সম্পাদকীয় ২...
‘ভূল’
ক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি অধ্যাপক সাইমন হরোবিন বলিলেন, বানান লইয়া খুব কড়াকড়ির কোনও প্রয়োজনই নাই। একটি নির্দিষ্ট শব্দের অনেক রকম বানান প্রচলিত থাকিলে ক্ষতি কী? রসিকতা ছড়াইলেন, ‘সমাজ রক্ষার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্ব-কমা খুব জরুরি?’ মধ্যযুগে ‘through’ শব্দটির ৫০০ প্রকার বানান হইত, যাহার মধ্যে ছিল ‘drowgh’, ‘trowffe’, ‘trghug’, ‘yhurght’. এমন ভিন্ন ও বিচিত্র রূপে যদি এই একটিই শব্দকে সূচিত করা যায়, তবে ইদানীং কেহ ‘thru’ লিখিলে আমরা ‘গেল গেল’ হাঁক পাড়িব কেন? এমনকী they’re, their, এবং thereইহাদের যদি কেহ একই বানানে লেখে তাহা হইলেও মহা পাপ ঘটে না। জোর গলায় বলিলেন, ‘শুদ্ধ বানান মেধার দ্যোতক নহে।’ শুনিয়া প্রচুর হাঁ দৃশ্যমান হইয়াছে। বহু তালির শব্দও শুনা গিয়াছে। তালির গমক কিছু অধিকই হইবে।
স্বাভাবিক। বানান শিখিবার শ্রমের তুলনায় বানান না-শিখিবার ফাঁকির যে অপরিসীম স্বাচ্ছন্দ্য, তাহাকে অধিকাংশ মানুষ স্বাগত জানাইবেন, সন্দেহ কী। পৃথিবীর যে কোনও বিষয়েই অতি কঠোর অনুশাসন নিন্দার্হ। কিন্তু ভাষা-ব্যবহারে শিথিল-শৃঙ্খল মানিয়া লইবার মূল সংকট: ইহাতে আলস্য ও অমোনোযোগ ছাড়পত্র পাইয়া যায়। যে মানুষটি শ্রদ্ধাবান ও যে মানুষটি অ-নিবেদিত, তাহাদের মিছরিত্ব ও মুড়িগিরির পার্থক্য করিবার অতি গুরুত্বপূর্ণ মানসিকতা ধ্বংস হইয়া যায় এবং শ্রী ও সুবিন্যাসের এন্তেকাল ঘটে। অবশ্যই সাইমন বলিতেছেন না, ভাষা হইতে সকল নিয়ম তুলিয়া দাও। কিন্তু একটি শব্দের পাঁচশত বানানকে যদি তিনি মহিমান্বিত করেন, তবে অচিরেই এই উদ্ভট স্বাধীনতার হাত ধরিয়া যথেচ্ছাচার-বাবু গোঁফ চুমরাইয়া উদ্যানে ঢুকিয়া পড়িবেন এবং গোলাপ ছিঁড়িয়া খাইতে খাইতে বলিবেন, ‘ক্ষতি কী?’
বানান জানিলেই তাহার মেধা খুব বেশি, এই কথা অবশ্যই বলা যায় না। কিন্তু যে লোকটি বানান না জানিয়া ভাষার কারবার করিতেছে, তাহার যত্নের অভ্যাস যে বড় কম, সেই কথাটি বলা যায়। যদি নিজের কাজটি নিপুণ ও খুঁতহীন ভাবে করিবার তাগিদ না থাকে, তাহা কেবল ভাষা-প্রয়োগ নহে, চরিত্রেরও শিথিলতা নির্দেশ করে। মানুষকে বিব্রত করিবার ধর্ষকামী আহ্লাদে ব্যাকরণ রচনা করা হয় নাই। তাহা তৈয়ার হইয়াছে ভাষাটিকে ভাবের যথাযথতম বাহন রূপে গড়িয়া তুলিবার উদ্দেশ্যে, রীতি ও নীতি দ্বারা তাহার সৌষ্ঠব নিশ্চিত করিবার অভিপ্রায়ে। নিয়মের সৌন্দর্যকে রক্ষণশীলতার শাসন-ধ্বজা বলিয়া চালাইয়া দেওয়া সহজ, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তাহা সমীচীনতার, ন্যায্যতার সৌন্দর্য। সাধনাকে ইদানীং হুশ বলিয়া তাড়না করিবার প্রচলন ঘটিয়াছে। মানুষের মস্তিষ্কের আলস্যকে প্রশ্রয় দান, অক্ষমতাকে খিড়কির দুয়ার দিয়া পাত্তা-মঞ্চে তুলিয়া দিবার কাল আগত। সেই কারণেই বিদ্যা-মহল হইতে প্রাণপণে তাহার বিরুদ্ধ-শর যোজন করা উচিত। কিন্তু এই অধ্যাপক উলটা গাহিয়া এসএমএস ও টুইটারের জমানায় মনন ও চিন্তনের চাষকে আরও খর্ব করিয়া দিলেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.