এ ভাবেও জীবনে ফিরে আসা যায়
ন্ধকার হল।
বড় পর্দাতে দীপিকা পাড়ুকোন আর রণবীর কপূরের ক্লোজ আপ।
থুড়ি নয়না আর বানির ক্লোজ আপ।
নয়না: তুম সমঝতে কিঁউ নহি অগর ম্যায় তুমহারে সাথ অউর দো মিনিট রহি তো...
বানি: তো ক্যয়া?
নয়না: তো মুঝে তুমসে প্যার হো যায়েগা...ফির সে।
বানি চুপ।
নয়না: অউর তুমহে নহি হোগা...ফির সে।
বানির কোনও কথা নেই। টেনে নেন নয়নাকে। ঠোঁটে ঠোঁট...
স্ক্রিনের বাইরেও যেন উষ্ণতার ছোঁয়া।
এ ভাবেও কি ফিরে আসা যায়?
সিনেমার পর্দাতে। বা হয়তো জীবনেও। অন্তত বন্ধু হয়ে তো নিশ্চয়ই।
কাট।
‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ ছবিতে রণবীর কপূর ও দীপিকা পাড়ুকোন
মনে পড়ে যায় ‘ক্যাপ্টেন কোরেলিস ম্যান্ডোলিন’-এর সেই দৃশ্যটি।
জন হার্ট আর পেনেলোপ ক্রুজ।
পেনেলোপ জনকে জানিয়েছেন যে তিনি এনগেজড। আর তার পর জন তাঁকে বোঝাচ্ছেন ভালবাসার মানে কী। “ভালবাসা মানে একটা সাময়িক পাগলামি। অনেকটা ঠিক ভূমিকম্পের মতো। তার পর আস্তে আস্তে সব থিতিয়ে যায়। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। ভেবে দেখতে হয় যে নিজেদের শিকড় একে অপরের সঙ্গে কি এতটাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যাতে কিনা এটা ভাবাই যায় না যে আলাদা হওয়াটা সম্ভব। কারণ এটাই ভালবাসা। প্রেম মানে দম বন্ধ হয়ে আসা উত্তেজনা নয়। এই আকাঙ্ক্ষা নয় যে কবে আবার মিলিত হব। বা রাতে বিছানায় শুয়ে এটা কল্পনা করা নয় কখন প্রেমিকের ঠোঁট ছুঁয়ে যাবে সারা শরীর। এগুলো সবই প্রেমে পড়ার সঙ্কেত। যা দেখে যে কোনও মানুষ ভাবতে পারেন যে তিনি ভালবাসছেন। কিন্তু আসল প্রেম হল যা পড়ে থাকে। যখন প্রেমে পড়ার অনুভূতিগুলো জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়...”
‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ ছবিটি দেখতে গিয়ে অনেকের মুখে একটি প্রশ্ন। কী করে দীপিকা আর রণবীর ব্রেক-আপের পরেও এতটা স্বচ্ছন্দ ভাবে চূড়ান্ত রোম্যান্টিক দৃশ্যে অভিনয় করে গিয়েছেন? কখনও কি একজনেরও মনে হয়নি যে ওই ভাবে আর দু’মিনিট তাকিয়ে থাকলে আবার প্রেমে পড়ে যাবেন? জন হার্ট-এর ভাষায় ‘পড়ে থাকা’ ভালবাসার আঁচে কিছু ক্ষণের জন্যও নিজেদের সেঁকতে কি একটুও ইচ্ছে হয়নি?
