উন্নয়নের কাজের সঙ্গে যে সব সরকারি অফিসার যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের কোনও অবস্থাতেই পঞ্চায়েত ভোটে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাকরণ সূত্রের খবর, সম্প্রতি লিখিত ভাবেই প্রশাসনকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের উদ্দেশে নোট দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ভোট জরুরি, কিন্তু প্রতি দিনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাদ দিয়ে নয়। ফলে ভোট পরিচালনা করতে গিয়ে আগামী দু’মাস যেন সরকারের উন্নয়নের কাজ বাধাপ্রাপ্ত না হয়।
পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “যে ভাবে ধাপে ধাপে পর্যবেক্ষক চাওয়া হচ্ছে, তাতে সরকার কার্যত পঙ্গু হয়ে যাওয়ার জোগাড়। এক-একটি দফতরে সচিব ছাড়া বাকি সবাই পর্যবেক্ষকের কাজে যুক্ত হয়ে পড়ছেন। এ ভাবে দফতরের কাজ চালানোই মুশকিল।” মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এমনিতেই রাজ্যে প্রচুর আইএএস এবং ডব্লিউবিসিএস অফিসারের ঘাটতি রয়েছে। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত ভোটে বেশির ভাগ অফিসার ব্যস্ত হয়ে পড়লে রাজ্য জুড়ে প্রতি দিনের উন্নয়নের কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী যখন বলছেন, ভোটের কাজে চাইলেই অফিসার দেওয়া যাবে না, তখন মহাকরণের কাছে বার বার নির্দিষ্ট সংখ্যক অফিসার পর্যবেক্ষক হিসাবে চেয়ে পাঠাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ফলে অফিসারদের অবস্থা এখন ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’। এর মধ্যেই কলকাতা হাইকোর্ট সরকারকে নির্দেশ দিয়ে প্রয়োজনীয় পযর্বেক্ষক পাঠাতে বলেছে। সরকারি সূত্রের খবর, ৩৯৫ জন অফিসারের তালিকা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। আরও বেশ কিছু অফিসারকে ছাড়তে হবে ভোটের কাজে। রাজ্য পর্যবেক্ষক হিসাবে ৪৫০ জনের তালিকা পাঠিয়েছিল কমিশনে। তার মধ্যে ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস ও কমার্শিয়াল ট্যাক্সের ৫৫ জন অফিসারের নাম ছিল। কমিশনের আপত্তিতে ওই নামগুলি বাদ যায়। এ দিন আদালত আরও ৪০ জনের নাম পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে সরকারকে। সরকারও জানিয়েছে, তিন দিনের মধ্যে ওই তালিকা পাঠানো হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ওই নির্দেশের পরে প্রশাসনিক কর্তারা ভেবে পাচ্ছেন না, কাকে ওই তালিকায় রাখবেন, কাকে নয়। কারণ ঠিক করতে হবে, যে সব অফিসারের নাম পাঠানো হচ্ছে, তাঁরা উন্নয়নের কাজে যুক্ত নন। পর্যবেক্ষকদের তালিকা নিয়ে এ দিনই হাইকোর্টে অভিযোগ করেন নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল। প্রধান বিচারপতিকে তিনি জানান, এমন বহু নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে, যাঁদের নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা করার মতো কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। অথচ রাজ্য সরকার তাদের এই কাজের জন্য বেছে নিয়েছে! হাইকোর্টের বাইরে সরকারি আইনজীবী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওরা ৪০০ জন পর্যবেক্ষক চেয়েছিল, আমরা ৪৩২ জনের নামের তালিকা দিয়েছি। আরও চাইছে।” |