|
|
|
|
অভাবকে হারিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর
সৌমিত্র কুণ্ডু • শিলিগুড়ি |
দারিদ্র ওঁদের রিক্ত করতে পারেনি। পড়াশোনা করে ঘুরে দাঁড়াবার লড়াইতে ওই প্রতিবন্ধকতা জয় করছেন তাঁরা।
সীমা অধিকারীর বাবা মারা যাওয়ার পর মা পরিচারিকার কাজ করে সংসারের হাল ধরেন। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। বইখাতা কেনার সামর্থ্য নেই। নেতাজি গার্লস হাই স্কুলের ওই ছাত্রীই উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলের সেরা। ওই স্কুলেরই ছাত্রী বিউটি দাসের মাও পরিচারিকার কাজ করেন। স্কুলে সেরাদের তালিকায় সীমার পরেই নম্বর রয়েছে তাঁর। বিবেকানন্দ স্কুলের ছাত্রী অদিতা রায়ের বাবা রাজমিস্ত্রি। কোনও রকমে দুই মেয়ের পড়াশোনা চালান। সোমবার উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট নিতে গেলে ছাত্রীরা হুল্লোড় করে অদিতাকে ঘিরে ধরেন। স্কুলে সর্বোচ্চ তিনিই।
দিনহাটার দরিদ্র কৃষক পরিবারের মেয়ে রিঙ্কি সরকার। সংসারে অভাবের জেরে মেয়েকে পড়াতে দুশ্চিন্তা পড়েছিলেন মা। শিলিগুড়িতে রিঙ্কিকে মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। তাঁদের অবস্থাও ভাল নয়। তাই বাধ্য হয়ে এক মামার বাড়িতে থাকেন অন্য মামার বাড়িতে খান। এ ভাবেই লড়াই করে উচ্চ মাধ্যমিকে ঘোঘোমালি হাই স্কুলের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সেরা হয়েছেন রিঙ্কি। উচ্চ মাধ্যমিকে ৪২৪ নম্বর পেয়ে জ্যোৎস্নাময়ী হাই স্কুলে সেরা কণিকা দত্ত। কণিকার বাবা রঞ্জিতবাবু রেলে হকারি করেন।
হতদরিদ্র পরিবারের ওই পড়ুয়ারা উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলের সেরাদের তালিকায় দেখে স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকারও গর্বিত। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, কলা বিভাগের ছাত্রী সীমা পেয়েছেন ৩৮৪ নম্বর। ওদের অভাবের কথা জানেন স্কুলের শিক্ষিকারাও। প্রধান শিক্ষিকা সুকৃতী দাস বলেন, “ভাল ফল করায় ওদের দেখে অনেকেই উৎসাহী হবে।”
অদিতার নম্বর ৪০১। তার কথায়, “পড়াশোনা করেই বড় হতে হবে। এখন তো পড়ার খরচ আরও বেশি হবে। তাই চিন্তায় রয়েছি।”
জোৎস্নাময়ী হাই স্কুলের ছাত্রী কণিকাকে পড়াশোনায় সাহায্য করতেন শিক্ষিকারাও। কণিকারা তিন বোন। বাবা রঞ্জিতবাবু গেঞ্জি, প্যান্ট ট্রেনে ফেরি করে বিক্রি করেন। এ দিন কণিকার রেজাল্ট দেখে কষ্টের মধ্যেই মুখে হাসি ফুটেছে রঞ্জিতবাবু এবং তাঁর স্ত্রী অঞ্জনা দেবীর মুখে।
প্রধাননগরের মার্গারেট স্কুলের ছাত্র অনীশ দাস ৪০৯ পেয়েছেন। স্কুলে সেরাদের মধ্যে চতুর্থস্থান পেয়েছেন ওই ছাত্র। পারিবারিক কারণে বাবা আলাদা থাকেন। মা অনিশকে নিয়ে থাকেন। স্কুলের নার্সারি বিভাগে মা সহায়িকার কাজ করেন। রোজগার সামান্য। বাড়ি ভাড়া দিয়ে কিছু টাকা আসে। তা দিয়েই ছেলের পড়াশোনা চালান। |
|
|
|
|
|