রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বায়না করা সুন্দরী মহিলাদের সঙ্গে তুলনা করে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যকে ঘিরে মঙ্গলবার বিতর্ক তৈরি হল কলকাতা হাইকোর্টে।
এ দিন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন বনাম রাজ্য সরকারের মামলার শুনানির সময়ে ওই বিতর্কিত মন্তব্য করেন বিমলবাবু। প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র এবং জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি চলছিল।
ওই মামলায় রাজ্য সরকারের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে বিমলবাবু বলেন, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা সুন্দরী মহিলাদের মতো। সুন্দরী মহিলারা যেমন প্রতি দিন এটা চাই, ওটা চাই বলে দাবি জানান, নির্বাচন কমিশনের আচরণ অনেকটা তেমনই। বিমলবাবুর আরও মন্তব্য, নির্বাচন কমিশনার বোধহয় ‘প্যারানোইয়া’ রোগে আক্রান্ত (চিকিৎসকদের মতে, প্যারানোইয়া এক ধরনের মনোরোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অকারণ সন্দেহ, উদ্বেগ, ঈর্ষা প্রভৃতির শিকার হন)।
অ্যাডভোকেট জেনারেলের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র অবশ্য জানান, তিনি এই ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ পছন্দ করেন না। বিমলবাবুকে প্রধান বিচারপতি এই জাতীয় শব্দ ব্যবহার করতে নিষেধ করেন।
নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী লক্ষ্মীচাঁদ বিয়ানি উঠে দাঁড়িয়ে বিমলবাবুর মন্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, সুন্দরী না কুৎসিত, এ সব নিয়ে আলোচনার করার জায়গা আদালত নয়। আদালতের নথি থেকে এই বক্তব্য বাদ দেওয়া হোক।
অ্যাডভোকেট জেনারেলের ওই মন্তব্যে এজলাসে উপস্থিত আইনজীবী, দর্শক, আদালতের কর্মীদের অনেকেই অবাক হয়েছেন। রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “আমি মন্তব্যটা নিজের কানে শুনিনি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলব না।” তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আইনের লড়াই অন্য জিনিস। তার সঙ্গে মহিলাদের জড়ানো ঠিক নয়। আদালতের ভিতরে-বাইরে সর্বত্র মহিলাদের সম্মান বজায় রাখা উচিত। আদালতে এমন সংস্কৃতি ভাবতেও পারছি না।” কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ এক মহিলা আইনজীবীর বক্তব্য, সুন্দরী মহিলারা সব সময় চাই-চাই করেন, এমন মন্তব্যে মহিলা সমাজকে আক্রমণ করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট জেনারেলের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
এজি-র মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে বিরোধী দলগুলিও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “তৃণমূল এমন সব লোককে প্রশাসনের দায়িত্বে এনেছে, যাঁরা সভ্য-ভদ্র ভাবে কথা বলতে জানেন না! মহিলাদের সম্মান করতে জানেন না। যে সরকারি কৌঁসুলি এ কাজ করেছেন, তাঁর পদত্যাগ দাবি করছি।” কংগ্রেসের বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার মতে, “এই মন্তব্য রাজ্য সরকারেরই মনোভাবের প্রতিফলন। কারণ,
তিনি রাজ্য সরকারেরই আইনি প্রতিনিধি।” ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে পথে নামবে মহিলা কংগ্রেস। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “মূল জিনিস (পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তা) থেকে নজর ঘোরাতেই এমন মন্তব্য। যাঁরা বলছেন, তাঁদের মানসিকতাই এর থেকে প্রকাশ পায়!” অ্যাডভোকেট জেনারেলের মন্তব্যের প্রতিবাদে তাঁকে সাসপেন্ড করার দাবি তুলেছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনও।
এ দিন অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্য একটি মন্তব্যকে ঘিরেও এজলাসে নতুন একটি বিতর্ক দানা বাধার উপক্রম হয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের খরচের টাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়, এজি জানান রাজ্য সরকার কমিশনের চাহিদা মতো ২০৮ কোটি টাকাই ধাপে ধাপে পাঠিয়ে দিয়েছে। এই সময় অশোকবাবু
হঠাৎ বলে ওঠেন, সরকারের টাকা অপচয় হচ্ছে কি না, তা-ও দেখা উচিত। মুখে স্পষ্ট করে না বললেও নির্বাচন কমিশন মামলায় যে টাকা খরচ করছে, সেই দিকেই ইঙ্গিত করেন অশোকবাবু। প্রধান বিচারপতি ওই সময় জানান, নির্বাচন কমিশনের খরচের তো অডিট হয়। কমিশনের আইনজীবী লক্ষ্মীচাঁদ বিয়ানি উঠে দাঁড়িয়ে প্রধান বিচারপতিকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের মামলায় আইনজীবী হিসাবে সমরাদিত্য পাল তাঁর পারিশ্রমিক বাবদ এক টাকাও নেননি। তিনি সংবিধান ও গণতন্ত্রের স্বার্থে এই মামলা লড়ছেন।
|