|
|
|
|
জীবন-যুদ্ধে লড়ে জয়ী গৌতম-মিঠুন
সংগ্রাম সিংহ রায় • শিলিগুড়ি |
দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনি। কখনও রাজমিস্ত্রির সঙ্গে কাজ। ইট, বালি মাথায় করে বইতে হয়। কখনও রাস্তা তৈরির ঠিকাদারের দলে শ্রমিকের কাজ করতে হয়। রাতে বাড়ি ফিরে শরীর চলে না। তখনই জেদটা চেপে বসে। না শরীর চলছে না বলে আলস্য করলে চলবে না। খাওয়া সেরে বইপত্র বার করে তাই পড়তে বসা। বাবা উত্তমবাবু এক সময় দিনমজুরি করলেও গত কয়েক বছর কিছুই করেন না। বরং মা সুমিতাদেবী লোকের বাড়িতে কাজ করে কিছু রোজগার করে সংসারের হাল ধরতে চেষ্টা করেন। আর গৌতমের দিনমজুরির আয়। শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া ফকদই বাড়ির বাসিন্দা গৌতম মণ্ডল এ ভাবেই গত কয়েক বছর ধরে লড়াই করে পড়াশোনা চালাচ্ছেন। সোমবার উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৩২ নম্বর পেয়ে শিলিগুড়ির ঘোঘোমালি হাইস্কুল থেকে পাশ করলেন। ওই ছাত্রের পরিবার অভাব রয়েছে তা প্রধান শিক্ষক এবং সহশিক্ষকেরাও জানতেন। কিন্তু গৌতমকে যে দিনমজুরির কাজ করতে হয়েছে সেটা এতদিন চাপাই ছিল। এ দিন তা জেনে শিক্ষকেরা অবাক। প্রধানশিক্ষক বিকাশ সেনরায় গৌতমকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তা হলে স্কুলে আসতে কখন?” ছাত্রের সলজ্জ উত্তর, “কাজে যেতে হত বলে অনেক দিনই তো আসতে পারতাম না। শিক্ষকেরাও তাই স্কুলে দেখতে না পেলে চাপ দিত। তখন আবার স্কুলে আসতাম।”
ওই স্কুলেরই ছাত্র মিঠুন সরকার পেয়েছেন ৩২৬। দিন মজুরি করতে না হলেও তাঁকেও সংসারের জন্য রোজগারে নামতে হয়েছে। বাবা আনন্দবাবু ফেরিওয়ালা। দিনভর ঘুরে বেড়িয়ে পুরনো লোহালক্কড় সংগ্রহ করে মহাজনের কাছে দিয়ে কিছু টাকা পান। মা আহ্লাদিদেবী পরিচারিকার কাজ করেন। সংসার সামলাতে বিদ্যুতিক সংযোগের কাজ জানা মিঠুন লোকের বাড়িতে বৈদ্যুতিক লাইন মেরামতের কাজ করেন। কখনও নতুন বাড়িতে বৈদ্যুতিক লাইন বসানোর কাজ পেলে একটু বেশি রোজগার হয়। সংসারের খরচ দেওয়ার পাশাপাশি সেখান থেকেই টাকা বাঁচিয়ে রাখতেন পড়াশোনার জন্য।
শিলিগুনি শহর লাগোয়া পূর্ব মাজাবাড়ির বাসিন্দা মিঠুন জানান তাঁরা চার ভাইবোন। দাদা বিয়ে করে আলাদা থাকেন। ভাই বোন এবং মা বাবাকে নিয়ে এখন তাঁদের সংসার। বাবার রোজগার অনিশ্চিত। ওই ছাত্র বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষকেরাও সাহায্য করতেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিকাশ সেনরায় বলেন, “সংসার চালাতে ওই দুই ছাত্রকে কাজ করতে হত। তার পরে পড়াশোনা চালিয়ে ভাল ফল করেছে এটাই বড় পাওয়া। ওদের জন্য আমরাও গর্বিত।” বিশেষ করে শহরের আশেপাশে বহু গরিব পরিবারে ছেলেমেয়েরা তাঁদের স্কুলে পড়েন। শিক্ষকদের তাই তিনি সতাদের সহযোগিতা করতে বলেছেন। |
|
|
 |
|
|