|
|
|
|
শ্যাম্পুর নাম রণবীর কন্ডিশনার দীপিকা
এ ছবির একটাই লক্ষ্য। ফুল টাইম-পাস। পয়সা উসুল। লিখছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় |
ফুল টাইম-পাস। এই দুটো শব্দ লিখেই পুরো রিভিউটা শেষ করে দিলে কারও কিছু বলার থাকত না।
ক্ষোভও থাকত না। কলকাতায় নয়, মুম্বইয়ের ওবেরয় হলের ছ’ নম্বর প্রেক্ষাগৃহে বসে তিন ঘণ্টাকে ঘড়ির হিসেবে দু’ঘণ্টা হয়ে যেতে দেখলাম। ‘কেয়ার অফ স্যার’-য়ের সাউন্ড মিক্সিং করতে না এলে ‘ইয়ে জওয়ানি’ মুম্বইতে না দেখার খেদ থেকে যেত। কলকাতায় এ ছবি দেখে সমালোচক এই মজা কখনওই পেত না। সত্তর শতাংশ লোক মঙ্গলবারের অবেলায় হলে ঢুকেছে।
কলকাতার দর্শকদের মতো যুক্তি তক্কোর কোনও তালিম নেই। তাগিদও নেই। এঁরা খুব খুশি নাগরিক। এবং আনন্দ করে হাসে, নাচে, গায়। এঁরা সকলেই এসেছে একটা মাত্র লক্ষ্য নিয়ে ফুল টাইম পাস উইথ রণবীর! পয়সা উসুল।
এই লেখা পড়ে যাঁরা যাঁরা এই ছবি দেখতে যাবেন তাঁদের বলি ব্লাড প্রেশার থাকলে অবশ্যই দেখবেন। তাতে প্রেশারের ওষুধটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যাঁরা বিদেশে যাওয়ার জন্য পাগল, তাঁরা কোনও মতেই এ ছবি মিস করবেন না। যাঁরা কাকে ভালবাসবেন ভাবছেন, বা মুখ ফুটে বলতে পারছেন না মনের কথা, তাঁরাও দেখুন। যাঁরা বখাটে বা শান্ত, মেধাবী বা ফেলুরাম, তাঁরাও দেখুন।
এই ছবি তিন ঘণ্টার হেয়ার স্পা-র মতো মাথা নাড়িয়ে, ঝাঁকিয়ে , সাফ-ঝরঝরে করে দেবে। এই শ্যাম্পুর নাম রণবীর কপূর। সঙ্গে কন্ডিশনার দীপিকা পাড়ুকোন।
পরিচালক অয়ন মুখোপাধ্যায়ের কথা কিছু লেখার নেই। গল্প নেই। থাকলেও গল্পের গরু গাছে উঠে আম পেড়ে খাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের নতুন কোনও ভারী বার্তা নেই। সিনেমার টানটান গোছও তেমন নেই। এটুকু বলতে পারি অয়ন মুখোপাধ্যায়ের সযত্নে তৈরি করা পার্লারটা সুপারহিট। এবং তার অন্যতম কারণ হল প্রীতমের সঙ্গীত। এক দর্শক তো ইন্টারভ্যালে পপকর্ন কিনতে কিনতে বন্ধুকে বলছিল, “মিউজিক পুরা হিলা দিয়া।” সত্যিই তাই। রণবীর-দীপিকার চোখ ঝলসানো নাচ, দুরন্ত-দামাল গান, আর মাধুরীর আইটেম নাম্বার! ইস্সে জাদা অউর ক্যয়া মাংনে কা? প্রশ্ন করলে চলবে না।
ঘরকুনো হবু ডাক্তার দীপিকার মেডিক্যাল কলেজে কি স্পেশাল ডান্স ক্লাস হয়? বা রণবীর তথ্যচিত্র বানানোর পাশাপাশি অমন নাচ শিখে ফেললেন কী করে? অভাবের সংসারে নিম্নমধ্যবিত্তের এত কথায় কথায় নাচ পায় কী করে? সর্বোচ্চ কত বছর বয়স পর্যন্ত হিন্দি ছবির নায়ক-নায়িকারা কলেজে পড়ে ও সরল শিশুমন নিয়ে ঘুরে বেড়ায়? এ সব প্রশ্নর এ ছবিতে ‘নো এন্ট্রি’। কল্কি এই ছবিতে এক হট্কে অসুন্দরী খ্যাপাটে