সম্পাদকীয় ১...
প্রতিবাদী তুরস্ক
তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুলের তাকসিম স্কোয়ার কি ক্রমশ মিশরের তাহরির স্কোয়ারের প্রতিরূপ হইয়া উঠিতেছে? অন্তত বিগত এক সপ্তাহ ধরিয়া তুর্কি প্রধানমন্ত্রী এর্দোগান-এর একটি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যে গণ-আন্দোলন সমগ্র তুরস্কে ছড়াইয়া পড়িতেছে, তাহাতে তেমনই মনে হয়। প্রথমে এই বাগিচাটিতে অটোমান যুগের সামরিক ছাউনি পুনর্নির্মাণ করার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেবল পরিবেশপ্রেমীরাই প্রতিবাদ জানাইতেছিলেন। প্রতিবাদ উপেক্ষা করিয়া প্রধানমন্ত্রীর অনমনীয় জেদ ও চ্যালেঞ্জ অতি দ্রুত জনসাধারণকেও শামিল করিয়া তোলে। পুলিশি দমননীতি, লাঠি-চার্জ, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো জনগণকে ক্রুদ্ধ করে। বিক্ষোভ গোটা তুরস্কেই ছড়াইয়া পড়ে। বাম ও দক্ষিণ, তুর্কি ও কুর্দ সকলেই এখন বিক্ষোভে শামিল। এখন আর এই বিক্ষোভ কেবল একটি শহরের একটি অঞ্চলের পুনর্নির্মাণের প্রতিবাদে সীমিত নাই, তাহা একটি সামগ্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ ধারণ করিয়াছে।
সরকার বনাম জনসাধারণের এই দ্বন্দ্বের নেপথ্যে রহিয়াছে আসলে ইসলামপন্থা বনাম ধর্মনিরপেক্ষতার সংঘাত। কামাল আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষতার বীক্ষায় এখনও বহুলাংশে দীক্ষিত তুরস্কের জনসাধারণের একটি অংশ প্রধানমন্ত্রী এর্দোগানের দক্ষিণপন্থী শাসক দলের ইসলাম ও শরিয়ত পুনরুজ্জীবনের অপপ্রয়াস সুনজরে দেখেন না। তাহার উপর ২০১১ সাল হইতে রিসেপ তাইপ এর্দোগানের সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও ইন্টারনেটের উপর রকমারি নিয়ন্ত্রণ জারি করিতেছে, মদ্যপান, গর্ভপাত, টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ও অবাধ গণ-জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা বলবত্‌ করিতেছে। শাসক দলের সাংসদরা সমকামীদের অধিকারও ছাঁটাই করার পক্ষপাতী। এই রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়াশীলতার ধারাবাহিকতা রূপেই এর্দোগান অটোমান যুগের খিলাফতকে পুনরুজ্জীবিত করিয়া তুরস্কের ইসলামি গৌরব পুনরুদ্ধারে প্রয়াসী। দেশের মানুষের একটি বড় অংশ হয়তো তাঁহার সহিত আছেন। কিন্তু সমাজের উদারনৈতিক অংশ তাহা চাহেন না। তাঁহারা সংখ্যাগরিষ্ঠ কি না তাহা লইয়া প্রশ্ন থাকিতে পারে, কিন্তু বিক্ষোভ বা প্রতিবাদের গুরুত্ব সংখ্যায় পরিমাপ করা যায় না। তাকসিম স্কোয়ারে অটোমান সামরিক ব্যারাক পুনর্নির্মাণের বিরোধিতা এ কারণেই নিছক পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনের পরিধি অতিক্রম করিয়া বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের উপলক্ষ ও প্রতীক।
এর্দোগান স্পষ্টতই ইসলামি দুনিয়ার নৈতিক কর্তৃত্ব হাসিল করার অভিলাষী। অন্যথা ১৮০৬ সালে অটোমান খলিফাদের আমলে নির্মিত, ১৯২১ সালে আতাতুর্ক কর্তৃক স্টেডিয়ামে রূপান্তরিত এবং ১৯৪০ সালে ধ্বংস করিয়া দেওয়া তাকসিম সামরিক ছাউনির পুনর্নির্মাণ তাঁহার কাছে এত জরুরি হইত না। যে ভাবে তিনি জনবিক্ষোভ দমন করিতে সাঁজোয়া গাড়ি, ট্যাংক, সশস্ত্র পুলিশ ও আধা-সেনা নামাইয়া দিয়াছেন, তাহাতে বুঝা যায়, অতীত ইতিহাসের জের তাঁহার কাছে আধুনিক গণতন্ত্রের চাহিদা অপেক্ষা অধিক অগ্রাধিকার পায়। আরব বসন্তের দক্ষিণ বাতাস যখন মিশর সহ একাধিক মুসলিম রাষ্ট্রকে গণতন্ত্রের অভিমুখে চালিত করিয়াছে, তখন তুরস্কের মতো ধর্মনিরপেক্ষতার পথিকৃত্‌ একটি রাষ্ট্র ইসলামি অতীতের মায়ায় ফিরিতে উন্মুখ, ইহা দুর্ভাগ্যজনক। এই ঘটনার সবচেয়ে বড় অভিঘাত পড়িতে চলিয়াছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ পাইবার তুর্কি প্রচেষ্টায়। এই প্রয়াসের সাফল্য কিন্তু নির্ভর করিতেছে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার পরীক্ষায় তুরস্কের উত্তীর্ণ হওয়ার উপর। ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিরা বাইজেন্টিনীয় রোমানদের কাছ হইতে কনস্তান্তিনোপ্ল দখল করার পর হইতেই তাহার ইসলামি সভ্যতার ভরকেন্দ্র ইস্তানবুলে রূপান্তর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হইতেই ‘ইউরোপের রোগী’ তুরস্কের মর্যাদা, বৈভব ও প্রভাবের অবসান, কামাল আতাতুর্কের হাত ধরিয়া সেই তুরস্কের উত্থান ভবিষ্যমুখী, আধুনিক, ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র রূপে, ইসলামি বা শরিয়তি রক্ষণশীলতার পীঠস্থান রূপে নয়। এর্দোগান আতাতুর্কের পথ হইতে তুরস্ককে সরাইবার চেষ্টায় রত। অতএব প্রতিবাদ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.