|
|
|
|
|
সংসদেই নিদান চায় দলগুলি |
কংগ্রেসও তথ্য আইনের অধীন
হতে নারাজ, অস্বস্তি বিজেপিতে
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
|
অসন্তোষের গুঞ্জন বদলে গেল গুস্সায়। রাজনৈতিক দলগুলিকে তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় আনতে হবে বলে গত কাল রায় দিয়েছে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন। কাল এ নিয়ে মৃদু আপত্তি উঠলেও আজ কিন্তু কংগ্রেস-সহ জাতীয় স্তরের অধিকাংশ দলই ওই রায়ের বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করেছে। বাদ শুধু বিজেপি এবং সিপিআই। দু’ টি দলেরই বক্তব্য, সকলের জন্য প্রযোজ্য হলে রাজনীতিতে স্বচ্ছতা আনার এই পদক্ষেপে তারা আপত্তির কিছু দেখছে না। সিপিএম কিন্তু এর ঘোর বিরোধী।
তথ্যের অধিকার আইনি রূপ পেয়েছে ইউপিএ জমানাতেই। তাকেই এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তথ্য কমিশন ওই রায় দেওয়ার পরই কংগ্রেস মুখপাত্র শাকিল আহমেদ কাল জানান, এই রায়কে তাঁরা স্বাগত জানাচ্ছেন। কিন্তু রাতারাতি অবস্থান পাল্টে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য তথা প্রধান মুখপাত্র জনার্দন দ্বিবেদী আজ বলেন, “কংগ্রেস তথ্য কমিশনের রায়ের সঙ্গে সহমত নয়। এই রায় রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী।” এর সঙ্গে সুর মিলিয়ে সিপিএম, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, সংযুক্ত জনতা দলের মতো দলগুলি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে, তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে জবাব দিতে তারা বাধ্য নয়। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলি সরকারের অনুদানে চলা কোনও সংস্থা নয়।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে না গিয়ে সংসদের মাধ্যমেই সমাধানের পথে হাঁটতে পারে এই রাজনৈতিক দলগুলি। সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল এনে সেই ব্যবস্থা করা হতে পারে।
কিন্তু বিজেপি-সিপিআই কেন বাকি দলগুলি থেকে ভিন্ন অবস্থান নিচ্ছে? এ ব্যাপারে বিজেপি মুখপাত্র ক্যাপ্টেন অভিমন্যুর বক্তব্য, “আমরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার পক্ষে। আয়কর দফতর, নির্বাচন কমিশনকে আমরা এখনই সব তথ্য দিই। দেশের আইন যা হবে, আমরা তা মেনে চলব।” সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্তের যুক্তি, “আমরা যখন সরকারের স্বচ্ছতার দাবি করছি, তখন আমাদের নিজেদেরও স্বচ্ছতা থাকা উচিত। কারণ রাজনৈতিক দলগুলি শুধু যে সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার অনুদান নেয়, তা নয়। সরকারি জমিতে সম্পত্তিও তৈরি করে। কোনও দল বা তার নেতা কর্পোরেট সংস্থার থেকে চাঁদা নিয়ে তাদের কথায় কাজ করছে কি না, তা সবার জানা উচিত।”
কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের রায়ে বলা হয়েছে, পরোক্ষে হলেও জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক দলগুলি যেহেতু সরকারি সুবিধা ভোগ করে, তাই তথ্যের অধিকার আইন মোতাবেক জনগণের প্রশ্নের জবাব দিতে তারা বাধ্য। কমিশনের এ-ও বক্তব্য, রাজনৈতিক দল সরাসরি সরকারের অঙ্গ না হলেও তারা নানা ভাবে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার বা প্রয়োগের উপরে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। রাষ্ট্রের অন্য সব অঙ্গের জন্য স্বচ্ছতা জরুর হলে রাজনৈতিক দলগুলি তার ব্যতিক্রম হতে পারে না।
কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্বের আশঙ্কা, রাজনৈতিক দলগুলি তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় এলে মানুষ শুধু শুধু হিসেবনিকেশ চাইবে না, দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠক ও সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন করতে পারে। রাজনৈতিক দল সেই প্রশ্নের জবাব দেবে কেন? এই পরিপ্রেক্ষিতেই সরাসরি আপত্তি করার বদলে কৌশলী মন্তব্য করেছেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। তাঁর কথায়, “তথ্যের অধিকার আইনটির রূপায়ণ একটি বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চলছে। তাই বিতর্ক স্বাভাবিক। তবে এ ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলা দরকার।”
সিপিএম পলিটব্যুরো আপত্তি তুলেছে দু’টি বিষয়ে। এক, তথ্য কমিশনের সংগঠনের রায় কার্যকর হলে সাংগঠনিক গোপনীয়তা রক্ষা করা করা যাবে না। তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় চলে আসবে পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটির অভ্যন্তরীণ আলোচনাও। এতে দলের কাজে সমস্যা হবে। রাজনৈতিক ব্যবস্থাটাই লাটে উঠবে।
সিপিএমের দ্বিতীয় আপত্তি হল, “৬টি জাতীয় দলের টাকার বেশির ভাগটাই আসে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল থেকে” কমিশনের এই বক্তব্য ঠিক নয়। আর্থিক অনিয়ম আড়ালের জন্য যে সিপিএম এই রায়ের বিরোধিতা করছে না, তা স্পষ্ট করতে প্রকাশ কারাট এ দিন মনে করিয়ে দেন, আইনে বাধা না থাকা সত্ত্বেও তাঁর দল কর্পোরেট সংস্থাগুলির থেকেও চাঁদা নেয় না। সিপিএমও আয়ব্যয়ের ওই খতিয়ান জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেওয়ার পক্ষে। তবে বর্তমান ব্যবস্থাতেই রাজনৈতিক দলগুলি তাদের আয়ব্যয়ের খতিয়ান আয়কর দফতর ও নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেয়।
বিজেপি-র অরুণ জেটলি-ও মন্তব্য করেছেন, “রাজনৈতিক দলগুলি যে চাঁদা পায়, তার খতিয়ান এখনই নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়। ফলে নতুন যে প্রস্তাব এসেছে, তাতে পরিস্থিতির আহামরি কোনও বদল হচ্ছে না। এখন যা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হচ্ছে, সেটাই তথ্য জানার অধিকারের আইনের আওতায় দেওয়া হবে। তবু বিষয়টি নিয়ে আরও ব্যাপক আলোচনা হওয়া দরকার।”
প্রকাশ্যে রায়কে স্বাগত জানালেও বিজেপি-র অন্য শীর্ষ নেতারাও নেতৃত্বও মনে করছেন, সরকারি ক্ষেত্রের গণ্ডি পেরিয়ে বেসরকারি পরিসরেও তথ্য জানার অধিকার আইন বলবত হবে কি না, তা বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে আলোচনা দরকার। তা হলে আরও অনেক ক্ষেত্র এর আওতায় চলে আসবে। তথ্য জানার অধিকার আইন যাতে বিরোধী শিবিরের হেঁসেলের খবর জানার হাতিয়ার হয়ে না ওঠে, তা নিয়েও সতর্ক থাকার পক্ষপাতী তাঁরা।
সিপিএমের অবস্থান ও বিজেপি নেতাদের মন্তব্য কংগ্রেসকে খানিকটা অক্সিজেন জুগিয়েছে। কংগ্রেস সূত্রে এ-ও দাবি করা হচ্ছে, প্রকাশ্যে বিজেপি তথ্য কমিশনের রায়কে স্বাগত জানালেও তলে তলে তারাও খুশি নয়। এ নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে বলে দাবি করেছেন কংগ্রেস নেতারা। তথ্যের অধিকার আইন পাশ করানোর পর থেকে এ ব্যাপারে বারবার রাজনৈতিক কৃতিত্ব দাবি করেছে কংগ্রেস। এখন সেই কংগ্রেসই তথ্য কমিশনের রায়ের বিরোধিতা করায় দলে প্রশ্ন উঠছে, এতে জনমনে ভুল ধারণা তৈরি হবে না তো? কংগ্রেসের এক নেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, “এটা ঠিকই দুর্নীতি প্রশ্নে এখন সব থেকে বেশি সমালোচনার মুখে পড়েছে কংগ্রেসই। কিন্তু অধিকাংশ রাজনৈতিক দল যেহেতু কমিশনের রায়ের বিরোধিতা করছে, তাই কংগ্রেসের একার ওপর দায় চাপবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে দলগুলি এ নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নামার পক্ষপাতী নয়। সংসদের মাধ্যমেই তারা এর প্রতিকার চাইতে পারে। তার ইঙ্গিত দিয়ে ডান-বাম একাধিক রাজনৈতিক নেতা আজ বলেন, “প্রতিকারের অস্ত্র যখন আমাদের হাতেই রয়েছে, তখন আদালতে যাব কেন?” |
পুরনো খবর: তথ্য আইনের আওতায় এ বার সব দল |
|
|
|
|
|