লক-আপে স্বামীর অপমৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবিতে পাশে পেয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্বকে। এ বার কংগ্রেসের টিকিটেই পঞ্চায়েত ভোটে লড়তে চলেছেন ধনেখালির তৃণমূল নেতা কাজি নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী মনুজা বিবি।
গত ১৮ জানুয়ারি ধনেখালির জয়রামবাটি গ্রামের বাসিন্দা নাসিরুদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে কিছু গোলমাল ছিল বলে জানিয়েছিল ধনেখালি থানা। মদ্যপ অবস্থায় পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, মারধরের অভিযোগও ওঠে নাসিরুদ্দিনের বিরুদ্ধে। লক-আপে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই তৃণমূল নেতা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনাকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয় রাজ্য রাজনীতিতে। অভিযোগ ওঠে, ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা নাসিরুদ্দিনকে বিধায়কেরই প্ররোচনায় পিটিয়ে মেরেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হয় কংগ্রেস। দলের নেতা আব্দুল মান্নান মনুজার বাড়ি এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর চৌধুরী ধনেখালিতে এসে সিবিআই তদন্তের দাবিতে সভাও করেন। একই দাবিতে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন মনুজা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে যান রাজ্যপালের দরবারে। |
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে রাজ্য সরকার অবশ্য আগেই ঘটনার তদন্ত-ভার দিয়েছিল সিআইডিকে। ধনেখালি থানার এক এএসআই এবং দুই কনস্টেবলকে গ্রেফতার করে সিআইডি। যদিও তদন্তের অগ্রগতিতে অখুশি হাইকোর্ট সিবিআইকেই মামলার দায়িত্ব দেয়। হাইকোর্টে রাজ্য সরকার ধাক্কা খাওয়ায় অক্সিজেন পেয়ে যায় কংগ্রেস। পঞ্চায়েত ভোটে মনুজাকে প্রার্থী করানোর চেষ্টা শুরু হয়। মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেন মনুজা। ধনেখালি ব্লকের সমসপুর ১ পঞ্চায়েতের ১৩১ নম্বর বুথের প্রার্থী হিসাবে ভোটে লড়বেন তিনি।
এ দিন সকালে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে চুঁচুড়ার জেলাশাসক দফতরে পৌঁছন মনুজা। হুগলি সদর মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দেন। সঙ্গে ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি দিলীপ নাথ। আব্দুল মান্নানের অভিযোগ, “মনুজারা অফিসে ঢুকে গেলে ওঁদের ভাড়াগাড়ির চালককে মারধর করে তাড়িয়ে দেয় তৃণমূলের লোকজন। পরে মনুজাকে দীর্ঘ ক্ষণ মহকুমাশাসকের কার্যালয় থেকে বেরোতে দেয়নি। পুলিশি প্রহরায় মনুজাকে বার করতে হয়।”
মনুজা বলেন, “সিপিএমের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করেও ১৯৯৮ সালে ধনেখালিতে তৃণমূলের জমি তৈরি করেছিলেন আমার স্বামী। আর এখন সেই তৃণমূলের জমানাতেই পুলিশের হাতে খুন হতে হল ওঁকে।” তাঁর অনুযোগ, “স্বামী চলে যাওয়ার পরে কোনও তৃণমূল নেতা তো আমার পাশে ছিলেন না। বরং কংগ্রেস নেতাদের পাশে পেয়েছি।” নিহত নেতার স্ত্রী-র সংযোজন, “স্বামীর মৃত্যুর বদলা নিতেই কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়ালাম।”
অসীমাদেবী বলেন, “এ বিষয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ যে কোনও দলের প্রার্থী হতে পারেন।” হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “নাসিরুদ্দিনের মৃত্যুর খবর পেয়ে দলের স্থানীয় নেতাদের পাঠিয়েছিলাম। আমরা পাশে দাঁড়াইনি এ কথাটা বোধ হয় ঠিক নয়।” |