সিপিএম নেতা ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় হত্যায় অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী বলে চার্জশিটে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা বিকাশ চৌধুরীকে মঙ্গলকোট থেকে জেলা পরিষদে টিকিট দিল দল। মঙ্গলবার কাটোয়া মহকুমাশাসকের দফতরে বিকাশবাবু মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
২০০৯ সালের ১৫ জুন মঙ্গলকোটের খেঁড়ুয়া গ্রামের কাছে লালবাবু আশ্রমের সামনে খুন হন সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়। ১১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলকোটের তৎকালীন ওসি জ্ঞানপ্রসাদ সাউ কাটোয়া মহকুমা আদালতে চার্জশিট জমা দেন। মঙ্গলকোট থানার তদন্তকারী অফিসারেরা তৃণমূলের বর্ধমান জেলার অন্যতম সম্পাদক বিকাশ চৌধুরীকে সিপিএম নেতা খুনে অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অভিযুক্ত করে। সম্প্রতি আদালতে ওই খুনের মামলার চার্জ গঠনও হয়েছে।
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলে রয়েছেন মঙ্গলকোটের মাজিগ্রামের বাসিন্দা বিকাশবাবু। জেলা পরিষদের ৫০ নম্বর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। মঙ্গলকোটে তিনটি জেলা পরিষদের আসনের মধ্যে দু’টিই সংরক্ষিত। ফলে ৫০ নম্বর আসনের দাবিদার ছিলেন তৃণমূলের অনেক নেতাই। মঙ্গলকোট ব্লক নেতৃত্ব বিকাশবাবু ছাড়াও তিন জনের নাম জেলা কোর কমিটির কাছে পাঠিয়েছিল। গত শনিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সঙ্গে আলোচনার পরে তৃণমূল বিকাশবাবুর নাম ঘোষণা করে।
তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “সিপিএম সেই সময়ে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়েছিল। অভিযোগ থাকলে প্রার্থী হওয়া যাবে না, এমন তো কোনও নিয়ম নেই।” তৃণমূল কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের নিহত হওয়ার ঘটনাটি বিচারাধীন। কিছুদিনের মধ্যেই ২১ জন সাক্ষীর শুনানি শুরু হওয়ার কথা। এই অবস্থায় বিকাশ চৌধুরীকে প্রার্থী করা দলের পক্ষে ঝুঁকি হয়ে গেল বলে তাঁরা মনে করছেন। তৃণমূলের যুব নেতা দেবকুমার ধারা এবং মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “মঙ্গলকোট ব্লকের তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতা-কর্মী বিকাশদার হাতে তৈরি। দল তাঁকে প্রার্থী করায় আমরা খুশি।” জেলা পরিষদ হাতে এলে বিকাশবাবুকে কর্মাধ্যক্ষ করার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তৃণমূল সূত্রের খবর।
পুলিশ জানায়, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় খুনে তিন জনকে মূল অভিযুক্ত এবং ২১ জনকে ষড়যন্ত্রকারী বলে চার্জশিটে দিয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসারেরা। ষড়যন্ত্রকারীদের তালিকায় পাঁচ নম্বরে নাম রয়েছে বিকাশবাবুর। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ বি এবং ৩৪ নম্বর ধারা ছাড়াও অস্ত্র আইনের ২৫ ও ২৭ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ কাটোয়া আদালতে চার্জশিট পেশ করার সময়ে বিকাশবাবু ‘পলাতক’ ছিলেন। বেশ কয়েক মাস পরে হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিনে ছাড়া পান। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, বিধানসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী অপূর্ব চৌধুরীর বিরোধিতা করেছিলেন বিকাশবাবু। কিন্তু জেলা পরিষদে বিকাশবাবুকেই প্রার্থী করার জন্য অপূর্ববাবু নাম প্রস্তাব করেছেন।
সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সর বলেন, “এ সব অভিযুক্তকে প্রার্থী করে তৃণমূল আসলে সন্ত্রাসকেই প্রশয় দিচ্ছে।”
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, পূর্ব মঙ্গলকোটের ৫০ নম্বর আসনটি কংগ্রেস প্রভাবিত। জেলার কোর কমিটিতে সুপারিশ হওয়া নামগুলির মধ্যে বিকাশবাবুর পরিচিতি ও কংগ্রেসের সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ থাকায় দল তাঁকে প্রার্থী করেছে। তিনি প্রার্থী হওয়ায় ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূলেরাও মাথা চাড়া দিতে পারবে না বলে দলের আশা। এ দিন সাদা পাঞ্জাবি, শান্তিনিকেতনি ব্যাগ কাঁধে মনোনয়ন দাখিল করে বিকাশবাবু দাবি করেন, “সিপিএম আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়েছিল। এলাকার মানুষ যে সিপিএমের অভিযোগ বিশ্বাস করেন না, এ বার তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
|