জমি-আন্দোলন পর্বে প্রথম সারিতে থেকে লড়াই করেছেন। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠও ছিলেন সিঙ্গুরের তৃণমূল নেতা মানিক দাস। কিন্তু চাকরি দেওয়ার নাম করে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে মামলা চলছে তাঁর বিরুদ্ধে। যে প্রেক্ষিতে দলের এক প্রভাবশালী নেতাই সুপারিশ করেছেন, মানিকবাবুকে পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের আসনে টিকিট না দিতে।
গত বার পঞ্চায়েত ভোটে সিঙ্গুরে জেলা পরিষদ আসনে জিতেছিলেন মানিক। অন্য আসনগুলিতে টিকিট বিলি নিয়ে তাঁর সুপারিশ দলেও অগ্রাধিকার পেয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে। এ বার তিনি নিজেই টিকিট পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। মানিকবাবু এখন বলছেন, “সিঙ্গুর আন্দোলনের আমি সেই ছেলে, যার মাথায় সব থেকে বেশি মামলা ঝুলছে। আর আমাকেই কি না টিকিট দেওয়া হবে না!” জমি-আন্দোলন পর্বের দিনগুলির কথা উল্লেখ করে মানিকবাবু আরও বলেন, “শুধু আমি আন্দোলন করেছি তা নয়। আমার পরিবারও সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল সে সময়ে। আমার বৌদি পুলিশের অত্যাচারে পঙ্গু। আমার স্ত্রী জেল খেটেছেন।” টিকিট পেতে মরিয়া মানিক দলের উঁচুতলার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। হাতে আছে আজ, বুধবার, মাত্র একটা দিন। নির্ধারিত হতে চলেছে মানিকবাবুর রাজনৈতিক ভাগ্য। মানিকবাবু বলেছেন, “দিদি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আমার মায়ের মতো। দলের বিপক্ষে যায়, এমন কিছু করব না। ওঁর সিদ্ধান্তে আস্থা আছে।”
মানিক দাস |
কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক তথা কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নার ঘনিষ্ঠ বলেই এক সময়ে পরিচিত ছিলেন মানিক। কিন্তু জেলা তৃণমূল অন্দরের খবর, বেচারামবাবুর হাত এখন আর তাঁর মাথায় নেই। বেচারামই মানিকবাবুকে টিকিট না দিতে সুপারিশ করেছেন দলের কাছে। জানিয়েছেন, ‘অস্বচ্ছ’ ভাবমূর্তির কোনও নেতাকে টিকিট দেওয়া সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রীর এই নীতিতেই তিনি অনড় থাকতে চান। পাশে পেয়েছেন মানিক-বিরোধী শিবিরের লোকজনকে। সিঙ্গুরেরই আর এক তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্য নেতৃত্বই এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন।” একই বক্তব্য জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তের।
চাকরির নামে প্রতারণার অভিযোগে মানিকবাবুর বিরুদ্ধে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে এক সময়ে। নিজের ভাবমূর্তি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য? “পুরনো ব্যাপার। মামলাও হয়েছিল। ভোটের মুখে আমাকে প্যাঁচে ফেলতে এ সব প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে। ও নিয়ে যা বলার, দলকেই বলব। তা ছাড়া, বেচারামদা (মান্না) সব জানেন।” বেচারামবাবু অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
তবে টিকিট পেলে যে কোনও আসনে জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী মানিক। বললেন, “আমার যা জনপ্রিয়তা, যে কোনও জায়গায় জিতে আসব।” |