স্বাগত কংগ্রেসের, ভিন্নমত বিজেপি
তথ্য আইনের আওতায়
এ বার সব দল
রোক্ষে হলেও রাজনৈতিক দলগুলি যে হেতু সরকারি সুবিধা ভোগ করে, সে হেতু তথ্যের অধিকার আইন মোতাবেক জনগণের প্রশ্নের উত্তর দিতে তারা ব্যধ্য বলে জানিয়ে দিল কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন। কংগ্রেস, বিজেপি-সহ যে ছ’টি দলের বিরুদ্ধে কমিশনের কাছে আর্জি জমা পড়েছিল, তাদের আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে মুখ্য তথ্য আধিকারিক এবং ঊর্ধ্বতন আপিল কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তথ্যের অধিকার আইনে নিজের থেকে তথ্য ঘোষণার যে ধারা রয়েছে তা মেনে ওই দলগুলিকে তাদের ওয়েবসাইটে তথ্য ঘোষণার নির্দেশও দিয়েছে কমিশন।
রাজনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত করার কাজে তথ্য কমিশনের এই রায় অনেকটাই সাহায্য করবে বলে আশাবাদী নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা। রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। যেমন, কংগ্রেস রায়কে স্বাগত জানালেও নির্বাচন কমিশনের কোর্টে বল ঠেলেছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। রায় খতিয়ে দেখে তবে মন্তব্য করা হবে বলে জানিয়েছে অন্য অনেক দল।
তথ্য কমিশনের আজকের রায়ের মূলে তথ্যের অধিকার আন্দোলনের কর্মী সুভাষ অগ্রবাল ও অনিল বাইরওয়ালের দায়ের করা আর্জি। কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম, সিপিআই, এনসিপি এবং বিএসপি এই ছয় দলের কাছে তাদের আর্থিক অবস্থা, দান হিসেবে পাওয়া অর্থের পরিমাণ, অর্থদাতাদের নাম-ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য জানতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দলগুলি এই সব তথ্য জানাতে অস্বীকার করে। দলগুলির তরফে জানানো হয়, তারা তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় পড়ে না।
এই যুক্তি মানতে নারাজ অগ্রবাল কমিশনে তাঁর সওয়ালে বলেন, দলগুলিকে পরোক্ষ ভাবে আর্থিক সহায়তা দেয় কেন্দ্র। দলগুলি জনস্বার্থে কাজ করে। সংবিধান এবং আইনেও তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। সুতরাং, তারা তথ্য জানানোর দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
সেই যুক্তি মেনে নিয়েছে মুখ্য কমিশনার সত্যানন্দ মিশ্র, কমিশনার এম এল শর্মা ও অন্নপূর্ণা দীক্ষিতের বেঞ্চ। বেঞ্চ বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলি দিল্লির অভিজাত এলাকায় কম দামে বড় জমি পায়। তাদের হাতে রয়েছে বিশাল বিশাল সরকারি বাসভবন। আয়করের ক্ষেত্রেও ছাড় পায় তারা। নির্বাচনের আগে অল ইন্ডিয়া রেডিও ও দূরদর্শনে নিখরচায় প্রচারের সুযোগও আছে। তাই দলগুলি যে নানা ভাবে সরকারি আর্থিক সুবিধা ভোগ করে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। পাশাপাশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে তারা জনগণের জীবনধারা নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের সাংবিধানিক অধিকার এবং দায়িত্বও রয়েছে। ফলে সব রাজনৈতিক দল সরকারি কর্তৃপক্ষের সমতুল্য। কমিশনের কথায়, “রাজনৈতিক দল সরাসরি সরকারের অঙ্গ নয়। কিন্তু, তারা নানা ভাবে সরকারি ক্ষমতার ব্যবহারের উপরে প্রভাব বিস্তার করে। তাই রাষ্ট্রের অন্য সব অঙ্গের জন্য স্বচ্ছতা প্রয়োজনীয় হলে রাজনৈতিক দলও তার ব্যতিক্রম হতে পারে না।”
প্রথমে তথ্যের অধিকার আইনের আওতার আসার বিপক্ষে ছিল সব দলই। কিন্তু, আজ এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন কংগ্রেস মুখপাত্র শাকিল আহমেদ। কিছুটা ভিন্ন সুর বিজেপি-র। বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভির বক্তব্য, “এখন দলগুলি নিজেদের সম্পত্তির পরিমাণ ও অন্যান্য তথ্য নির্বাচন কমিশনকে জানায়। তথ্য কমিশনকে সেই তথ্য জানানো হবে কি না তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নির্বাচন কমিশনেরই।” তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তথ্য কমিশনের নির্দেশ খতিয়ে দেখে প্রতিক্রিয়া জানাবে দল।
বিষয়টি নিয়ে দলে আলোচনার পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে অবস্থান জানাবে সিপিএম-ও। তবে দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, তাঁরা বরাবরই তথ্যের অধিকারের আইন জোরদার করার পক্ষে। দলগুলি যে বিভিন্ন উপায়ে সরকারি সুবিধা পায় তা-ও মেনে নিচ্ছেন তাঁরা। তবে তথ্যের অধিকার আইনে দলের গোপন আলোচনার কথা জানতে চাওয়া হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা-ও বিবেচনা করা উচিত বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকের মতে, এখন দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত প্রবল। তাই মনে উষ্মা থাকলেও এখনই তথ্য কমিশনের নির্দেশের বিরুদ্ধে সরব হতে চাইছে না কোনও দল। তবে বড় দলগুলি মোটের উপরে হিসেব বজায় রাখে। তাই তাদের বিশেষ অসুবিধা হবে না বলে ধারণা অনেকেরই। কিন্তু, ছোট দলগুলি অসুবিধায় পড়তে পারে। তবে আইনের ফাঁকও আছে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ২০ হাজার টাকার কম অনুদানের ক্ষেত্রে হিসেব রাখার দরকার হয় না। রাজনৈতিক দলগুলি সেই নিয়মের সুযোগ নিয়ে আয়ের উৎস না-ও জানাতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.