সিনেমার পর্দা আর বাস্তব জীবনের মধ্যে একটা ফারাক থাকে। একদল বলবেন যে চুম্বনের দৃশ্য শ্যুটিংয়ের মধ্যে আবার ব্যক্তিগত সম্পর্ক কী করে আসছে? ওটা তো শুধুমাত্র একটা পেশাদার কাজ।
আর একদল বলবে, মানুষ তো রোবট নয়। যে একটা ব্রেক-আপ হল আর সব ধুয়ে মুছে সাফ। যদি দীপিকা-রণবীরের অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি এতটাই হিট, যে তার মানে হয়তো এখনও ধিকি ধিকি করে কোথাও আগুন জ্বলছে। কোথাও ফিরে দেখার একটা তাগিদও রয়েছে হয়তো।
দীপিকা অবশ্য তাঁর সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সম্পর্ক যখন টেকে না, তখন সব কিছু ভুলে গিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। এই তো সে দিন দীপিকার বাড়ির পার্টিতেও ছিলেন রণবীর। আমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন রণবীর সিংহ আর সিদ্ধার্থ মাল্যও।
‘এক থা টাইগার’- এ ক্যাটরিনা
কইফ ও সলমন খান
ডায়ানা কিটন ও উডি অ্যালেন।
ছবি ‘ম্যানহাটন মার্ডার মিস্ট্রি’
দীপিকার মতে, সম্পর্ক ভেঙে গেলে যদি কাজ এসে যায়, তখন সেখানে ফোকাস করতেই হবে। রণবীরের সঙ্গে যদি ভাল ফিল্ম আর দুর্দান্ত চিত্রনাট্য পাওয়া যায়, তা হলে সেখানে কাজ করতে তাঁর কোনও আপত্তি থাকবে না।
শুধু দীপিকা-রণবীর নন। এমনকী সলমন খান আর ক্যাটরিনা কইফও একই জিনিস করেছেন। ‘এক থা টাইগার’ শ্যুটিং হয়েছিল ওঁদের ব্রেক-আপের পর। কিন্ত কে বলবে সেটা ‘মাশাল্লাহ্’ গানটা দেখে। ক্যাটরিনা আর সলমনের কী অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি! শরীরের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে আকর্ষণের মূর্ছনা। অনেকেই বলেন যে যখন তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন, সেই সময় করা ‘যুবরাজ’-এর থেকেও অনেক ভাল কেমিস্ট্রি এই ছবিতে।
শুধু এঁরা নন। মনে আছে অক্ষয় কুমার আর শিল্পা শেঠির কেরিয়ারের অন্যতম বড় হিট ‘ধড়কন’? কানাঘুসো শোনা যায় যে দু’জনের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল ‘এক খিলাড়ি তু আনাড়ি’-র সেটে। তার কিছু পরেই বিচ্ছেদ। ছ’বছর পর আবার ধর্মেশ দর্শন দু’জনকে একসঙ্গে এনেছিলেন ‘ধড়কন’-এ। ছবিটি সুপারহিট।
হলিউডে ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে। তা সে ক্যামেরন ডিয়াজ আর জাস্টিন টিম্বারলেক হোন কিংবা কোর্টনি কক্স আর ডেভিড আর্কেট। গুয়েনেথ প্যাল্ট্রো আর বেন অ্যাফ্লেক-এর দু’বছরের সম্পর্ক ভেঙে যায় নব্বইয়ের শেষ দিকে। কিন্তু তাতে কাজ থেমে থাকেনি। ‘বাউন্স’ বলে একটা ছবি করেছিলেন ২০০০-এ। প্লেন ক্র্যাশ নিয়ে রোম্যান্টিক ছবি। আর সেটেই আবার প্রেম। কিন্তু সে প্রেম টেকেনি।
কোর্টনি আর ডেভিডের বিয়ে হয়েছিল ১৯৯৯-এ। বিচ্ছেদের খবর প্রথম শিরোনামে আসে ২০১০-এ। এর পর দু’জন একসঙ্গে শ্যুটিং করেছিলেন ‘স্ক্রিম ৩’-এর। এমনও শোনা যায় যে দু’জনে দারুণ এনজয় করেছিলেন শ্যুটিংটা। তবে গত সপ্তাহে ঠিক হয় যে, বন্ধুত্ব বজায় রেখেও তাঁরা ডিভোর্স করছেন।
তবে এঁদের সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন পরিচালক উডি অ্যালেন। মুখ থুবড়ে প্রেমে পড়েছিলেন ডায়ানা কিটনের। চল্লিশ বছর একসঙ্গে কাজ করার সময় ডায়ানা অন্তত উডি অ্যালেনের আটটা ছবিতে কাজ করেন। অফিশিয়ালি ১৯৭২ সালে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার দশ বছর পরেও একসঙ্গে কাজ করতে থাকেন তাঁরা। এমনকী পরিচালকের পরবর্তী জীবনের বিতর্কিত মিয়া ফারো এপিসোডের পরেও ডায়ানা আবার ফিরে এসে আরও একটা ছবি করেন উডির সঙ্গে। সালটা ১৯৯৩। ছবির নাম ‘ম্যানহাটন মার্ডার মিস্ট্রি’।
তা হলে আসল ঘটনাটা কী? শুধুমাত্র পেশাদারিত্ব? কথা দেওয়া হয়েছে বলে ছবি শেষ করতেই হবে? নাকি একটা বেপরোয়া কেরিয়ার মুভ? ইন্ডাস্ট্রিতে তো হাতে গুনে খুব কম তারকাই আছেন, যারা বক্স অফিসে হিট দিতে পারেন। সে সুযোগ হাতছাড়া করাও তো বুদ্ধিমানের কাজ নয়!

