাবদ পেয়েছিলেন ছ’হাজার টাকা। তা থেকেই আবাসিক স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার খরচের একটা বড় অংশ এসেছিল। এ বার ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছে প্রদীপের। উচ্চ মাধ্যমিকে ইংরেজিতে ৮৪ পেয়েছেন তিনি। ছেলের পড়াশোনার জন্য ওই দম্পতি কুলতলির বাড়ি ছেড়ে গড়িয়ার পুলিশপাড়ায় ঘর ভাড়া নিয়ে আছেন। প্রদীপের কথায়, “স্কুলের মাস্টারমশাইয়েরা আলাদা করে ইংরেজি ও ভূগোল পড়িয়েছেন আমাকে। কিন্তু তার জন্য কখনও টাকা নেননি। মা এক কলেজ-শিক্ষিকার বাড়িতে কাজ করতেন। আমার পড়াশোনার জন্য তিনিও আর্থিক সাহায্য করেছেন। ওঁদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।”
বিজ্ঞান পড়ার ইচ্ছে থাকলেও আর্থিক টানাটানির কথা মাথায় রেখে কলা শাখায় পড়েই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দুবরাজপুরের হেতমপুর রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের চিত্তরঞ্জন দাস। মাধ্যমিকের ফল দেখে শিক্ষকেরা বিজ্ঞান পড়তে বলেছিলেন। কিন্তু বাবার আয় টেনেটুনে হাজার তিনেকের বেশি নয়। তাতে বিজ্ঞান পড়া সম্ভব নয়। ছাত্র পড়াতে শুরু করেন দুবরাজপুরের পছিয়াড়া গ্রামের চিত্তরঞ্জন। সঙ্গে চলত পড়াশোনা। পরিশ্রম বিফল হয়নি। তিনি পেয়েছেন ৪৩৫। চান শিক্ষক হতে।
শিক্ষক হতে চান দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজপুরের প্রণবও। দারিদ্র তাঁরও নিত্যসঙ্গী। দারিদ্রের সঙ্গে লড়েই মাধ্যমিকে রাজপুর বিদ্যানিধি হাইস্কুলে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকেও স্কুলে সকলের চেয়ে বেশি নম্বর, ৪১১ পেয়েছেন তিনি। মা জয়ন্তীদেবী বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজ করেন। বাবা মিঠুন দত্ত ঠিকা শ্রমিক। রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করে অধ্যাপক হতে চান প্রণব। তাঁর কথায়, “ছোটবেলা থেকে মাকে আমার জন্য কষ্ট করতে দেখেছি। সেটাই আমাকে পড়াশোনায় প্রেরণা জুগিয়েছে।”
কষ্টই প্রেরণা। সেই প্রেরণার জোরেই কষ্ট জয়ের যুদ্ধ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.