ডেল স্টেইনদের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নামার আগে টিম ইন্ডিয়ার প্রস্তুতি দুর্ধর্ষই হয়ে থাকল বলতে হবে। অস্ট্রেলিয়াকে ৬৫ রানে অলআউট করে ২৪৩ রানে ওয়ান ডে জিতছে ভারত, এমন ব্যাপার কেউ ‘বুক ক্রিকেটে’ও করার আগে দু’বার ভাববে। দীনেশ কার্তিক পরপর দু’টো প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করল। উমেশ যাদবকে বল হাতে অসাধারণ দেখাচ্ছে। এমএসডি-কেও দেখলাম চাপের মুখে নার্ভ ঠিক রাখতে কোনও অসুবিধেয় পড়ছে না। আশ্চর্যজনক ভাবে, ইংল্যান্ডের উইকেটে টার্নও পাওয়া যাচ্ছে!
এক দিক থেকে দেখলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নামার আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে ধোনির টিমকে অপ্রতিরোধ্য মনে হবে। স্কোরকার্ড দেখলে মনে হবে, কে হারাবে এদের? শ্রীলঙ্কাকে যারা অবলীলায় হারিয়েছে, অস্ট্রেলিয়া যাদের সামনে শেষ হয়ে যাচ্ছে মাত্র ৬৫ রানে সেই টিমের নিঃসন্দেহে ফাইনালে ওঠা উচিত। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকাও এই ভারতকে হারাতে পারবে কি?
ভাবনাটা আংশিক ঠিক। একটা কথা স্বীকার করতেই হবে যে, টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ধোনিদের আত্মবিশ্বাস একটা অন্য পর্যায়ে পৌঁছে গেল। কিন্তু যদি শুধু স্টেইনদের ম্যাচকে মাথায় রাখতে হয়, তা হলে কয়েকটা প্রশ্ন থাকবে। যার উত্তর এখনও নেই। |
ধ্বংসলীলা। এ বার শিকার ওয়াটসন। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি |
দক্ষিণ আফ্রিকা দু’টো জায়গায় বাকি টিমকে কয়েকশো মাইল পিছনে ফেলে দেয়। এক, ডেল স্টেইনের শুরুর ওভারগুলো। দুই, ডেথে দুধর্র্র্ষ ব্যাটিংয়ে। আর এই দুই প্রশ্নের উত্তর এখনও ভারতীয় টিম থেকে পেলাম না। অস্ট্রেলিয়াকে বিরাট ব্যবধানে ওড়ানোর পরেও নয়।
আমাদের ব্যাটিং লাইন আপ যদি দেখেন, তা হলে সবচেয়ে ‘উইক লিঙ্ক’ মনে হবে দু’জন ওপেনারকে। শিখর ধবন বা মুরলী বিজয় কাউকেই দু’টো প্রস্তুতি ম্যাচে স্বচ্ছ্বন্দ লাগল না। শরীরী ভাষায় গুটিয়ে থাকার একটা ব্যাপার দেখলাম। আসলে ভারত বেরিয়ে যাচ্ছে, দীনেশ কার্তিকের মতো অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা এক মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে পেয়ে যাওয়ায়। এ দিন ভারত তিনশো পেরোল কিন্তু কার্তিক আর ধোনির জন্য। তার আগে পাঁচ উইকেট পড়ে গিয়েছিল মাত্র ৫৫ রানে! প্রস্তুতি ম্যাচের ফর্ম দিয়ে চূড়ান্ত বিচার করাটা মূর্খামি হবে, কিন্তু এটাও ঠিক কে কতটা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে সেটা ওয়ার্ম আপ ম্যাচ থেকেই বোঝা যায়। স্টেইনের বিরুদ্ধে খেলার মুশকিলটা হচ্ছে, ওকে এক বার ঘাড়ে চেপে বসতে দিলে, ও স্রেফ শেষ করে দেবে। প্রথম থেকেই ও অফস্টাম্প লাইন ধরে সুইং করাতে শুরু করে। ড্রাইভে একটু ভুলচুক মানেই স্লিপ বা কিপারের হাতে ক্যাচ। বিজয়-ধবন যদি স্টেইনকে সামলে দিতে পারে, ভাল। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মহড়া নিতে নিশ্চিত ভাবে তখন বেকায়দায় পড়বে স্টেইনরা। কিন্তু প্রথম তিনটে উইকেট যদি চলে যায় তাড়াতাড়ি, চাপটা কিন্তু এসে পড়বে কার্তিকের উপর। |
