মাটির দেওয়াল, ভাঙা ঘর। সেখানেই কোনও রকমে পড়াশোনা করে মাধ্যমিকে ৫৬৫ নম্বর পেয়েছে দুর্গাপুরের সুমন কর্মকার। গ্রেড হিসেবে এ প্লাস। বাবা বর্তমানে বেকার। সেলাইয়ের কাজ করে কোনওরকমে সংসার চালান মা। তার মধ্যেই লড়াই করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে সে।
বেনাচিতির রামকৃষ্ণপল্লি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের এই পড়ুয়ার ঠিকানা সি-জোন কলোনি সংলগ্ন বস্তিতে। ভাঙা
|
সুমন কর্মকার।
—নিজস্ব চিত্র। |
ইট-মাটির দেওয়াল। মাথায় অ্যাডবেস্টাসের চাল। বাবা মৃত্যুঞ্জয় কর্মকার বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঠ কিনে এনে বিক্রি করতেন। বছর পাঁচেক আগে একটি দুর্ঘটনায় হাতে পায়ে গুরুতর চোট পান তিনি। তারপর থেকে কাজ হারিয়ে বাড়িতে বসে আছেন তিনি। সুমনের মা সুজাতাদেবী ছিলেন গৃহবধূ। কিন্তু স্বামীর রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন বাড়িতে। তিনি জানান, বিভিন্ন দোকান থেকে কাজ চেয়ে এনে তা সম্পূর্ণ করে দিয়ে আসেন। সেই রোজগারেই চলছে সংসার। ছেলে মেয়ের পড়ার খরচ। সুমনের বোন সঞ্চিতা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।
ছোটবেলা থেকেই দৌড়-ঝাঁপ করতে ভালবাসে সুমন। এক বার রাজ্য স্কুল ক্রীড়ায় লঙ জাম্পে রাজ্যের সেরাও হয় সে। ছবি আঁকতেও ভালবাসে। তবে তার সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনায় অবহেলা করেনি সুমন। তার ফল মিলেছে মাধ্যমিকে। পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিতে তার প্রাপ্ত নম্বর ৯৪ নম্বর। উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় সে। তবে উচ্চ শিক্ষার খরচ কী ভাবে আসবে, তা নিয়ে সংশয়ী সুমন। তার কথায়, “যত উঁচু ক্লাসে যাব, তত খরচ বাড়বে। তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় ভুগি।” মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন, “কোনও সহৃদয় ব্যক্তি বা সংস্থা যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে হয়তো আমার ছেলের স্বপ্ন সত্যি হবে।” |