বিভিন্ন জায়গায় মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও অশান্তি এড়ানো যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার দুপুরেই রানিগঞ্জে পরিত্যক্ত খনিতে মিলেছে তৃণমূল কর্মীর মৃতদেহ। মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে বর্ধমানের রায়নার সিপিএম প্রার্থীদের। জেলাশাসক ওঙ্কারসিংহ মিনার সঙ্গে দেখা করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে বিজেপি।
সোমবার রাত থেকেই নিখোঁজ ছিলেন রানিগঞ্জের এগরা পঞ্চায়েতের নারায়ণকুড়ির বাসিন্দা তৃণমূলের মাধাই বাউরি (৩৫)। মঙ্গলবার সকালে গ্রামেই একটি পরিত্যক্ত খোলামুখ খনিতে তাঁর দেহ মেলে। তাঁকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগে সঞ্জয় প্রসাদ নামে এক কর্মী-সহ সিপিএমের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার দাবি করেন, “তৃণমূল কর্মীরাই আমাদের লোকজনের বাড়ি আক্রমণ করেছিল। গ্রামবাসীরা তার প্রতিরোধ করে। মাধাই বাউড়ি প্রতিরোধকারীদের মধ্যে ছিলেন কি না, তিনি আদতে কাদের লোক তা দেখুক পুলিশ।” |
সিপিএমের রানিগঞ্জ জোনাল সম্পাদক রুনু দত্তের অভিযোগ, যাতে কেউ তাঁদের প্রার্থী হওয়ার সাহস না দেখায়, তার জন্য সোমবার রাতে বাউরিপাড়ায় সিপিএম কর্মী স্বজন বাউড়ি ও গণেশ বাউড়ির বাড়িতে তৃণমূল কর্মীরা চড়াও হয়। স্বজনের পরিবারের লোকজনকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বোমাবাজিও করা হয়। গণেশকে প্রার্থী হলে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায় তারা। পরে পুলিশ গণেশ ও স্বজনকেই গ্রেফতার করে। রানিগঞ্জ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সেনাপতি মণ্ডলের পাল্টা দাবি, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী শিল্পী মণ্ডলের বাড়িতে ও কর্মী দিলীপ মণ্ডলের দোকানে সিপিএম নেতা অজয় প্রসাদ, সঞ্জয় প্রসাদদের নেতৃত্বে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। তাঁদের অনন্ত মণ্ডল ও বাবলু গোপ জখম হন। তাদের আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তখন থেকেই মাধাইবাবুকে পাওয়া যাচ্ছিল না। সোমবার রাতে দলের পক্ষে অনন্তবাবুই রানিগঞ্জ থানায় সিপিএমের ১০ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মাধাই বাউরির নামে নিখোঁজ ডায়েরিও করেন।
পরে অবশ্য পুলিশ সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে সেনাপতিবাবুর ছেলে দু’জনকে গ্রেফতার করে। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী তথা শিল্পাঞ্চলের বিধায়ক মলয় ঘটক অবশ্য দাবি করেন, “বাপি নির্দোষ। আমাদের লোকেরা একতরফা মার খেয়েছে।” এ দিন দুপুরে জনতার দাবিতে কুকুর নামিয়ে নারায়ণকুড়িতে তদন্ত করে পুলিশ। মাধাইয়ের দেহ মিললে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে তৃণমূলের নেতৃত্বে মৃতদেহ আটকে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। পরে আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় গেলে বিক্ষোভ ওঠে। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশ চাডিয়া জানান, মাধাইয়ের দেহ মেলার পরে সিপিএমের ধৃত দু’জনকেও অপহরণ করে খুনের মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। মাধাইয়ের বাবা দিবাকর বাউরি ও স্ত্রী সুলেখাদেবী দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।
এ দিনই অমলবাবু অভিযোগ করেন, “বর্ধমান উত্তর মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন দিতে এলে আমাদের রায়না-২ ব্লকের কয়েক জন প্রার্থীকে মারধর করা হয়েছে। |
রানিগঞ্জের দুই চিত্র |
|
|
ভাঙচুর করা হয়েছে সিপিএমের স্বজন বাউরির বাড়ি। |
মৃত মাধাই বাউরির শোকার্ত আত্মীয়া। |
|
১৫ দিন আগে যাঁরা জাতিগত শংসাপত্রের জন্য আবেদন করেছেন, তাঁদের শংসাপত্র এত দিন ব্লক আনিয়ে দিচ্ছিলেন মহকুমাশাসকেরা। কিন্তু এ দিন আমাদের ২১ জন প্রার্থীকে বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমাশাসক জানিয়ে দেন, তিনি শংসাপত্র আনাতে পারবেন না। প্রার্থীদের নিজেদেরই ব্লক অফিস থেকে আনতে হবে। পরপর তিন দিন ওই নথি আনতে গিয়ে মার খাওয়া এই ২১ জনের পক্ষে আর মনোনয়ন জমা দেওয়া সম্ভব হবে না বলেই আমাদের আশঙ্কা।” দক্ষিণ মহকুমাশাসক অরুণকুমার রায় বলেন, “আমার কাছে শংসাপত্র চলে আসে। সেগুলি আমি সই করে ফের ব্লকে পাঠাই। প্রার্থীদের শংসাপত্র আমি কোনও দিনই আনাইনি।”
বিজেপির জেলা সম্পাদক দেবীপ্রসাদ মল্লিক আবার জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেন, ২৯ মে থেকে ২ জুন পরপর চারবার মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা। পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বিজেপি-র জেলা সভাপতি রাজীব ভৌমিকের অভিযোগ, “সোমবার ৫৬ জন তৃণমূলের ভয়ে কালনা ২ ব্লকে মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি।” তবে তাঁদের অনেকেই আজ মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। সোমবার রাতে কংগ্রেসও নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিল, তৃণমূলের কর্মীরা তাদের থেকে মনোনয়ন সংক্রান্ত নথি ছিনিয়ে জলে ফেলে দিয়েছে। কালনা ২ তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায় অবশ্য দাবি করেন, “ওরা মিথ্যা বলছে। কালনা ২ ব্লকে ওদের ক্ষমতা নগণ্য।” মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠি বলেন, “প্রার্থী দিতে পারছে না বলে কোনও দল আমার কাছে লিখিত অভিযোগ জানায়নি। তবে প্রার্থীরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে আমার কার্যালয়ে এসে মনোনয়ন দাখিল করতে পারেন।’’ |
জেলাশাসকও জানান, এ দিন মনোনয়নে বাধার কোনও অভিযোগ তাঁর কাছে আসেনি। ৪ জুন পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ৯৯৮৭টি, পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ১৯৫৫টি ও জেলা পরিষদ স্তরে ২৭৫টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। মঙ্গলবার ওই তিন স্তরে যথাক্রমে ১৭৫৫, ৪৯৯ ও ১৪৭টি মনোনয়ন জমা পড়ে। এ দিনই আসানসোলের সালানপুর ব্লকে ৭৫টি ভোটগ্রহন কেন্দ্রকে স্পর্শকাতর ঘোষণার দাবি তুলেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। সিপিএমের বারাবনি জোনাল সম্পাদক সিপিএমের অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য শ্যামল মজুমদারের অভিযোগ, তৃণমূল তাঁদের প্রার্থীদের ‘প্রচ্ছন্ন হুমকি’ দিচ্ছে। প্রশাসনের আশ্বাস, নির্বাচন কমিশন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
|