যদিও ওকে যত দেখছি, মুগ্ধ হচ্ছি। কার্তিককে খুব কাছ থেকে দেখেছি বলেই জানি, নিজের প্রতিভা নিয়ে সন্দেহ ওর কোনও দিন ছিল না। কিন্তু এখন বয়সের সঙ্গে-সঙ্গে ও অনেক বেশি পরিণত হয়েছে। খেয়াল করলে দেখবেন, ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টিতে বোলাররা শর্ট অব লেংথে বল করতে বেশি পছন্দ করে। আর ডিকে ওই সব শর্ট অব লেংথকে পুল করে ফেলে দেওয়ায় মাস্টার। মিড উইকেট থেকে ফাইন লেগ যে কোনও জায়গায় ও শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিকে ফেলে দিতে পারে। আর একটা জিনিস আইপিএল থেকে ওকে করতে দেখছি। নেমেই ধুমধাড়াক্কা চালাতে যাচ্ছে না। প্রথম দশ বলে দশ রান তুলছে, পরের কুড়ি বলে চল্লিশ টার্গেট করছে। আর টি-টোয়েন্টিতে যদি এক বার আপনি ইনিংস তৈরি করাটা শিখে যান, ওয়ান ডে-তে সেটা করা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। আমার মনে হয় না, স্টেইন বা ফিলান্ডারদের সামলাতে ওর অসুবিধা হবে। কিন্তু বাকিরা? রায়না শর্ট বলের সামনে কী করতে পারে, সবাই জানে। রোহিত শর্মার ব্যর্থতা নিয়ে ভাবনাটা ছাড়া যায়। কারণ আমার মনে হয় না, ধোনি ওকে প্রথম এগারোয় রাখবে বলে। |
কার্তিক: ১৪০ বলে ১৪৬ অপরাজিত |
আর একটা দুশ্চিন্তা হচ্ছে, মঙ্গলবার ডেথ বোলিংটা করা গেল না বলে। মনে রাখবেন, এ’বি ডেভিলিয়ার্স আর ডেভিড মিলার থাকবে ডেথ ওভারে। আমার তো মনে হয়, গেইলের চেয়েও ডে’ভিলিয়ার্সকে বল করাটা বেশি কঠিন। ও আগে থেকে শট ঠিক করে নেয়। তার পর ফিল্ড বুঝে, যে কোনও জায়গা দিয়ে ফেলে দেয়। উমেশরা অস্ট্রেলিয়াকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু ডেথ ওভারে কী করবে, আন্দাজ পাওয়ার উপায় ছিল না। অস্ট্রেলিয়া তো পঁচিশ ওভারও টিকল না। যদিও ওরা ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা করেছে। নইলে ওয়াটসন কখনও সাতে নামে?
তাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নামার আগে ভারতকে এগিয়ে রাখব না। বরং সমান সমানে রাখব। শুধু দু’টো ব্যাপার ধোনির পক্ষে যাবে। ও টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জেনে যাচ্ছে ওর প্রথম এগারো কী হবে। মনে হয় এই টিমটাই খেলবে, শুধু রোহিত বাদে। আর একটা অ্যাডভান্টেজ কার্ডিফের উইকেট। যেখানে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটা হবে।
অশ্বিনের উইকেট নেওয়াটা টিভিতে দেখেছেন? কী রকম স্কোয়ার টার্ন করে ভোগসের স্টাম্প নড়িয়ে দিল? কেউ বলবে ম্যাচটা কার্ডিফে হচ্ছিল?
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ৩০৮ (কার্তিক ১৪৬ ন:আ:, ধোনি ৯১) অস্ট্রেলিয়া ৬৫ (যাদব ৫-১৮, ইশান্ত ৩-১১)। |