ঐক্যে কোচবিহার দৃষ্টান্ত, দলকে পরামর্শ বিমানের
সার্বিক বাম ঐক্যের উপরে ভর করেই এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের মোকাবিলা করার পরামর্শ দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। এবং এ বারের বাম ঐক্যের ক্ষেত্রে কোচবিহার জেলাই দৃষ্টান্ত বলে বিমানবাবুর মত। পাশাপাশিই দলের প্রতি তাঁর নির্দেশ, শাসক দলের হামলা উপেক্ষা করেও যাঁরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তাঁরা যাতে পরে প্রত্যাহার করে না নেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিনা লড়াইয়ে জমি ছেড়ে দেওয়া চলবে না।
উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক যথেষ্টই শক্তিশালী। ফব-র প্রস্তাব বহুলাংশে মেনে নিয়েই সেখানে পঞ্চায়েত ভোটের আসন-রফা হয়েছে। আলিমুদ্দিনে মঙ্গলবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে ‘নজিরবিহীন’ বাম ঐক্যের প্রসঙ্গে কোচবিহারের উদাহরণ টেনে এনেছেন বিমানবাবু। সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্য কমিটির প্রারম্ভিক ভাষণে রাজ্য সম্পাদক বলেছেন, ১৯৭৮ সালেও যা হয়নি, এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে তা-ই হচ্ছে। স্থানীয় স্তরে সামান্য কিছু সমস্যা বাদ দিলে সব জেলায় সার্বিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে বামফ্রন্টের মধ্যে আসন ভাগাভাগি হয়েছে। বৈঠকে এই সূত্রেই বিমানবাবুর মন্তব্য, কমল গুহ-চণ্ডী পালেরা অতীতে যা পারেননি, উদয়ন গুহ (প্রয়াত কমলবাবুর পুত্র তথা ফ ব-র জেলা সম্পাদক) এবং জেলার সিপিএম নেতারা এ বার সেই ঐক্য হাসিল করতে পেরেছেন। বিশেষত, কোচবিহারের দিনহাটা ব্লকের উদাহরণ ব্যবহার করেছেন বিমানবাবু। প্রসঙ্গত, দিনহাটা ফ ব-রই শক্ত ঘাঁটি এবং উদয়নবাবু সেখানকারই বিধায়ক।
বিভিন্ন জেলা থেকে এ দিন রাজ্য কমিটিতে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, বাম ঐক্য প্রায় সর্বত্রই সন্তোষজনক এবং তৃণমূলের হুমকি, হামলা, অপহরণ সত্ত্বেও বেশির ভাগ জেলাতেই গড়ে ৬৫ থেকে ৭০% আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া গিয়েছে। প্রথম দফায় যে সব জেলায় ভোট হওয়ার কথা, তার মধ্যে হুগলির প্রায় ৯টি ব্লকে অবশ্য বহু আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিস্থিতি নেই। তবে পঞ্চায়েতের প্রস্তুতি ঝালিয়ে নিতে রাজ্য কমিটির এক বেলার বৈঠকে সামান্য হলেও উঠে এসেছে সিপিএমের অন্তর্দ্বন্দ্ব। দলীয় সূত্রের খবর, বৈঠকের মধ্যেই ঈষৎ মনোমালিন্য হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার। বিমানবাবু অবশ্য তাঁর জবাবি ভাষণে কৌশলে রেজ্জাকের ক্ষোভ সামাল দিয়েছেন।
রেজ্জাক এ দিন বৈঠকে বলেন, গ্রামে গ্রামে দলের তৃণমূল স্তরের কর্মী-সমর্থকেরা মাটি কামড়ে তৃণমূলের সন্ত্রাসের সঙ্গে যুঝছেন। মাঝারি স্তরের নেতা-কর্মীরা (লোকাল ও জোনাল কমিটি স্তরের নেতৃস্থানীয়েরা) নিষ্ক্রিয় হয়ে ঘরে বসে আছেন। মাঠে নামার অভ্যাস তাঁদের হারিয়েছে। আর পলিটব্যুরো সদস্যেরা শুধু কলকাতায় বসে বক্তৃতা করলে হবে না বলে মন্তব্য করেন রেজ্জাক। কারণ, পঞ্চায়েত ভোটটা গ্রামে-গঞ্জেই হয়, কলকাতায় নয়! দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের নিরিখে রেজ্জাকের ওই মন্তব্যের লক্ষ্য ছিলেন মূলত বুদ্ধবাবু ও নিরুপম সেনই। দলের একটি সূত্রের খবর, রেজ্জাক বক্তব্য শেষ করার সময় বুদ্ধবাবু মঞ্চ থেকেই নিচু স্বরে বলেন, প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী যা বললেন, সেটা সাধারণ ছবি নয়। কোথাও কোথাও হয়তো এই সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। রেজ্জাক আবার বুদ্ধবাবুর উদ্দেশে পাল্টা বলেন, তিনি যা বলেছেন, ঠিকই বলেছেন!
পরে বিমানবাবু তাঁর জবাবে স্বীকার করেন, দলের মধ্যে একটি অংশ ছোট হলেও এখনও নিষ্ক্রিয়। ‘হাওয়ায় পার্টি হয় না’, এই কথা মনে রেখেই সকলকে কাজ করতে হবে। আর পলিটব্যুরো সদস্যেরা পরিস্থিতি বিচার করে এবং শরীর সুস্থ থাকলে (অর্থাৎ বুদ্ধবাবু) অবশ্যই গ্রামে গিয়ে দাঁড়াবেন। বিমানবাবু নিজেও যাবেন। পঞ্চায়েতে বড় জনসভার চেয়ে ছোট ছোট সভা এবং গ্রাম-বৈঠকের মতো এলাকাভিত্তিক প্রচারেই বেশি জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন রাজ্য সম্পাদক।
এরই পাশাপাশি রাজ্য কমিটির সিদ্ধান্ত, প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এ বারও ২১ জুন কলকাতায় অনুষ্ঠান হবে। জ্যোতি বসুর জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হবে ৮ জুলাই প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জন্মদিন থেকেই। এ ব্যাপারে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.