মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে বিরোধীরা আক্রান্ত হচ্ছে তৃণমূলের হাতে, এমন অভিযোগ নিয়মিত উঠছে।
সোমবারেও উঠেছে। কিন্তু একই সময়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেও ঝামেলা শুরু হয়েছে।
এমনই মারধরের ঘটনা এ দিন ঘটেছে আরামবাগে। যদিও দলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের দাবি, নিজেদের দলেরই লোকজনকে চিনতে না পেরে এমনটা ঘটে গিয়েছে। আরামবাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা তৃণমূল নেতা দিলীপ যাদব বলেন, “আমাদের দলের ছ’জন মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। পুরো বিষয়টির দলীয় স্তরে তদন্ত হচ্ছে।”
এ দিন গোলমালের সূত্রপাত আরামবাগ মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরে। দুপুরের দিকে সেখানে মনোনয়ন পেশ করতে যাওয়া তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারি বেধে যায়। রাতের দিকে গোঘাট ১ ব্লকের রঘুবাটি গ্রামে তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে ঢুকে দলেরই কিছু লোক মারধর করে বলে অভিযোগ। কোনও পক্ষই পুলিশে অভিযোগ করেনি।
মনোনয়ন-পর্ব চলাকালীন তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরে তেতে উঠেছে বীরভূমের পাড়ুই থানা এলাকাও। রবিবার মাঝরাতে পাড়ুই থানার কসবা গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। অভিযোগ, দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীদের সঙ্গে অনুব্রত-বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে দফায় দফায় বোমাবাজি চলে। হতাহতের খবর না থাকলেও দু’পক্ষের ১৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। পুলিশ পিকেট বসেছে। |
আরামবাগ মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরে তৃণমূল কর্মীকে মারধর দলেরই কর্মীদের। ছবি: মোহন দাস |
পাড়ুইয়ের ওই এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কারা প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে দলের অন্দরে বিতণ্ডা তুঙ্গে উঠেছে। অভিযোগ, বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজন পঞ্চায়েতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে জেনে তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি ও মারধর করছে দলের জেলা সভাপতি-গোষ্ঠী। ওই অঞ্চলের চেয়ারম্যান নারায়ণ ভাণ্ডারী অনুব্রত-গোষ্ঠীর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত। অভিযোগ, কসবা গ্রামে নারায়ণবাবু ও তাঁর অনুগামীদের বাড়িতে অনুব্রত-গোষ্ঠীর লোকজন আক্রমণ করার চেষ্টা করে। নারায়ণবাবুর ছেলে অভিজিৎ ভাণ্ডারীর অভিযোগ, “রাত ১২টা নাগাদ আমাদের বাড়িতে কয়েক জন এসে বাবার খোঁজ করে দরজা জানলা ভাঙার চেষ্টা করে। বাবাকে খুনের হুমকিও দেয়। আমাদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে এলাকার লোকজন জড়ো হয়ে গেলে তারা নিজেদের বাইক ফেলে বোমাবাজি করতে করতে পালিয়ে যায়।” ওই ঘটনায় অভিজিৎবাবু সাত জনের বিরুদ্ধে পাঁড়ুই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল কমিটির সম্পাদক শেখ মুস্তফা। তিনি বলেন, “রবিবার রাতে বোলপুরের দলীয় কার্যালয় থেকে সভা সেরে ফেরার পথে আমার অঞ্চলের সহ-সভাপতি রবাই চৌধুরীকে মারধর করা হয়েছে। তাঁর মোটরবাইকও কেড়ে নেওয়া হয়। ওই অঞ্চলের কিছু তৃণমূলের লোক দুষ্কৃতীদের দিয়ে ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমরা ১২ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।”
তৃণমূলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বাঁকুড়ার জয়পুর থানার পাতরপুকুর মোড়েও। সেখানে যুযুধান তৃণমূলের জয়পুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি দিলীপ খাঁ এবং দলের ব্লক সভাপতি স্বপন কোলের গোষ্ঠী। দিলীপ খাঁর অভিযোগ, তাঁদের পক্ষের জনা পাঁচেককে এ দিন বেধড়ক পিটিয়েছে বিরুদ্ধ গোষ্ঠী। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ব্লক সভাপতি। |