‘মুঘল এ আজম’-এ দিলীপ কুমার এবং মধুবালা
কিন্তু কী ভাবে সম্পর্কের এই নানা ওঠাপড়া কাটিয়ে তারকারা কাজ করে যান? কী করে এই তারকারা নিজেদের নঞর্থক মনোভাব সরিয়ে রেখে কাজ করে যান?
অনুরাগ বসু একবার ভেবেছিলেন ‘বরফি’ করার সময় দীপিকাকে কাস্ট করবেন। তার পর ইলিয়ানা ডি’ক্রুজের সঙ্গে দেখা হয়। “দীপিকা আর রণবীরের অন-স্ক্রিন কেমিস্ট্রিটা দারুণ সুন্দর। দু’জনেই অত্যন্ত প্রফেশনাল। এই তো দু’জনে সে দিন বলছিল যে, ছবির প্রোমোশন করতে গিয়ে মনে হচ্ছে যেন ওরা রিলেশনশিপ গুরু হয়ে গেছে! পরিচালক অয়ন ওদের দারুণ বন্ধু। অয়ন চেয়েছিল দু’জনকেই একসঙ্গে কাস্ট করতে। দীপিকা আর রণবীর সেই ইচ্ছেরই কদর করেছে,” অনুরাগ বলছেন।
বলিউডের এক প্লেব্যাক সিঙ্গার বলছেন এক্স-ফ্লেমের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব হয় যখন সব কিছু বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কাজের ওপর ফোকাস থাকে। এই সিঙ্গার নিজেও সেটা করেছেন। এক সময় তাঁর এক সহশিল্পীর সঙ্গে তাঁকে ঘিরে অনেক জলঘোলা হয়েছিল। “দীপিকা-রণবীরের ওই জলে পা ডোবানোর দৃশ্যটা দেখে অনেক কথাই মনে পড়ে যাচ্ছিল। একবার একটা ডুয়েট রেকর্ড করার কথা আমার এক সহশিল্পীর সঙ্গে। সুরকার আদব-কায়দায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, আমি যেন আমার সহশিল্পীর রেকর্ডিং হয়ে গেলে তার পর স্টুডিয়োতে ঢুকি। হিন্ট বুঝে আমিও তাই করেছিলাম। ও রেকর্ড করে চলে যায়। আমি গভীর রাতে স্টুডিয়োতে এসে আমার পোরশন রেকর্ড করি,” বলছেন শিল্পী।
গানটা বিশাল হিট এবং বলাই বাহুল্য যে সেটা শুনে আজও কেউ বুঝতেই পারবেন না যে, ওই রোম্যান্টিক আমেজটা যাঁরা ফুটিয়ে তুলেছেন, তাঁদের মধ্যে তখন কী টানাপোড়েন চলছিল! “ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে হলে একমাত্র অ্যাটাচমেন্ট কাজের সঙ্গে। বাকি সবার সঙ্গে একটা পর্যায়ের পরে ডিট্যাচমেন্ট দরকার,” জানাচ্ছেন সেই শিল্পী।
আগেকার দিনেও এই একই রকম ঘটনার উদাহরণ রয়েছে। দিলীপ কুমার আর মধুবালার বিচ্ছেদ হওয়ার পরেও দু’জনে ‘মুঘল-এ-আজম’য়ের শ্যুটিং শেষ করেন। এমনটাও শোনা যায় যে, শেষের দিনগুলোতে নাকি মধুবালা বারবার কয়েকটি ছবি দেখতেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘মুঘল-এ-আজম’। মৈনাক চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় রেখা আর বিনোদ মেহরা একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন ‘ঘর’ ছবিতে। ‘তেরে বিনা জিয়া যায়ে না’ গানটি দেখে কে বলবে যে তাঁদের সম্পর্কে এত টানাপোড়েন ছিল?