বান্ধবী। তার প্রেম কেউ বোঝে না। অনেকটা ‘আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডস’-এর পার্নো মিত্র চরিত্রটির মতো। অসচেতন, অগোছালো মনটা যেন অন্য জনের নজরেই পড়ে না। কল্কি ছোট ছোট কিছু মুহূর্তে আন্তর্জাতিক। বাকি প্রাপ্তবয়স্ক সরল শিশু-পড়ুয়ারা যেমন হয় তেমনি। দীপিকার বরাদ্দ তিন বিঘে জমিতে যা যা তিনি চাষ করেছেন, তা ফুলে-ফলে ভরে উপচে উঠেছে। সমালোচকের বয়স হচ্ছে। নজরও অসহায় হচ্ছে সুন্দরীদের দেখে। ঈশ্বরকে একটাই প্রার্থনা, দীপিকার মতো কোনও মহিলা যেন ভবিষ্যতে অমন জলভরা চোখ নিয়ে আমার দিকে না তাকায়। ভেসে যাব যেমন রণবীরটা গেল। |
|
‘বরফি’ একটা দামি কোম্পানির আইসক্রিম ছিল। এখনও মুখে লেগে আছে সেই স্বাদ। সেই রণবীর অবিশ্বাস্য সুন্দর ছিল। আর ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ হল Q দিয়ে বানান করা পাড়াতুতো কোয়ালিটি আইসক্রিমের মতো। খেলেই শেষ। মুখে বা মনে স্বাদ লেগে থাকে না। তবে এ ছবিতেও রণবীর অবিশ্বাস্য সুন্দর। হিন্দি সিনেমার সর্বোচ্চ তালিকায় বা দৌড়ে, রণবীর এগিয়ে কেবলমাত্র নায়ক হিসেবে নয়, অভিনেতা হিসেবেও। এক্ষুনি এ ছবি দেখার উত্তেজনা নিয়ে বলতে পারি, রণবীর এই মুহূর্তে মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির শ্রেষ্ঠ সম্পত্তি। কী দক্ষতা! কী তৈরি শরীর! কী ক্ষমতা সঠিক মেজাজে দৃশ্যতে বেঁচে থাকার। কুড়ি বার চোখে জল আনা যায়, এমন দৃশ্যে রণবীরের শুকনো চোখ দেখে দর্শকের চোখ ভারী হয়েছে জলে। এখানেই অভিনেতা রণবীরকে সমালোচকের আলিঙ্গন।
কাজুবাদাম আর চিনেবাদামের তফাত ভুলে রণবীরকে বিচার করতে কলকাতার মানুষরা তিন ঘণ্টা রণবীর-দীপিকার সঙ্গে কাটিয়ে আসুন। কী বলছি বুঝবেন। আমি তাই এক বিন্দুও গল্প লিখলাম না পাতা ভরাতে। বরং একশো আট বার রণবীর, রণবীর, রণবীর, রণবীর লিখে দিলেও পাঠকের কৌতূহল হবে এই ছবি দেখতে। বুঝতেই পারছেন এই ছবির যে র্যাঙ্কিং দেওয়া হবে, তা সকলই রণবীরের অর্জন করা লোকে বলে দিই আমি।
ঋতুপর্ণর শোক মনে নিয়ে মুম্বইতে এসেছিলাম। এ ছবি দেখার পর মনে হল ঋতুদা থাকলে, একশো শতাংশ দেখে ফেলত এই ছবি। তার পর কোনও এক চা-শিঙারার খোশমেজাজি আড্ডায় মাধুরীর নখড়াগুলো একটা দুরন্ত ডেমো সহ চর্চা হত। শেষ অংশে এই কথাটা বলার, অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই আমার। শুধু এইটুকুই বলতে চাই পণ্ডিত ঋতুপর্ণ ভালবাসতেন এই সব টাইমপাস। আপনারাও একটু বাড়ির ঠিকানা বা পারিবারিক গম্ভীর সংস্কৃতির বোঝা নামিয়ে এক বার মাধুরীর ঘাগরা দেখে আসুন ভায়া আগ্রা। দেখবেন শ্যাম্পু করা মাথা নিজের পছন্দের পৃথিবীটা আরও একটু বেটার লাগবে। |
|
|
|
|
|