পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন তোলাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ফের উত্তপ্ত আরামবাগ মহকুমাশাসকের অফিস চত্বর। তৃণমূলের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন বামেরা। পাশাপাশি তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীও নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই সংঘর্ষ থামাতে পুলিশকে এক দফা লাঠি চালাতে হয়। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৭ জন। তাঁদের আরামবাগ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীই আরামবাগ থানায় মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকাল থেকেই মহকুমাশাসকের দফতর চত্বরে তৃণমূলের দলীয় পতাকা লাগানো গাড়ি এবং মোটরবাইক বোঝাই করে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা জমায়েত হচ্ছিলেন। মহকুমাশাসকের অফিসে আসার সমস্ত রাস্তার মোড়ে মোড়েও ছিল জমায়েত। বেলা ১১টা নাগাদ গোঘাট থেকে মনোনয়নপত্র তুলতে এসেছিলেন পাঁচ জন ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মী। তৃণমূল কর্মীরা তাঁদের চা খেতে ডাকা মাত্র তাঁরা পালিয়ে যান। এসডিও অফিসের ২০০ মিটার দূরে খাদ্য দফতরের সামনে থেকে পিছন ফিরে দৌড়াতে দেখা যায় তাঁদের। |
দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ এসডিও অফিসের প্রধান ফটকের হাত দশেক দূরে গোঘাটের দুই তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন পাল ও শান্তিনাথ রায়ের অনুগামীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। শান্তিনাথবাবুর অভিযোগ, “দলের টিকিট পাওয়া বালি ও রঘুবাটি অঞ্চলের মোট চার জন মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন। সে সময় সিপিএম থেকে আমাদের দলে আসা কিছু দুষ্কৃতী ওই চার জনের তফসিলি শংসাপত্র ও মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দেয়। রুখে দাঁড়ায় আমাদের ছেলেরা। আমাদের দলীয় কর্মী কালীপদ মালিক-সহ জনা পাঁচেক আহত হয়েছে।” অন্য দিকে মনোরঞ্জন পালের দাবি, “মনোনয়ন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। ওরাই বরং দলের টিকিট পাওয়া প্রার্থীদের মনোনয়ন তুলতে বাধা দিচ্ছে। ওদের মারে আমাদের চকহরি গ্রামের কর্মী গালিব খান ও বালি গ্রামের উত্তম বাইরি আহত হয়েছেন। সমস্ত বিষয়টা জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”
সোমবার দুপুরেও মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরে দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারি হয়েছিল। এ ভাবে বারবার দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসে যাওয়ায় অস্বস্তি বাড়ছে হুগলি জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। হুগলি জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, “সমস্যাটি মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মনোনয়নপত্র জমা দিতে কাউকে বাধা দেওয়া যাবে না।”
দিনের তৃতীয় উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটে পৌনে তিনটে নাগাদ। আরামবাগের সিপিএম সাংসদ শক্তিমোহন মালিক দলের জোনাল কার্যালয় থেকে মাধবপুর, সালেপুর এবং গোঘাটের চার জন প্রার্থীকে নিয়ে মনোনয়নপত্র তুলতে আসার পথে তালতলা বাজার মোড়ে হামলার মুখে পড়েন। সাংসদের নিরাপত্তা রক্ষীর তৎপরতায় সাংসদ নিরাপদে থাকলেও তিন মহিলা এবং এক পুরুষ চড়-চাপড় থেকে রেহাই পাননি। সাংসদের অভিযোগ, “তৃণমূলের সোহরাব আলি লোকজন নিয়ে আমার পথ আটকায়। আমাকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করে। চার জনকে মারধর করে। মাধবপুরের শান্তি সরকার গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওঁরা কেউ আর মনোনয়নপত্র তোলেননি।”
সাংসদ মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানান। বিষয়টি জেলাশাসক, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনেও জানান শক্তিমোহনবাবু। মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় জানান, যাবতীয় অভিযোগ তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাচ্ছেন। তবে, এ দিন তৃণমূলের তরফেও সিপিএমের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের পাল্টা অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, তিরোল পঞ্চায়েতের মাদ্রা, পুইন ইত্যাদি কয়েকটি জায়গা থেকে মনোনয়নপত্র তুলতে আসার পথে তিন তৃণমূলকর্মীকে সিপিএমের লোকজন মারধর করেছে। |