তবে ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন যে শুধুমাত্র এক্স-ফ্লেম থাকলেই কিন্তু ছবি ভাল চলে না। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া-শহিদ কপূর তাঁদের তথাকথিত ব্রেক-আপের পরেও কাজ করেছেন। কিন্তু ছবি চলেনি। বিচ্ছেদের পরে দিনো মোরিয়া আর বিপাশা বসু ‘চেহরা’ বলে একটি ছবি করেছিলেন এক কালে। কিন্তু বক্স-অফিসে তেমন বিশাল কিছু করে উঠতে পারেনি।
বিচ্ছেদের পরেও বন্ধু। কোর্টনি কক্স ও ডেভিড আর্কেট ‘ধড়কন’-এ অক্ষয় কুমার ও শিল্পা শেঠি
টলিউডে সামনে মুক্তি পেতে চলেছে দেব-শুভশ্রীর ছবি। অনেকেরই প্রশ্ন ব্যক্তিগত সম্পর্কে চিড় ধরে যাওয়ার পরেও কি পর্দাতে তা আড়াল করে রাখতে পারবেন এই তারকারা?
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ তরণ আদর্শ বলছেন, “যদি কনটেন্ট ভাল থাকে, তবে ছবিগুলো চলবে। শুধুমাত্র প্রাক্তন প্রেমিকা থাকলেই ছবি চলবে না। বা সেই প্রেম কী কারণে ভাঙল, এখন সম্পর্কের কী পরিস্থিতি এটাকে ঘিরে ছবি মুক্তির আগে সাক্ষাৎকার দিয়ে মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি করলেও ছবি হিট হবে তার গ্যারান্টি নেই।”
রণবীরের চাহিদা এখন তুঙ্গে। “তার সঙ্গে ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’-র গান ভাল, মার্কেটিং ভাল। দু’জনকে স্ক্রিনে দেখতে ভাল লাগছে। সব মিলিয়ে ছবির ফ্লেভারটা পছন্দ করছে। এই বছরে এই ছবিটি সব চেয়ে বড় ওপেনিং। সত্তর কোটির ওপর ব্যবসা করে ফেলেছে ছবিটি। অন্য ছবির ক্ষেত্রেও এই একই মাপকাঠি হওয়া প্রয়োজন,” জানাচ্ছেন তরণ।
এ তো গেল ব্যবসার কথা।
চার দিকে এত বিষণ্ণতার খবর। শিরোনামে শুধুই অবিচুয়ারির ঢল। তার মাঝে কি একবারও মনে হয় না যে, ভঙ্গুর সম্পর্কের খারাপ স্মৃতিগুলো মুছে ফেলে দিয়ে এগিয়ে চলা যায়?
প্রত্যেক শুক্রবার পাল্টে যাওয়া ভাগ্যের পরিহাসের বাইরেও একটা জীবন থাকে। যা শেখায় যে, ভাল থাকাটাও বক্স অফিস কালেকশন-সিনেমার রেটিংয়ের থেকেও হয়তো জরুরি। কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলে দগদগে ঘা-গুলো শুকিয়ে যায়। তখন চোদ্দো আনার মতো পড়ে থাকে কিছু ভাল মুহূর্ত। আর ভরসা যে, কেউ খারাপ নয়। হয়তো অন্য রকম। তাই একসঙ্গে কিছুদূর পথচলা অসম্ভব নয়।
যতই হোক, জীবন একটাই।
‘বদ্তমিজ দিল’, মরচে পড়ে যাওয়া অভিমান দিয়ে কি সেটাকে নষ্ট করে দেওয়া যায়?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.